জঙ্গল কাটা পড়ছে গ্রেট নিকোবরে, আর তার ক্ষতিপূরণ হিসাবে অরণ্য তৈরি ও সংরক্ষণ হবে হরিয়ানায়! শুনে মনে হবে উদো ও বুধোর গল্প। দু’টি স্থানের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব অন্তত ২৪০০ কিলোমিটার বলেই নয় কেবল, যে দুটো জায়গাকে একই পরিকল্পনার এ পিঠ-ও পিঠ বলে ভাবা হচ্ছে তাদের মধ্যে একটা মিল তো থাকবে— কোথায় গ্রেট নিকোবরের ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি-অরণ্য, আর কোথায় শুকনো আরাবল্লি পাহাড়ের সবুজ! কিন্তু আজকের ভারতে এই সবই হতে চলেছে। গ্রেট নিকোবরে বিমানবন্দর, পাওয়ার প্লান্ট ও টাউনশিপ-সহ বিরাট এক প্রকল্পের বাস্তবায়নে দু’বছর আগেই সায় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক; দেখা যায়, যে জায়গায় এ সব হবে তার ৮০% জমিই ঘন অরণ্যে ঢাকা, কাটতে হবে প্রায় ১০ লক্ষ গাছ। এ সব ক্ষেত্রে ভারতীয় আইন অনুযায়ী একটি ‘নন-ফরেস্ট ল্যান্ড’এ ‘কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন’ বাধ্যতামূলক, তারই জায়গা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে হরিয়ানার পাঁচটি জেলাকে, হরিয়ানা সরকার সেই লক্ষ্যে জমি চিহ্নিত করার কাজও শুরু করেছে।
সরকারি ভাবনা আর বাস্তবের উপযোগিতার মধ্যে প্রায়ই থাকে এক দুস্তর ব্যবধান। এ ক্ষেত্রেও তা ফুটে উঠছে চোখের সামনে। পরিবেশবিদ ও অরণ্য সংরক্ষণ-বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে আসছেন, ‘কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন’ যত গর্জায় তত বর্ষায় না। কেন্দ্র এ ক্ষেত্রে হরিয়ানাকে বেছে নিয়েছে কারণ সারা দেশের মধ্যে এই রাজ্যে অরণ্য-আচ্ছাদন সবচেয়ে কম, সমগ্র আয়তনের মাত্র ৩.৬%; নানা নির্মাণ ও খননকার্যের জেরে গত কয়েক দশকে সেখানে আরাবল্লির অনেক অংশ মুছে যেতে বসেছে। এই অবস্থায় নিকোবরের দাম হরিয়ানায় মেটালে আম ও ছালা দুই-ই হাতে থাকে: নিকোবরের ক্ষতিপূরণও হল, হরিয়ানাও সবুজ পেল! কিন্তু পরিবেশ-বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ক্ষতিপূরণ হিসাবে শুধু গাছ লাগানো বা বন সংরক্ষণই সব নয়। অরণ্য মানে জীববৈচিত্রও— নিকোবরের ভৌগোলিক অবস্থান তাকে যে অনন্য জীববৈচিত্রের ভান্ডার করে তুলেছে, অরণ্য ধ্বংসে তার চিরস্থায়ী ক্ষতি হবে। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের এই ক্ষতি আক্ষরিক অর্থেই অপূরণীয়, হরিয়ানায় সরকারি সদিচ্ছা ও তৎপরতা দিয়েও তার সুবিচার হবে না।
মন্দের ভাল যদি কোনও কিছু হয়, তবে তা হল হরিয়ানার মতো ভৌগোলিক ভাবে ‘ল্যান্ডলকড’ রাজ্যে বনায়ন ও সবুজ সংরক্ষণের জরুরি প্রশ্নটি এই সূত্রে ভেসে ওঠা। এই দিকটিতেও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। আরাবল্লির শুকনো মাটি, কম বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চলে সবুজের ‘সংরক্ষণ’ পরের কথা, তা ‘তৈরি’ করতে গেলেও গোড়ায় দরকার এক সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত ভূমি ও জল সংরক্ষণ প্রকল্প। এ কাজে যথেষ্ট কর্মী, পরিকাঠামো দরকার, এবং তা দীর্ঘমেয়াদে। হরিয়ানা সরকার এই সব কিছু করতে পারবে কি না, পারলেও কতটা, এই প্রশ্নগুলি অমূলক নয়; কারণ রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী ২০০৫-এ হরিয়ানায় যত অরণ্য-আচ্ছাদন ছিল, ২০২১-এও দেখা যাচ্ছে পরিমাণটি একই রয়ে গেছে। নিকোবরের বদলি-প্রকল্পে তাই এখন হরিয়ানার বিস্তর কাজ, দায়িত্বও— মাটির চরিত্রের গুণাগুণ বিচার, উর্বরতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ, জল সংরক্ষণ পরিকাঠামো করতে হবে অবিলম্বে। উন্নয়নের যে দাম নিকোবরকে দিতে হচ্ছে, হরিয়ানা শ্যামল সবুজ হলে অন্তত যদি তার কিছুটা আক্ষেপ মেটে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy