রাজ্যসভায় পাশ হইল আধার (সংশোধনী) বিল। সিমকার্ড কিনিতে বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিতে আধার আর বাধ্যতামূলক নহে। তবে কেহ স্বেচ্ছায় তাহা প্যান-এর পরিবর্তে ব্যবহার করিতে পারেন। বিরোধীদের অভিযোগ, ‘স্বেচ্ছা’ শব্দটি প্রয়োগ করিয়া ঘুরপথে আধার চালু রাখিবার কৌশল করিল সরকার, কারণ অন্যান্য নথির ন্যায় আধারও গ্রাহ্য হইবে। তদুপরি, বেসরকারি সংস্থার হাতে জনতার ব্যক্তিগত তথ্য কত সুরক্ষিত, তাহার প্রমাণ নাই। আইনমন্ত্রীর জবাব: তথ্যের সুরক্ষার নিমিত্ত দ্রুত আইন তৈয়ারি হইবে। এবং সংযোজন— আধার নম্বর দিতে জনতার আপত্তি না থাকিলে বিরোধীদের কী সমস্যা? তথ্য বলিতেছে, ইতিমধ্যেই ৬৮ কোটি নাগরিক মোবাইল সংস্থার নিকট আধার-তথ্য জমা করিয়াছেন, ব্যাঙ্কগুলিতে সেই সংখ্যা ৬৫ কোটি।
সরকারি প্রকল্পের অর্থ ও পরিষেবা নাগরিকদের নিকট পৌঁছাইতে হইলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাঁহাদের চিহ্নিত করা সুষ্ঠু উপায়। কিন্তু বিপদও তৎসূত্রেই। ‘নাইন্টিন এইটি-ফোর’-এর ‘থট পুলিশ’ স্মর্তব্য। আধার-বিরোধীদের বক্তব্য, বিগ ব্রাদারের কার্য সম্পাদন করিতে সহায়ক হইতে পারে আধারের বিপুল তথ্যভাণ্ডার। ব্যক্তিগত তথ্য হস্তগত হইলে ব্যক্তিপরিসরেও প্রবেশ করা সম্ভব। ফল, রাষ্ট্রীয় নজরদারি। নাগরিকদের সম্পর্কে প্রভূত তথ্য করতলগত করিতে পারিলে বিদ্রোহীদের চিহ্নিত করিতে পারিবে শাসক। বিচারবিভাগ যেখানে ব্যক্তিপরিসরের গোপনীয়তাকে মানুষের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়াছে, সেখানে নাগরিকের যাবতীয় তথ্যসংগ্রহের জন্য যদি ‘স্বেচ্ছা’র ঘুরপথে হাঁটিতে হয়, শাসকের আপত্তি করিবার কারণ নাই। বিরোধীদেরও খুব আপত্তি আছে বলিয়া সন্দেহ হয় না, কারণ তাঁহাদের মধ্যেও শাসকসত্তাটি পূর্ণমাত্রায় বর্তমান। তাঁহারাও জানেন, নাগরিককে নিরন্তর নজরদারির অধীন করিতে পারিলে তাঁহাদের নিয়ন্ত্রণ করাও সহজ হয়। কেন মৃদু আপত্তির অধিক কিছুই বিরোধীদের মুখে শোনা যাইতেছে না, ভারতের নাগরিক সমাজ তাহা ভাবিয়া দেখিতে পারে।
আধার লইয়া আপত্তির বহুবিধ কারণ বর্তমান। প্রথমত গোপনীয়তা। ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিকের প্রতিটি পদক্ষেপ পুনর্গঠনের অধিকার এবং ক্ষমতা আধার সরকারের হাতে তুলিয়া দিয়াছে। তাহা গোপনীয়তার প্রাথমিক অধিকার লঙ্ঘন করে। প্রাথমিক ভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গ্রহণ করিবার কোনও নির্দিষ্ট নীতি ছিল না। দুর্নীতির অভিযোগও কম উঠে নাই। তবু ত্রাণ বণ্টন, বৃত্তি প্রদান, আয়কর রিটার্নে প্যানের পরিবর্ত বা চিকিৎসা ব্যয়ের পরিশোধ প্রেরণ— একের পর এক প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের আধার-তথ্য লইবার প্রস্তাবটিই সঙ্কটের দ্যোতক। দ্বিতীয়ত, এই ব্যবস্থা সরকারের হাতে নাগরিককে ছাঁটিয়া ফেলিবার অধিকার দিতেছে। ডিজিটাল পরিচিতি নির্ণয়ে গোলযোগের ফলে রেশন কিংবা ভোটার তালিকা হইতে নাম বাদ পড়িয়া যাইতেছে বহু মানুষের, সমস্যা ক্রমেই বাড়িতেছে। কে বিরোধীপক্ষকে ভোট দিতে পারেন, তাহা জানা থাকিলে সেই নাগরিককে রাষ্ট্রের খাতা হইতে সম্পূর্ণ মুছিয়া দেওয়া চলে। যে ব্যবস্থা নাগরিককে রাষ্ট্রের হাতের ক্রীড়নকে পরিণত করিতে পারে, তাহার বিষয়ে সাবধান হওয়াই বিধেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy