প্রতীকী ছবি।
তথ্য চাহিয়া ভারতে কত মানুষ প্রাণ দিয়াছেন? একটি হিসাব বলে, চুরাশি। এই বৎসরও ভাইজ়্যাগ এবং মুম্বইয়ে অজ্ঞাত আততায়ী খুন করিয়াছে এমন দুই ব্যক্তিকে, যাঁহারা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি ফাঁস করিতে তথ্যের আবেদন করিয়াছিলেন। আক্রান্তের সংখ্যাও কম নহে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করিয়াছেন, সরকার এতই স্বচ্ছ যে তথ্য জানিবার আবেদনের প্রয়োজন কমিয়াছে। তথ্য না চাহিতেই মিলিবে, সরকারি মন্ত্রকের ওয়েবসাইট খুলিলেই হইল। ডিজিটাল প্রযুক্তি সরকারের দুর্নীতি কমাইতেছে, স্বচ্ছতা ও তৎপরতা বাড়াইতেছে। অতএব অধিকার দাবি করিবার প্রয়োজন কী? মন্ত্রীর ইঙ্গিতটি স্পষ্ট। যাহার প্রয়োজন নাই, তাহার প্রচার কিংবা সুরক্ষারও প্রয়োজন নাই। তথ্যের অধিকারের দিন গিয়াছে। এমন একটি ঘোষণা করিতেছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ইহা অসীম দুর্ভাগ্য। এই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই কিছু দিন আগে কাশ্মীর সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানিবার আবেদন উড়াইয়া দিয়াছে। তিনশো সত্তর ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তের সরকারি নথি প্রকাশ করিবার আবেদনে সাড়া দেয় নাই। কাশ্মীরে টেলিসংযোগ বন্ধ করিবার নির্দেশ, এবং কাশ্মীরের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের নির্দেশ— এই দুইটির প্রতিলিপি চাহিয়া তথ্যের অধিকারের অধীনে আবেদন করিয়াছিলেন দিল্লির এক নাগরিক। কেন্দ্রীয় জনতথ্য আধিকারিক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য আধিকারিকের উত্তর, তাঁহাদের কাছে সে তথ্য নাই। এমন ‘স্বচ্ছতা’ কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট প্রত্যাশিত হইতে পারে কি? ইতিপূর্বে নোটবন্দি সংক্রান্ত সকল আবেদন অগ্রাহ্য করিয়াছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। কাহারা বৃহত্তম ঋণখেলাপি, তাহা জানিবার আবেদনও অগ্রাহ্য করিয়াছে। রাফাল বিমানের দাম হইতে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষার প্রমাণ, কোনও তথ্যের আবেদনই সম্মানিত হয় নাই নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে। স্বচ্ছতার আস্ফালনের অন্তরালে প্রকৃত বার্তাটি হইল, তথ্য চাহিয়া লজ্জিত হইবেন না।
চব্বিশ বৎসর পূর্বে তথ্যের অধিকার চাহিয়া আন্দোলন করিয়াছিলেন দরিদ্র কৃষক ও মজুর। সেই আইন পাশ হইয়াছিল চৌদ্দ বৎসর পূর্বে। তাহার পর হইতে সকল রাজনৈতিক দল আইনটিকে গলবিদ্ধ কণ্টকের ন্যায় দেখিয়াছে। সরকারের নিকট তথ্য না পাইলে নাগরিক নালিশ করিতে পারেন তথ্য কমিশনে। কমিশন স্বতন্ত্র, কিন্তু সদস্য নিয়োগ সরকারের অধীন। অতএব সদস্য না রাখিয়া কমিশনগুলিকে দুর্বল, দন্তহীন করিয়া রাখা হইয়াছে। সদস্যশূন্য হইয়া যাওয়ায় তথ্য কমিশন অচল, এমনও নানা রাজ্যে ঘটিতেছে। প্রশ্নের উত্তর পাইতে বিলম্ব যত বাড়িবে, নাগরিকও তত উৎসাহ হারাইবেন। এই বৎসর মার্চ মাসে কেন্দ্র ও রাজ্যের তথ্য কমিশনগুলিতে প্রতীক্ষারত আবেদন সংখ্যা ছিল দুই লক্ষ আঠারো হাজার। এই বিলম্বিত লয় জারি থাকিলে কোনও রাজ্যে সতেরো বৎসর, কোনও রাজ্যে ত্রিশ বৎসর পর আবেদনের উত্তর মিলিবে। ন্যায়ের দাবিকে নিরুৎসাহ করিবার এমন কার্যকর উপায় আর কী হইতে পারে।
কিন্তু নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ কণ্টক উপড়াইতে অধিক আগ্রহী। এ বৎসর তথ্যের অধিকার আইন পরিবর্তন করিয়া তথ্য কমিশনারদের পুনর্নিয়োগ, বেতন ও অন্যান্য সুবিধার শর্ত কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের অধীন করা হইয়াছে। ইহাতে কমিশনগুলির স্বাতন্ত্র্য কতটা বজায় থাকিবে, সে প্রশ্ন উঠিয়াছে। এখন তথ্যের অধিকারের প্রয়োজনকেই এই ভাবে আক্রমণ করিলেন মন্ত্রী অমিত শাহ। বক্তৃতায় তিনি ইহাও বলিলেন যে তথ্যের আবেদনের সংখ্যাবৃদ্ধি কিন্তু সরকারের সাফল্য বুঝায় না। আশঙ্কা করা যায়, ইহা সরকারি কর্মীদের নিকট একটি উচ্চ মহলের বার্তা। নাগরিকের অধিকার আর সরকারের সাফল্য, কোনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, বুঝিয়া লইতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy