Advertisement
E-Paper

চিকিৎসা বিভ্রাট

দুর্ভাগ্যবশত, এ দেশে কিছু বড় বেসরকারি হাসপাতাল এই পরিষেবা ব্যবহার করলেও চিকিৎসার মূল স্রোতে এই পরিষেবা তেমন জায়গা পায়নি।

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৩৫
Share
Save

ভর্তি হওয়ার আগেই কেন চিকিৎসা শুরু করা যায় না, প্রশ্ন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই এ রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অতএব রাজ্যবাসী প্রশ্নটি মমতাকেই করতে পারত। দেরিতে হলেও মুখ্যমন্ত্রী বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করেছেন, এটুকুই ভরসা। চিকিৎসা শুরু করতে বিলম্ব হওয়ায় রোগযন্ত্রণা দীর্ঘ হয়, অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়, এ কথা অবশ্য যে কোনও সরকারি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে গিয়ে দাঁড়ালেই বোঝা যায়। কিন্তু অভাব কেবল চিকিৎসকদের দায়বোধের অথবা সময়ের নয়। চিকিৎসার যেমন একটি বৈজ্ঞানিক দিক রয়েছে, তেমন একটি আইনগত দিকও রয়েছে। হাসপাতালে কোনও ব্যক্তিকে ‘রোগী’ হিসাবে ভর্তি করার অর্থ, রোগীর দায়িত্ব কোন চিকিৎসক নিচ্ছেন, রোগীর কী সমস্যা নির্ণীত হচ্ছে এবং কী চিকিৎসা হচ্ছে, তা নথিভুক্ত করা। ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না করে হাসপাতালের পক্ষে কিছু আপৎকালীন ব্যবস্থার অতিরিক্ত বিশেষ কিছু করা সম্ভব নয়। তবে রোগীর সহায়তা এবং চিকিৎসকের উপর চাপ কমানোর উপায়ও রয়েছে। তা হল জরুরি চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক কর্মী তৈরি করার। সঙ্কটাপন্ন রোগীকে যথাসম্ভব স্থিতাবস্থায় এনে দেন তাঁরা, যাতে রোগীর বিপন্নতা কমে, চিকিৎসকদের উপর চাপও কমে। পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে হাসপাতালের চিকিৎসার এক আবশ্যক অঙ্গ হিসাবে দেখা হয় ‘ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান’ হিসাবে প্রশিক্ষিত কর্মীদের। দুর্ঘটনায় আহত, বা অকস্মাৎ অসুস্থ রোগীদের জীবন সুরক্ষায় তাঁদের ভূমিকা স্বীকৃত ও প্রশংসিত।

দুর্ভাগ্যবশত, এ দেশে কিছু বড় বেসরকারি হাসপাতাল এই পরিষেবা ব্যবহার করলেও চিকিৎসার মূল স্রোতে এই পরিষেবা তেমন জায়গা পায়নি। চিকিৎসাকে হাসপাতালের চৌহদ্দির মধ্যে সীমাবদ্ধ করার একটা প্রবণতা ভারতে বরাবরই লক্ষ করা যায়। তাই হাসপাতালের বাইরে আপৎকালীন পরিষেবা বলতে রয়েছেন কেবল অ্যাম্বুল্যান্স চালক এবং তাঁর সহায়ক, যাঁদের অধিকাংশই রোগীকে বহন করা, অক্সিজেনের মুখোশ লাগানো ছাড়া আর কিছু জানেন না। আপৎকালীন চিকিৎসাকে ‘ফার্স্ট এড’-এর বেশি ভাবার অভ্যাস কারও নেই। অথচ, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান-সহ চিকিৎসা সহায়তার নানা ধরনের কাজে প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম রয়েছে ভারতে। এমন সহায়কদের প্রয়োজন যে প্রশাসনও অনুভব করে, তা মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকেই সম্প্রতি ফের বোঝা গিয়েছে। এমনকি সম্প্রতি জেলা থেকে কলকাতায় অনবরত রোগী রেফার করার প্রবণতায় অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি স্বাস্থ্য দফতরের একটি বৈঠকে বলেছেন, কেন তার বদলে ধাত্রী বা আশাকর্মীদের ডেকে নিয়ে জেলার নানা স্তরের হাসপাতালে প্রসব করানো যাবে না?

আশাকর্মীদের কাজের পরিধি জনসমাজে— হাসপাতালে নয়। হাসপাতালে ‘ডিউটি’ করতে হলে তাঁদের প্রধান কাজে ভাটা পড়বে। প্রয়োজন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত অ-চিকিৎসক কর্মীদের বেশি করে বহাল করা। তাতে চিকিৎসকদের সময়েরও যথাযথ ব্যবহার হবে। এই নিরিখে দশ হাজার নার্স নিয়োগের যে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, তাকে স্বাগত জানাতে হয়। তিনি যথার্থই বলেছেন, রোগীর সুস্থতা বিধানে নার্সের ভূমিকা কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নার্স এবং অন্য সহায়ক কর্মীদের বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে চিকিৎসায় আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়ার প্রস্তাব বার বার উঠেছে। কখনও যথাযথ আইনি পরিকাঠামোর অভাবে, কখনও উদ্যোগের অভাবে শেষ অবধি কাজ হয়নি। সমাজ-মানসিকতার জড়তাও এ ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। মেয়েদের নার্সিং-এর কাজ করতে দিতে পরিবার থেকেই নিরস্ত ও নিরুৎসাহ করা হয়। এই পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য জনচেতনার প্রসার জরুরি। চিকিৎসক-সর্বস্ব ব্যবস্থা থেকে চিকিৎসার নিবিড়, সুসংহত ব্যবস্থা নির্মাণ হোক, এটাই কাম্য।

Government hospitals Mamata Banerjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।