ছবি: সংগৃহীত
নতুন বছরের শুরু থেকেই ঘরে-বাইরে আশঙ্কার মেঘ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আঘাত-প্রত্যাঘাত, যুদ্ধ-যুদ্ধ ব্যাপার। বাগদাদ বিমানবন্দরে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস-এর মেজর জেনারেল কাসেম সোলেমানি, ইরাকের পপুলার মোবিলাইজ়েশন ফোর্স-এর কম্যান্ডার আবু মাহদি আল-মুহানদিস এবং আরও কয়েক জন। তার পরেই পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধের ছায়া আরও ঘনিয়েছে।
এই আবহাওয়ার মধ্যে একটু খেয়াল করে নেওয়া যেতে পারে, এ বছরের শেষ দিকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে এই গতিপ্রকৃতি প্রত্যাশিত। একটু পিছিয়ে গেলে দেখা যাবে, বেশ কিছু দিন আগে থেকেই ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা, ইরানের উচ্চপদস্থ কূটনীতিককে রাষ্ট্রপুঞ্জে ঢুকতে না দেওয়া, সোলেমানির ইরানীয় বাহিনীকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দেওয়া, এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে হত্যা করা— ঘটনা পরম্পরা যেন সাজানো চিত্রনাট্যের মতো!
এর পর ইরান কী করল? ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ জন মার্কিন সেনাকে মেরে ফেলল। তার পরই মনে হচ্ছে, আমেরিকার পেতে দেওয়া ফাঁদে ইরান পা দিয়ে ফেলল না তো? কেননা, এই কুমিরছানা দেখিয়ে কেবল সামরিক ঘাঁটি বানানো নয়, গোটা ইরানের দখল নিতেও তৎপর হতে পারে মার্কিন বাহিনী। খালি চোখে যুদ্ধও দেখা যাবে না, আবার তাদের উদ্দেশ্যও পূরণ হবে। এই যুদ্ধ-ফর্মুলার মধ্যে একমাত্র আশার আলো খোদ মার্কিন মুলুকেই বিরাট বিরাট যুদ্ধবিরোধী মিছিল, এবং তাতে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।
পশ্চিম এশিয়ার তেলভাণ্ডারের দিকে আমেরিকার নজর নতুন নয়। যুদ্ধের ছায়ায় ইতিমধ্যেই বেড়ে গিয়েছে তেলের দাম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছেন, তেলের জন্য কাউকে দরকার নেই। সঙ্গে অবশ্য তাঁর ভাণ্ডারে থাকা প্রাণঘাতী অস্ত্রের কথাও কড়া সুরে জানিয়েছেন। ভয় হয়, ছায়াযুদ্ধের মধ্যেই যদি সামরিক ঘাঁটি তৈরি হয়ে যায়? ইরানের তেলের ভাণ্ডার দখলের চেষ্টা হয়? সত্যিই, এখন সেখানে মার্কিনদের সামরিক আধিপত্য তৈরি হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই।
ভোট বড় বালাই, তাই শাসক রিপাবলিকানদের সুরেই বিরোধী ডেমোক্র্যাট নেতারাও সোলেমানিকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে সম্বোধন করছেন। স্বাভাবিক প্রশ্ন আসে— শত্রুপক্ষ আক্রমণ করতে পারে ভেবে যেখানে ভিডিয়ো গেম-এও কেউ গুলি নষ্ট করে না, সেখানে এক জন সেনাপ্রধানকে মেরে ফেলার পরেও রাষ্ট্রপুঞ্জের এই অদ্ভুত নীরবতা কেন?
নীরবতা অবশ্য ভেঙেছে জনতা। রাজপথের দখল নিয়েছেন অজস্র মানুষ। ‘অ্যাক্ট নাউ টু স্টপ ওয়ার অ্যান্ড এন্ড রেসিজ়ম কোয়ালিশন’ (সংক্ষেপে ‘অ্যানসার’), ‘রেভলিউশন ক্লাব শিকাগো’, মহিলা পরিচালিত যুদ্ধবিরোধী সংগঠন ‘কোড পিঙ্ক’-সহ অনেকগুলো সংস্থার সমন্বয়ে শিকাগো শহরের মিছিল থেকে স্পষ্ট কিছু বার্তা দেওয়া হয়েছে। তার নির্যাস পাওয়া যায় এই স্লোগানটা থেকে— ‘হুজ় স্ট্রিটস? আওয়ার স্ট্রিটস/ হোয়াট ডু উই ওয়ান্ট? নো ওয়ার!’
এই স্লোগানে গলা মিলিয়ে সাদ্দাম হুসেনের সময়কে মনে করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। বলেছেন, সে সময় যে ভাবে দেশের শাসক, বিরোধী সব দলই যুদ্ধকে সমর্থন করেছিল, এ বারেও ডেমোক্র্যাটরা একই ভাবে যুদ্ধের পক্ষ নেবে।
ইতিমধ্যেই আমেরিকায় বসবাসকারী বিভিন্ন ইরানীয় পরিবারকে চিহ্নিত করে তাঁদের ওপর যে ভাবে আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন হতে হয়। তবু, সারা পৃথিবীর সামনে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর রাস্তাই এখন সব থেকে বড় শিক্ষা। নির্বাচনের আগে গিমিক অথবা জবরদখলের নীতি অথবা সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ, এত কৌশলের পরেও নিজের দেশের মানুষের থেকে স্পষ্ট দেওয়াল লিখন এসেছে— যুদ্ধ চাই না।
এখানে দু’দিক থেকেই ভারতের একটা স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার জায়গা এসেছে। প্রথমত, আশু বিপদের দিনে ভারতের মাধ্যমে মধ্যস্থতার ইঙ্গিত করেছে ইরান। কাজেই এখন ভারতেরও নিজের যথার্থ অবস্থান স্পষ্ট বলতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিজের দেশে যে ভাবে আগ্রাসন ও দখল নীতির বিরোধিতা করে চলেছেন ভারতীয় জনতা, সেই প্রতিবাদ বিশ্বের অন্যান্য ঘটনার প্রতিঘাতেও ছড়িয়ে পড়া উচিত। নীরবতা বা উভয় পক্ষকে সংযত থাকার পরামর্শ দেওয়া সময় এটা নয়। এটা পক্ষ চেনার সময়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy