E-Paper

শব্দ-শুভেচ্ছা

কেন পুজোর আগে নিয়মমাফিক ধরপাকড় সত্ত্বেও নিষিদ্ধ বাজির ব্যবহারে রাশ টানা যাচ্ছে না, বুঝতে হলে রাজপথ ছেড়ে গলিঘুঁজির দিকে চোখ ফেরানো জরুরি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১২
Share
Save

পরীক্ষার প্রস্তুতি দেখে যদি ফলাফলের আন্দাজ করতে হয়, তবে এ বছরও যে পশ্চিমবঙ্গে দীপাবলির রাতটি শব্দবাজির নিরিখে ডাহা ফেল করবে, সে বিষয়ে নিঃসংশয় হওয়া যায়। অথচ, এই রাজ্যেই আদালতের নির্দেশ মানলে শুধুমাত্র দীপাবলির দিনটিতে ঘণ্টাদুয়েক সবুজ বাজি ফাটানোর ছাড়পত্র পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই নির্দেশ মানবে কে? জনগণ স্বভাবতই আমোদপ্রিয়। এত দিনেও বাজির কুফলটি তাঁদের মগজস্থ হয়নি। অন্য দিকে, বেলাগাম বাজি ফাটানোর কুফল বোঝানোর মতো প্রশাসনিক উদ্যোগ বিলুপ্তপ্রায়। ফলত, শব্দদূষণ সীমা ছাড়ানোর আশঙ্কা প্রবল। নগরপাল অবশ্য বাজি বিষয়ে সম্প্রতি জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু তাঁর জেনে রাখা ভাল, শব্দবাজি রোখার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দীপাবলির দিনটিকে পাখির চোখ ধরলেই হয় না। নিয়মভঙ্গকারীদের সক্রিয়তা তার আগে-পরেও সমান মাত্রায় বজায় থাকে। পুলিশ বহুতলগুলির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকে। কিন্তু প্রতি বছর দীপাবলির রাত গড়ালে পাড়াগুলির ভিতরে যে একটানা শব্দবাজির প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তাকে থামাতে সচেষ্ট থাকে কি? অভিযোগ জানালে ক’জনের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়?

কেন পুজোর আগে নিয়মমাফিক ধরপাকড় সত্ত্বেও নিষিদ্ধ বাজির ব্যবহারে রাশ টানা যাচ্ছে না, বুঝতে হলে রাজপথ ছেড়ে গলিঘুঁজির দিকে চোখ ফেরানো জরুরি। কখনও অস্থায়ী দোকানে, কখনও বৈধ দোকানের আড়ালে, এমনকি সাধারণ মনিহারি দোকানের পিছনেও নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হয়। এই বাজি রোধে উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলিতে কড়া নজর রাখা প্রয়োজন ছিল। সেই কাজ বিশেষ এগোয়নি। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সবুজ বাজির পাশাপাশি চটজলদি লাভের লক্ষ্যে নিষিদ্ধ বাজি উৎপাদনও চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এই কুচক্রের মূলে আঘাত না করলে কোনও দিনও শব্দতাণ্ডব হ্রাস পাবে না। প্রশ্ন হল, এ কাজ করবে কে? দীর্ঘ দিন ধরে চলা এই চক্রের হদিস পুলিশ-প্রশাসন জানে না, এমনটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তা সত্ত্বেও কার অঙ্গুলিহেলনে তারা সারা বছর যথেষ্ট তৎপর থাকে না, খুঁজে বার করা জরুরি। আরও জরুরি বাজি বৈধ কি না, তা জানার জন্য যে সংস্থাগুলি দায়িত্বপ্রাপ্ত, উৎসবের পর্বটিতে তারা অদৃশ্য হয়ে যায় কোন মন্ত্রবলে?

যাঁরা নিষিদ্ধ বাজির পক্ষে অর্থনীতির যুক্তি তুলে আনেন, তাঁদের জানানো প্রয়োজন, অসংখ্য জীবন বাজি রেখে কোনও আর্থিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া বাস্তববুদ্ধির পরিচায়ক নয়। আলোর উৎসবের পিছনে থাকা অন্ধকার ঘাঁটলে দেখা যায় অবৈধ বাজি প্রস্তুত করতে গিয়ে বিস্ফোরণে বহু প্রাণ অকালে ঝরেছে, অঙ্গহানি হয়েছে, অসুস্থ অবস্থায় কর্মহীন হয়েছেন আরও অনেকে। অথচ, বাজি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা দূর, গত বছর বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করে দেওয়া হল। বাজি, বিশেষত শব্দবাজি ব্যবহারে কিছু সংখ্যক মানুষের উৎকট আনন্দ লাভ ভিন্ন কারও কোনও কল্যাণ সাধিত হয় না। বরং, অগণিত মানুষের হার্টের, ফুসফুসের সমস্যা বাড়ে, পশু-পাখিদের সীমাহীন অস্বস্তির সৃষ্টি হয় এবং দূষিত পরিবেশ আরও খানিক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অবশ্য যে রাজ্যে প্রশাসন স্বয়ং নিষিদ্ধ বাজির ব্যবসাকে কিছু জনের ‘দুষ্টামি’ ভিন্ন অন্য কিছু ভাবে না, সেই রাজ্যের কাছে এর চেয়ে অধিক কিছু আশা করা বৃথা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Police Kali Puja 2024

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।