Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Assam flood

অক্ষমণীয়

গত এপ্রিল থেকেই অসম বন্যার কবলে। এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত তেত্রিশ লক্ষেরও বেশি রাজ্যবাসী। মৃত শতাধিক। অগণিত মানুষ গৃহহীন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২২ ০৪:১৯
Share: Save:

অসম রাজ্য যখন বন্যায় ভাসছে, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা তখন রাজনীতির খেলায় নিমগ্ন। রাজধানী গুয়াহাটির একটি বিলাসবহুল হোটেলে ঠাঁই নেওয়া মহারাষ্ট্রের বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের তুষ্ট করতে তিনি তখন ব্যস্ত। তাঁর এই উদাসীনতাকে কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীন বললেও কম বলা হবে। বিরোধীরা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগ করায় মুখ্যমন্ত্রী নিজের ভূমিকার যে অজুহাতটি খাড়া করেছেন, সেটি চমকপ্রদ— তিনি বলেছেন, বন্যার সময় যে হেতু এমনিতেই পর্যটন বন্ধ থাকে, তখন রাজনৈতিক কারণে যদি ভিনরাজ্য থেকে ‘পর্যটক’ আসেন, তা হলে মানুষের কাছে বার্তা যাবে যে, বন্যার সময়েও রাজ্যে পর্যটন সম্ভব! তাতে রাজ্যেরই লক্ষ্মীলাভ। কথাটি প্রলাপ, বা মুখ বাঁচানোর কৌশল নয়— এই বিচিত্র এবং অবান্তর জবাবটি দিয়ে আসলে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, নাগরিকের প্রতি তাঁর দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে কে কী বলল, তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। এই ঔদ্ধত্যটি ক্রমে বিজেপি নেতাদের অভিজ্ঞান হয়ে উঠছে।

গত এপ্রিল থেকেই অসম বন্যার কবলে। এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত তেত্রিশ লক্ষেরও বেশি রাজ্যবাসী। মৃত শতাধিক। অগণিত মানুষ গৃহহীন। বহু জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। খাদ্যাভাব ও পানীয় জলের কষ্টে ভুগছেন মানুষ। ত্রাণও পৌঁছচ্ছে না ঠিকমতো। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও দায়িত্ববান, বাস্তববোধসম্পন্ন মুখ্যমন্ত্রীর কর্তব্য সর্বাগ্রে বন্যাদুর্গত রাজ্যবাসীর পাশে দাঁড়ানো, দ্রুত পরিস্থিতির সামাল দেওয়া। এমন নয় যে, বন্যাকবলিত এলাকাগুলিতে বহুচর্চিত ট্রেনসফরের সময়ে দুর্গতদের মধ্যে খাবার এবং ত্রাণসামগ্রীর অপ্রতুলতা নজরে আসেনি তাঁর। কিন্তু অনুমান করা চলে, বিজেপির সর্বভারতীয় মানচিত্রে ঠাঁই পাওয়া তাঁর কাছে রাজ্যের দুর্গত মানুষের জন্য ভাবিত হওয়ার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর নেতৃত্বে অসম বিজেপির পক্ষে ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে— ভিনরাজ্যের নাগরিকরা এই রাজ্যে এসেই পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হন, বিরোধী দলের রাজনীতিককে গ্রেফতার করে এই রাজ্যেই আনা হয়। এবং, প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার উজিয়ে মহারাষ্ট্রের বিক্ষুব্ধ শিবসেনা বিধায়কদের নিয়ে আসা হয় অসমে। বিশ্বশর্মা দলীয় নেতৃত্বের কাছে বিশ্বাসভাজন বলেই তো। অতএব, সেই বিশ্বাসের মর্যাদারক্ষা করতে তিনি রাজ্যবাসীর স্বার্থ বিসর্জন দিতে নির্দ্বিধ।

নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার খেলায় তাঁর এই প্রয়াস আসলে একটি বৃহত্তর ব্যাধির উপসর্গ। নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করার অর্থ যে অতঃপর নিজস্ব বা দলীয় স্বার্থসিদ্ধির কাজে সময় অতিবাহিত করা নয়, মানুষের স্বার্থরক্ষা করা— ভারতীয় রাজনীতি থেকে এই কথাটি সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে বিপুল বন্যা চলাকালীন ভিনরাজ্যের বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের জন্য বিলাসের আয়োজন করা একটি চরম উদাহরণ, তাতে সন্দেহ নেই— কিন্তু ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে জনস্বার্থকে স্থান দেওয়ার উদাহরণ এখন ভারতীয় রাজনীতিতে অতি বিরল। নেতারা জানেন, তাঁদের এ-হেন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ভোটে জেতার পথে কোনও দিনই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। জন-আচরণের এই নিশ্চয়তাই রাজনৈতিক নেতাদের সাহস জোগায়। দুঃসাহসী, দুরাচারী করে তোলে।

অন্য বিষয়গুলি:

Assam flood Himant Biswa Sharma Shivsena
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy