Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Prince Harry

অথ প্রাসাদ কথা 

মানুষ আসে, মানুষ যায়, কিন্তু আমি অনন্ত কাল প্রবাহিত হই— ‘দ্য ব্রুক’ পদ্যের এই মর্মের পঙ্‌ক্তি চিরখ্যাত।

হ্যারি ও মেগান। —ফাইল চিত্র

হ্যারি ও মেগান। —ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৪৪
Share: Save:

মানুষ আসে, মানুষ যায়, কিন্তু আমি অনন্ত কাল প্রবাহিত হই— ‘দ্য ব্রুক’ পদ্যের এই মর্মের পঙ্‌ক্তি চিরখ্যাত। ব্রিটেনের রাজবংশ সম্পর্কেও ইহার অনুসরণে বলা যায়, গণতন্ত্র আসে গণতন্ত্র যায়, কিন্তু ইহার মহিমা অক্ষুণ্ণ থাকে। আধুনিক যুগে একটি রাজবংশ থাকিবার ও তাহাকে মনোযোগের কেন্দ্রে রাখিবার আদৌ প্রয়োজন কী, ইহা লইয়া বহু তর্ক হইয়াছে, কিন্তু তাহাতে গণমাধ্যম ও গণসমাজের রাজবংশ সম্পর্কে আকর্ষণ ও কৌতূহল বিন্দুমাত্র কমে নাই। রাজবংশের মানুষেরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হইয়া যান, কখনও শিশুদের ক্রোড়ে লন, কখনও প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন, সকলে তাঁহাদের পোশাক ও অলঙ্কারের দিকে লক্ষ রাখে, আর তাঁহাদের পরকীয়ার সংবাদ পাইলে উচ্ছ্বসিত হইয়া কেচ্ছাচর্চা শুরু করে। তাঁহারা জনসমাজ হইতে দূরে থাকিবেন, মাঝে মাঝে নশ্বরদের মধ্যে নামিয়া আসিবেন, জন্মসূত্রে ও বিবাহসূত্রে সম্মান ও গৌরব ভোগ করিবেন, মাঝে মাঝে তাহা লইয়া কিঞ্চিৎ ব্যঙ্গ হইবে, কিন্তু সম্ভ্রম ঘুচিবে না— ইহাই ঐতিহ্য।

অকস্মাৎ সেই ধারা ভাঙিয়া, হ্যারি ও মেগান— সাসেক্সের ডিউক ও ডাচেস— ঘোষণা করিলেন, তাঁহারা এই বংশের ঘেরাটোপ হইতে বাহির হইয়া, নিজেদের মতো জীবন যাপন করিবেন, অর্থাৎ, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন হইবার প্রয়াস শুরু করিবেন। তাঁহারা রাজ-উপাধিগুলি ব্যবহার করিবেন না, রাজ-কর্তব্য (ফিতা কাটিয়া অন্যকে ধন্য করা) পালন করিবেন না, রাজপরিবারের অংশ হইবার সূত্রে যে অর্থ লাভ করেন, তা লইবেন না। ইহা বজ্রপাতসম। জন্মাবধি বিনা শ্রমে আর্থিক সুরক্ষা, প্রবল সম্মান পাইবার পর, দেহরক্ষীপরিবৃত আলোকবৃত্তে ও পদক্ষেপণমাত্র করতালিবন্যায় যিনি জীবন কাটান, তিনি যে স্বেচ্ছায় এ সমস্ত ছাড়িয়া সাধারণ মানুষের ন্যায় জীবন কাটাইতে চাহিতেছেন, ইহা অবশ্যই এক প্রকার বিপ্লব।

হ্যারি ও মেগানের বিবাহের পরেই মেগানকে লইয়া কিঞ্চিৎ গুঞ্জন শুরু হইয়াছিল। তিনি মার্কিন, অভিনেত্রী, বিবাহবিচ্ছিন্না, সর্বোপরি দ্বিবর্ণা (তাঁহার জননী কৃষ্ণাঙ্গ, পিতা শ্বেতাঙ্গ)। বলা হইয়াছিল তাঁহার পারিবারিক অশান্তির কথা, ক্রমে বলা হইতেছিল হ্যারির ভ্রাতা উইলিয়াম ও তাঁহার বধূ কেট-এর সহিত মেগানের কলহের কথা। ইঙ্গিত করা হইতেছিল, রাজবংশের অভিজাত আদবকায়দার সহিত মেগান মানাইয়া লইতে পারিবেন কেন, তাঁহার শিক্ষাদীক্ষাই তো সেই স্তরের নহে। উদাসীন রাজ-অহংয়ের পরম্পরা ভাঙিয়া, গণমাধ্যমের এই বিষোদ্গারের প্রতিবাদ মেগান করিয়াছেন, হ্যারিও একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করিয়াছেন, পিতাকে লেখা মেগানের ব্যক্তিগত পত্র ফাঁস করিয়া দেওয়ার ব্যাপারে। এই বারে এই যুগল এই স্বর্ণপিঞ্জর হইতে বাহির হইয়া পড়িলেন। ইহাতে তাঁহাদের দরিদ্রতর বা ঊনখ্যাত হইবার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু স্বাধীনতার এই উড়ানচেষ্টা তাঁহাদের অনন্য করিল। যে কোনও জগদ্দল বন্দোবস্তের একটি ক্ষয়-প্রভাব থাকে। যে কোনও অচলায়তন হইতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা এক সদর্থক পদক্ষেপ। অবান্তর রাজদণ্ডের ভার ও উপঢৌকন প্রত্যাখ্যান করিয়া হ্যারি ও মেগান প্রকৃত আধুনিকতার বায়ু নিশ্ছিদ্র রাজপ্রাসাদে প্রবাহিত করিলেন। ইহার ফল কী হইবে, সময় বলিবে, কিন্তু সময় এই বীজ-বপনের ঘটনাটি বিস্মৃত হইবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Prince Harry Meghan Markle London British Royal Family
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy