কলিকাতায় পানীয় জলের প্রাচুর্য এবং অভাব পাশাপাশি চলিতেছে। উত্তর এবং মধ্য কলিকাতার কোনও কোনও অঞ্চলে মাথাপিছু জল খরচের পরিমাণ দৈনিক ১৮০ লিটার, যেখানে সরকারি সংস্থার সুপারিশ অনুসারে ১৩৫ হইতে ১৫০ লিটার প্রয়োজন। অথচ, এই কলকাতারই কসবা, যাদবপুর, মুকুন্দপুর-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে পানীয় জলের তীব্র অভাব রহিয়াছে। জলের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় বাস্তবিকই বিস্ময়কর। জলের অভাবে ভারতেরই বহু শহর কী সঙ্কটে পড়িয়াছে, তাহা দেখিতেছে কলিকাতাবাসী। হুগলি নদীর নৈকট্যের জন্য জলের অভাব তীব্র হইয়া দেখা দেয় নাই বটে, কিন্তু জল পরিস্রুত করিবার খরচও কি মনে রাখিবে না শহর? এ শহরে দৈনিক ২০২ কোটি লিটার পরিস্রুত পানীয় জল উৎপাদন হইয়া থাকে, যাহা সকল বাসিন্দার চাহিদা পূরণ করিতে সক্ষম। কিন্তু সংবাদে প্রকাশ, পুরসভা অঞ্চলে ৩০ শতাংশ পরিস্রুত জল প্রতিদিন অপচয় হইতেছে, পরিস্রুত করিবার খরচের হিসাবে যাহার অর্থমূল্য দৈনিক কুড়ি লক্ষ টাকা। রাজকোষের এমন দুর্দিনে এই অপচয় চলিতে দেওয়া যায় না। তবে ইহাও সত্য যে জল অপচয় আটকাইতে যথেষ্ট বিনিয়োগের প্রয়োজন। কারণ অনেক জল নষ্ট হইতেছে ভূগর্ভের নীচে। বহু পুরাতন, ঔপনিবেশিক আমলের নালির আজ জীর্ণ দশা, তাহা হইতে পরিস্রুত জল বাহির হইয়া যায়। তদুপরি, বর্জ্যবাহী নালি হইতে দূষিত জল আসিয়া মিশে পানীয় জলের নালিতে। প্রায় প্রতি বৎসর কলিকাতার নানা স্থানে ডায়ারিয়ার প্রকোপ বাড়িয়া যায়, এমনকি মৃত্যুও ঘটিয়াছে। ভূগর্ভস্থ নালির বড় মাপের সংস্কার করিতে বরাদ্দ করিতে হইবে পুর কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকারকে।
শহরবাসীরও কি কিছু করিবার নাই? শহরের রাস্তায় কলহীন নালি হইতে বিরামহীন জল বহিয়া যায়। পল্লিবাসী ভিড় করিয়া জল লইয়া যান, কিন্তু একটি কল লাগাইয়া জলের অপচয় বন্ধ করিবার কথা ভাবেন না। এই বৎসরেরই গোড়ার দিকে কিছু তরুণ-তরুণী রাস্তার ধারে নলগুলি হইতে জল অপচয় বন্ধ করিতে নূতন কল লাগাইয়াছিলেন। সংবাদে প্রকাশ, কেবল এন্টালি, পার্ক সার্কাস আর বেনিয়াপুকুর এলাকাতেই দুইশত কল লাগাইতে হইয়াছে তাঁহাদের। ইহাও এই মহানগরে জল অপচয়ের পরিমাণের ইঙ্গিত বহন করে। তৎসহ বহু বাড়িতে জল জমাইয়া রাখিবার আধার হইতে জল পড়িয়া নষ্ট হয়। পরিবেশ, উষ্ণায়ন প্রভৃতিকে নাগরিক সমাজ কেবল বক্তৃতার বিষয় করিয়া রাখিলে এই শহরের জলের অভাব মিটিবে না। প্রয়োজন সম্মিলিত কর্মোদ্যোগ।
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, নিকাশির জলের পুনর্ব্যবহারের পাশাপাশি পরিস্রুত জলের ঊর্ধ্বসীমা বাঁধিবারও প্রয়োজন রহিয়াছে। সম্প্রতি তাহার প্রয়োগ হইয়াছে নিউ টাউনে। পুর কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুসারে স্থায়ী বাসিন্দারা দৈনিক মাথাপিছু সর্বাধিক ১২০ লিটার পরিস্রুত জল ব্যবহার করিতে পারিবেন, অস্থায়ী বাসিন্দারা ৪০ লিটার। কলিকাতায় এখনও এমন নিয়ম হয় নাই, কিছু এলাকায় জলের মিটার বসিলেও ঊর্ধ্বসীমা কিছু নাই। কিন্ত তাহার প্রয়োজন কি নাই? সরকার বিনামূল্যে জলবণ্টন করিতে পারে, কিন্তু জল এক অমূল্য সম্পদ। সামান্য মূল্য ধার্য করিলে যদি নাগরিক জল সংরক্ষণে এবং জলের পরিমিত ব্যবহারে যত্নশীল হইতে পারেন, তাহা হইলে সেই কাজ করাই কর্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy