Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

পুনর্বিবেচনার দাবি

প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য নূতন ছকে শ্রেণিবিন্যাস একটি সুবিবেচিত পরিবর্তন। কিন্তু প্রস্তাব ও তাহার রূপায়ণের মধ্যে দূরত্ব অতিক্রম করিবার সুরটি এই খসড়ায় অনুপস্থিত।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ নিশঙ্কের একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য। রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন-এর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়া বিষয়ক জনমতামত জমা পড়িবার সময়কাল বাড়াইয়া দিয়াছেন আরও এক মাস। শেষ দিন হিসাবে ধার্য ছিল আজ সোমবার, পয়লা জুলাই। নূতন ঘোষণার ফলে গোটা জুলাই মাসটি হাতে পাওয়া গেল। ইহা অত্যন্ত সুখবর। কেননা, বিষয়টি ভারী জটিল, প্রতিক্রিয়ার ধরনটিও যথেষ্ট জটিল। জাতীয় শিক্ষানীতির এই নূতন খসড়াটি সুচিন্তিত, বেশ কিছু বহুপ্রতীক্ষিত পরিবর্তনের ঘোষণা ইহাতে মিলিয়াছে। কিন্তু আবার এমন অনেক কিছুর আভাসও এখানে আছে, যাহা রীতিমতো উদ্বেগবর্ধক। বহু শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞ উদ্বেগের বিষয়গুলি উল্লেখ করিয়া খসড়ার পুনর্বিবেচনা দাবি করিয়াছেন। এই সংবাদপত্রেও গত সপ্তাহে খ্যাতনামা শিক্ষাবিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে, যাহাতে খসড়ার দুর্বল ও সমস্যাজনক দিকগুলির কথা সবিস্তারে আলোচিত হইয়াছে। কর্তব্য এখন, এই সমস্ত আলোচনার প্রতি মনোযোগদান, এবং প্রয়োজনে পুনর্বিবেচনা। নতুবা জনমতামত জানিতে চাহিবার কোনও অর্থই থাকে না। মন্ত্রীর ঘোষণা যে কেবল আলঙ্কারিক নহে, তাহা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি আবার ভাবিয়া দেখা হউক, এবং নূতন আলোকে তাহার বিচার হউক। জাতীয় শিক্ষানীতি বিষয়টির গুরুত্ব বুঝাইয়া বলিবার অপেক্ষা রাখে না। অনেক তর্কবিতর্ক, দীর্ঘসূত্রতার পর এই খসড়া প্রস্তাবিত হইয়াছে— পুনর্বিবেচনার্থে আরও কিছু সময় লাগিলে কোনও ক্ষতি হইবে না

উদাহরণস্বরূপ দুই-একটি বিষয়ের উল্লেখ জরুরি। প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য নূতন ছকে শ্রেণিবিন্যাস একটি সুবিবেচিত পরিবর্তন। কিন্তু প্রস্তাব ও তাহার রূপায়ণের মধ্যে দূরত্ব অতিক্রম করিবার সুরটি এই খসড়ায় অনুপস্থিত। ভয় ইহাই যে, শেষ পর্যন্ত না ইহাও শিক্ষাসংস্কারের শুভবোধলগ্ন একটি অকেজো নথি হইয়া পড়িয়া থাকে। শিক্ষকের সংখ্যা অনেক বাড়াইতে হইবে, ইহা ঠিক। তেমনই, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণদানের সূত্রে যাহাতে এক ছাঁচে সকলকে গড়িবার চেষ্টা না হয়, তাহাও দেখিতে হইবে। সাম্য ও সমানাধিকারের উদ্দেশ্য যেন দেশের সামাজিক বৈচিত্র ও বৈশিষ্ট্যকে ক্ষুণ্ণ না করে। এত বড় দেশে একটি কেন্দ্রীয় পাঠ্যক্রম চালু করিলে আঞ্চলিক ইতিহাস ও সংস্কৃতিশিক্ষার সঙ্কট হইতে পারে। এই প্রসঙ্গে ডেরেক ও’ ব্রায়েনের মৌলিক প্রশ্নটি ফিরাইয়া আনিতে হয়। শিক্ষা যে হেতু কেন্দ্র ও রাজ্যের যুগ্মতালিকাভুক্ত বিষয়, রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে খসড়াটি তৈরি তো? নতুবা, এখনও সময় রহিয়াছে, এই আলোচনা প্রয়োজনীয়।

ত্রিভাষা-শিক্ষাসূত্রে হিন্দির আধিপত্য লইয়া প্রথমেই বিপুল ক্ষোভবিক্ষোভ উপস্থিত হওয়ায় হিন্দির স্থানটি পূর্বাপেক্ষা সঙ্কুচিত হইয়াছে। অথচ শেষাবধি ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব হ্রাসের সূত্রে হিন্দির জায়গাটিকে বৃহত্তর বলয়ে লইয়া আসার সম্ভাবনা থাকিয়াই গিয়াছে। উচ্চশিক্ষাই হউক, আর সর্বশিক্ষা, ইংরেজিকে বাদ দিবার চেষ্টা এই বহুভাষী দেশের বিস্তর ক্ষতি করিবে, এ বিষয়ে সন্দেহ থাকিতে পারে না। ভারতীয় ঐতিহ্যের জ্ঞানের সহিত আধুনিক বিদ্যাভুবনের কোনও আড়াআড়ি সম্পর্ক নাই, সুতরাং ইংরেজি শিখিবার সহিত ভারতীয় জ্ঞানচর্চারও বিরোধ থাকিতে পারে না। বিরাট উদ্বেগের জায়গা, জাতীয় শিক্ষানীতির বিজ্ঞানবিমুখ অবস্থানটি। এক দিকে দেশের উন্নতি-বিধান, অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যার সঙ্গে সংযোগ, এই দ্বিমুখী উদ্দেশ্যসাধনের কাজে আধুনিক বিজ্ঞানের ভূমিকা গুরুতর। কলাবিদ্যা ও মানবিক বিদ্যা তাহার সাথি হইতে পারে, বিকল্প হইতে পারে না। আশা থাকিল, আগামী এক মাস খসড়ার এই দিকগুলির পুনর্বিচার হইবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy