Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Editorial News

বর্ষণহীন গর্জন আর কত দিন?

প্রাক নির্বাচনী পর্বে বা ভোটগ্রহণ পর্বে হিংসা তো ছিলই। কিন্তু ভোট মেটার পরে হিংসা যেন চতুর্গুন বা ততোধিক হয়ে দেখা দিয়েছে।

গোলমাল থামাতে শূন্যে ১০ রাউন্ড গুলি চালায় পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

গোলমাল থামাতে শূন্যে ১০ রাউন্ড গুলি চালায় পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৯ ০০:৪৮
Share: Save:

এত মৃতদেহ আমরা রাখব কোথায়? আর কত মৃতদেহ কুড়িয়ে বেড়াব রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে? ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া কি দুষ্কর্মের মুক্তাঞ্চল হয়ে গেল? প্রশাসন কি আদৌ অস্তিত্বশীল সেখানে? যদি অস্তিত্বশীল হয়, তা হলে অবাধ-অনর্গল গতিতে দিনের পর দিন এমন উন্মত্ত হিংসা তলে কী ভাবে?

প্রশ্ন গুচ্ছ গুচ্ছ। প্রত্যেকটা প্রশ্ন গুরুতর। প্রশ্নগুলোর সঙ্গে আমাদের জীবন-মৃত্যু জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, উত্তর দেওয়ার কেউ নেই। কোনও উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না। রোজ খুঁজে পাওয়া যাবে শুধু নতুন নতুন মৃতদেহ। খুঁজে পাওয়া যাবে গণতন্ত্রের মৃতদেহ।

প্রাক নির্বাচনী পর্বে বা ভোটগ্রহণ পর্বে হিংসা তো ছিলই। কিন্তু ভোট মেটার পরে হিংসা যেন চতুর্গুন বা ততোধিক হয়ে দেখা দিয়েছে। কোচবিহার থেকে সন্দেশখালি, নানুর থেকে রানাঘাট— তালিকা যেন শেষ হতে চাইছে না। সন্ত্রাসের হিসেব রাখা যাচ্ছে না। বেলাগামে বেহিসেবে ঝরছে রক্ত, ঝরছে প্রাণ। সবচেয়ে উত্তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া। হিংসা যেন সংহার মূর্তি ধারণ করেছে এই শিল্পাঞ্চলে। বোমা-গুলির লড়াই, ভাঙচুর, হামলা, একের পর এক প্রাণহানি অপ্রতিরোধ্য ভঙ্গিতে ঘটেই চলেছে এই অঞ্চলে। ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে প্রায় এক মাস কেটে গেল। এত দিনেও থামানো গেল না হিংসা! আশ্চর্যজনক, বিস্ময়কর! প্রশাসন বলে কিছু রয়েছে, এমনটা বিশ্বাস করব কী ভাবে?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

মাঝেমধ্যেই হুঙ্কারটা অবশ্য শোনা যাচ্ছে। প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে বার্তা আসছে— দুষ্কৃতীদের কড়া হাতে দমন করতে হবে। অথবা অবিলম্বে সব বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে অথবা কোনও রাজনৈতিক রঙ না দেখে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে অথবা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে হবে। কিন্তু হুঙ্কারই সার। বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন নেই। দিনের পর দিন নারকীয় পরিস্থিতির মধ্যে কাটছে ভাটপাড়া-কাকিনাড়ার বাসিন্দাদের, বেঁচে থাকাটাই যেন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে।

এই পরিস্থিতি চরম প্রশাসনিক ব্যর্থতার নজির। নাগরিকের জন্য বিন্দুমাত্র সুরক্ষার আশ্বাস নেই। এক দিন-দু’দিন নয়, প্রায় এক মাস ধরে নেই। প্রশাসনের তরফে রয়েছে শুধু অন্তঃসারশূন্য গর্জন।

আরও পড়ুন: বোমা-গুলির লড়াইয়ে রণক্ষেত্র ভাটপাড়া, মৃত্যু বেড়ে ২, গুলিবিদ্ধ ৫, নবান্নে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর

আরও পড়ুন: ভাটপাড়া স্বাভাবিক করতে ৭২ ঘণ্টা সময় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, দায়িত্বে নয়া পুলিশ কমিশনার

পরিস্থিতি আয়ত্বে আনার জন্য পুলিশকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, ভাল কথা। কিন্তু সে সময়সীমা কেন তিন দিনের? প্রায় এক মাস ধরে চলতে থাকার পরেও কেন আরও তিন দিন? কেন এক দিন নয়? প্রশাসন কি নিজের সক্ষমতা নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়ল? অবিলম্বে, এই মুহূর্তে এবং এখনই থামাতে হবে হিংসা। না হলে কিন্তু বাংলার নাগরিকরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে, প্রশাসন যতটা গর্জায় ততটা বর্ষায় না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy