Advertisement
E-Paper

নারীর জন্য গণ্ডি টানা আছেই

শুধুমাত্র মহিলাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই কোনও দেশের লিঙ্গসাম্য বিচার করা যায় না।

বিজয়িনী: কমলা হ্যারিস

বিজয়িনী: কমলা হ্যারিস

প্রহেলী ধর চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২০ ০১:০৬
Share
Save

আমেরিকায় এই বছর প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইতে প্রাথমিক ভাবে ছয় মহিলার নাম উঠে এসেছিল— উল্লেখযোগ্য বিষয় বটে। একে একে সরে গেলেন তাঁরা সবাই। কেন? শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্পকে হারানোর মরণ-বাঁচন লড়াইতে ডেমোক্র্যাটরা মহিলা প্রার্থীর উপর বাজি ধরতে রাজি ছিলেন না। একটি সমীক্ষা আগেই দেখিয়ে দিয়েছে, ২০১৬ সালে হিলারির পরাজয়ের পর থেকে, সে দেশের সাধারণ মানুষ আর বিশ্বাসই করেন না যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনও মহিলার কাছে হারতে পারেন! নারী প্রেসিডেন্টের সম্ভাবনায় দেশবাসীর অস্বস্তি কেমন? গত জুন মাসের এক সমীক্ষায় একটি তথ্য উঠে আসে— যেখানে ৮৬% আমেরিকাবাসীরই মহিলা প্রেসিডেন্টের প্রতি ব্যক্তিগত পূর্ণ সমর্থন আছে, কিন্তু ৬৭% আমেরিকাবাসীই মনে করেন তাঁর প্রতিবেশী, বন্ধু বা আত্মীয়রা মহিলা প্রেসিডেন্টে স্বচ্ছন্দ নন! রাজনৈতিক অশুদ্ধতার দোষে দুষ্ট না হয়ে মনের কথা বলতে গেলে পাশের বাড়ির লোকের দোহাই দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ!

শুধু আমেরিকা নয়, একবিংশ শতাব্দীতেও বিশ্ব জুড়েই মহিলাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ যথেষ্ট সীমিত। প্রশ্ন হল, মহিলাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? মহিলাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বা রাজনৈতিক পদের শীর্ষে মহিলাদের অধিষ্ঠানই কি সে দেশের লিঙ্গসমতা নির্ধারণের যথেষ্ট প্রতিফলক?

না, শুধুমাত্র মহিলাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই কোনও দেশের লিঙ্গসাম্য বিচার করা যায় না। কারণ, এক দিকে যেমন আমরা লিঙ্গসাম্যের বিচারে এগিয়ে থাকা দেশ নরওয়েতে মহিলা প্রধানমন্ত্রী দেখতে পেয়েছি, তেমনই অপেক্ষাকৃত অনেকটাই পিছিয়ে থাকা ভারত, পাকিস্তান, বা বাংলাদেশে মহিলা প্রধানমন্ত্রীর উদাহরণ রয়েছে। মোটের উপর দক্ষিণ-এশীয় দেশগুলিতেই মহিলারা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন। অথচ, এই দক্ষিণ-এশীয় ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে লিঙ্গবৈষম্য সবচেয়ে বেশি। তা হলে?

গবেষণালব্ধ প্রমাণ বলছে, যে অঞ্চল/ রাজ্য বা দেশে এক বার কোনও মহিলা ক্ষমতাপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান পেয়েছেন, সেই অঞ্চল/ রাজ্য বা দেশে মহিলাদের সামগ্রিক অবস্থান যে রকমই হোক না কেন, মহিলা নেত্রী সংক্রান্ত ছুতমার্গটি যায় চলে। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ-এশীয় দেশগুলিতে যে সব মহিলা ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করেছেন, তাঁরা সিংহভাগই জন্মসূত্রে অত্যন্ত ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তৃতীয়ত, লক্ষ করলে দেখা যায় যে, নারী-উন্নয়নের জন্য, রাজনৈতিক বিভিন্ন স্তরে মহিলা পদের ন্যূনতম সংখ্যা সরকারি ভাবে বেঁধে দেওয়ার পর থেকেই লিঙ্গবৈষম্যে ভরপুর দেশগুলিরও এক বড় সংখ্যক মহিলা রাজনীতিতে যোগদান করতে এগিয়ে এসেছেন।

কিন্তু, তাতে কি সেই দেশগুলির মহিলাদের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটছে? অনেক ক্ষেত্রেই, না। কারণ দেখা যাচ্ছে, পদটির মূল দায়িত্ব বকলমে আসলে সামলাচ্ছেন মহিলা রাজনীতিকের স্বামী বা পুত্র। এই পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট ধাপ অবধি রাজনৈতিক পদ টিকিয়ে রাখা যায়, কিন্তু রাজ্য বা দেশের রাজনৈতিক শীর্ষস্থানটি এ ভাবে পাওয়া বা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ফলে, হাতেগোনা ব্যতিক্রম বাদ দিলে, উন্নত বা উন্নয়নশীল, প্রায় সব দেশে রাজনীতির প্রাথমিক ধাপগুলিতে যত সংখ্যক মহিলা পদাধিকারী, শীর্ষস্থানগুলিতে তার ভগ্নাংশমাত্র।

লিঙ্গবৈষম্যের সঙ্গে মহিলাদের রাজনৈতিক অবস্থানের সম্পর্কটি অবশ্য অতি নিবিড়। কোনও দেশে মহিলাদের সামগ্রিক অবস্থান তথা লিঙ্গবৈষম্য মূল্যায়নের ভিত্তি হিসেবে যে চারটি সূচক দুনিয়ায় স্বীকৃত, তার মধ্যে একটা হল মহিলাদের রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি। এর কারণ একাধিক। এক দিকে যেমন প্রশাসনিক পদ মহিলাদের স্ব-সিদ্ধান্তের অধিকার দেয়, অন্য দিকে পারিবারিক সীমাবদ্ধতার গণ্ডি পার করিয়ে তাঁর নিজস্ব পরিচয় তৈরি করে। অন্য দিকে এর সামাজিক তাৎপর্যও বিরাট। বিভিন্ন দেশের সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে যে, এক দিকে যেমন এক জন মহিলার রাজনৈতিক কাজে যোগদান আরও অনেক মহিলাকে রাজনৈতিক মঞ্চে পদার্পণের অনুপ্রেরণা জোগায়, তেমনই সমাজ ও পরিবারেও কন্যাসন্তানের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়।

রাজনীতি হল ক্ষমতার চূড়ান্ত পরিসর। আর সেই ক্ষমতার জোর এতটাই যে, তা শুধু লিঙ্গবৈষম্য কেন, জাতি বা বর্ণবৈষম্যের মতো উন্নয়নের পরিপন্থী বিষয়গুলিকেও সামনে টেনে আনে, অন্তর্নিহিত কুসংস্কারমূলক, আজন্মলালিত বিশ্বাসগুলির নগ্নরূপ প্রকাশ করে, মানুষকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়। আমেরিকার ২০২০-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর আমেরিকা তথা সারা বিশ্ব কি এ বার বুঝতে শিখবে যে, যতটা লিঙ্গবৈষম্য আমরা কাটিয়ে উঠেছি বলে আসলে মনে করি, আসলে তার সিকি ভাগও হয়নি?

Kamala Harris Equality USA

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।