রাফাল নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি বলছেন, রাফাল নিয়ে মোদী সরকার দুর্নীতির শিকার।
বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলছেন, কোনও দুর্নীতি হয়নি। সরকার যা কিছু করেছে সবটাই নিয়ম মেনে।
আমার ’৮৯ লোকসভা নির্বাচনের কথা মনে পড়ছে। তখন বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ প্রচার চালাচ্ছেন রাজীব গাঁধী ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে বফর্স নিয়ে। একটা সময় তো বিদেশমন্ত্রী সোলাঙ্কিকে ইস্তফা দিতে হল। একের পর এক খবর ফাঁস হতে লাগল। বিরোধী রাজনীতি উত্তাল আর শাসক মন্ত্রীরা বলছেন, সব মিথ্যে! শেষ পর্যন্ত বফর্স প্রমাণ হয়নি। উল্টে বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ মৃত্যুর আগে সনিয়া গাঁধীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তাঁর বফর্স রাজনীতির জন্য।
এখনও রাফালকে বফর্স-এর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। বফর্স নামক একটা শব্দ দেশের একটা নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। রাফাল তা হবে কি না সেটার শেষ কথা বলার সময়ও এখনও আসেনি। সে সময় গোটা দেশে রাজীব-বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছিল আর্থ-সামাজিক কারণে। মানুষকে তাই সহজে বিশ্বাস করানো সোজা হয়েছিল। এখন দেশে বিজেপি-বিরোধী হাওয়া তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তা কতটা মোদী বিরোধী তা আমি বলতে পারব না!
তবে আমি সুপ্রিম কোর্ট নই! তদন্তকারী সংস্থাও নয়! আমি একদা ডিফেন্স করেসপন্ডেন্ট-এর একটা পরিচয়পত্র পেয়েছিলাম বাজপেয়ী জমানায় কার্গিল আর পোখরান বিস্ফোরণের খবর করে! এখন বুঝি, কার্গিল, পোখরান নিয়েও যা করেছিলাম সেটা হল রাজনৈতিক সংবাদদাতার কাজ!
আজ রাফাল নিয়েও আমি শেষ কথা লিখছি না কিন্তু কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করছি মাত্র!
প্রথমত, ২০১৫-র এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রথম ফ্ৰান্স সফর। ফরাসি কোম্পানি ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন-এর সঙ্গে ওই সফরেই ভারত চুক্তি করল! অথচ, ২০১২ সালে কংগ্রেস সরকার এই চুক্তিতে রাজি হয়নি, কারণ ফ্রান্সের এই সংস্থা ছিল ‘লোয়েস্ট বিডার’। দশ বছর ধরে এই ১২৬টা ফাইটার জেট নেওয়া উচিত কি না সেটা বিবেচনা করে কংগ্রেস সরকার না বলল আর মোদী সরকার এক বছরেই কেনার সিদ্ধান্ত নিল কেন?
রাফাল চুক্তি নিয়ে নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভ কংগ্রেসের।—ছবি পিটিআই।
দ্বিতীয়ত, সফর শেষে মোদী ঘোষণা করলেন, বিশ্ব টেন্ডারের পথে না গিয়ে ৩৬টা রাফাল জেট ভারত কিনছে খুব জরুরি ভিত্তিতে, যাতে ‘ফ্লাই অ্যাওয়ে’ অবস্থায় বিমানগুলি থাকে। এত দিন ধরে শর্ত ছিল, এ ধরনের চুক্তি হলে ভারতের হিন্দুস্থান এরোনটিক্স লিমিটেডকেই (হ্যাল) প্রধান পার্টনার করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে গিয়ে যে চুক্তি করলেন তা থেকে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নাম বাদ দেওয়া হল। প্রশ্ন, কেন দেওয়া হল?
তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরের ঠিক দু’দিন আগে তৎকালীন বিদেশসচিব জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের দিল্লিতে বলেন, রাফাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, হ্যাল এবং ড্যাসল্ট-এর শীর্ষস্তরে হচ্ছে। তার ১৫ দিন আগে ড্যাসল্ট-এর সিইও বলেন, হ্যাল চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার খুব ভাল বৈঠক হয়েছে। তা হলে? জয়শঙ্কর নিজেই জানতেন না, মোদী কী করতে যাচ্ছেন?
চতুর্থত, মোদীর ঘোষণার পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি ঠিক জানি না, কী চুক্তি হল। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী শীর্ষস্তরে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তার কয়েক মাস পরেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী সংসদে জানালেন, ১২৬টা যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি বাতিল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি এবং ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চুক্তি করেছেন, ৩৬টা রাফাল বিমান কেনা হবে। ড্যাসল্ট থেকে। ২০১৯ থেকে ২০২২-এর মধ্যে এগুলো দেওয়া হবে। ৫৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি!
এটা তা হলে তিনি জানতেন?
পঞ্চমত, প্রধানমন্ত্রী চুক্তি ঘোষণার ১৩ দিন আগে অনিল অম্বানি একটা নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করলেন। তিনি জীবনে কোনও দিন প্রতিরক্ষা ব্যবসায় ছিলেন না। কিন্তু তিনি পেলেন বরাত। স্বদেশি মন্ত্র রাষ্ট্র মন্ত্র উচ্চারণ করে যে সরকার, সেই সরকার হ্যাল-কে সরিয়ে অনিল অম্বানিকে ব্যবসা দিল! এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা? মোদী যখন ফ্রান্স যান তখন অনিলও প্যারিসে ছিলেন! প্রশ্ন উঠছে, যে অনিল অম্বানির ব্যবসায় সাধারণ ভাবে লালবাতি জ্বলে গিয়েছে, সেই অনিল অম্বানির এ হেন সংস্থা কোনও প্রতিযোগিতা ছাড়া এই ব্যবসা পেল কী করে? যে কোম্পানির বাজারে দেনা এক লক্ষ কোটি টাকা, তাকে এই কাজ দেওয়া কি জাতীয় নিরাপত্তাকেই বিঘ্নিত করে না? যদিও অনিল অম্বানি সম্প্রতি তাঁর সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তোলা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এ সব রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
যদিও জনমানসে এই প্রশ্নগুলি থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy