মধ্যরাতের শহরে ট্র্যাফিকবিধি যথাযথ মানা হলেও সুরক্ষা সম্পূর্ণ নিশ্চিত করা যায় কি? কলকাতা শহরে অন্তত সেই নিশ্চয়তা দেওয়ার উপায় নেই। রাত বাড়লেই এই শহরে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি এখন প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সম্প্রতি আলিপুর থানা এলাকায় রাত বারোটা নাগাদ সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছোট পণ্যবাহী গাড়ির পিছনে লরি ধাক্কা দেওয়ায় চালকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার কিছু দিন পূর্বেই জুন মাসের মাঝামাঝি রাত একটা নাগাদ ই এম বাইপাস এবং বেলেঘাটা মেন রোডের সংযোগস্থলে প্রায় একই ভাবে একটি গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য একটি গাড়িকে ধাক্কা দেওয়ায় এক আরোহীর মৃত্যু ঘটে। অভিযোগ, ঘাতক গাড়িটির চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। সুতরাং, গভীর রাতের কলকাতায় সিগন্যাল ভাঙা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতির মতো ঘটনাগুলিকে এখন আর ব্যতিক্রম বলার উপায় নেই। এগুলি নিয়মিতই ঘটে চলছে, এবং যান চলাচলের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নজরদারির অভাবটিকে ক্রমে প্রকট করে তুলছে।
সমস্যা শুধুমাত্র রাতের নয়। দিনের অন্য সময়ের চিত্রটিও কমবেশি একই রকম। অথচ, শহরের পথে নজরদারি করার জন্য দেড় হাজারের অধিক ক্যামেরা রয়েছে। ট্র্যাফিক আইন ভাঙার চিত্র কোথাও ধরা পড়লেই সংশ্লিষ্ট গাড়িটি চিহ্নিত করে তার নম্বর পাঠিয়ে দেওয়া হয় ট্র্যাফিক কম্পিউটার সেলে। ২৪ ঘণ্টা চলে এই নজরদারি। এর সঙ্গে রাস্তায় নেমে নজরদারি চালান কয়েক হাজার পুলিশকর্মী ও আধিকারিক। কোনও গাড়ি ট্র্যাফিক নিয়ম না মানলে জরিমানা-সহ কড়া শাস্তির বিধানও রয়েছে। রাতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাকা তল্লাশি চালিয়ে শ্বাস পরীক্ষার মাধ্যমে চালক মদ্যপ কি না, তা জানার ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কোনও কিছুই বেপরোয়া যান চলাচলের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে না। রাতের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ, ডিউটি করার মতো ট্র্যাফিককর্মীর অভাব। সামনে উৎসবের মরসুম। প্রত্যাশিত, সাধারণ সময়ের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে। সেখানে নিয়ম ভাঙার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে পথ-সুরক্ষা কথাটিই অর্থহীন হয়ে পড়বে না কি?
প্রসঙ্গত, ট্র্যাফিকবিধি ভাঙার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশের উপরমহলের ভূমিকাটিও বড় কম নয়। বহু ক্ষেত্রেই নিয়ম ভাঙলেও উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা যায় না, নানাবিধ ‘অনুরোধ’-এ। ফলে, সামান্য জরিমানার বিনিময়েই অন্যায় বৈধতা পেয়ে যায়। এমনকি অন্যায়কারী ফিরে এসে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীকে হুমকি দিয়েছে, এমন নমুনাও আছে। ট্র্যাফিককর্মীরা নিজেরাও নিয়ম ভাঙতে অভ্যস্ত। রাতে তাঁদের নির্দিষ্ট পোশাকবিধি থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। এই সকল অস্বচ্ছতা অত্যাধুনিক ক্যামেরায় সর্বদা ধরা পড়ে না। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের এক বৈঠকে দুর্ঘটনা কী ভাবে কমানো যায়, প্রাথমিক ভাবে গাফিলতি কোথায়— সেই বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে। উঠে এসেছে দুর্ঘটনা রুখতে কী কী করণীয়, সেই বিষয়টিও। মনে করিয়ে দেওয়া যায়, দুর্ঘটনা ঠেকাতে অস্ত্রশস্ত্র ট্র্যাফিক পুলিশের কিছু কম নেই। দরকার সেগুলির যথাযথ প্রয়োগ এবং সদিচ্ছার। সেই দু’টির অভাব অবশ্য রাতের রাস্তায় ডিউটি করতে চাওয়া ট্র্যাফিককর্মীর চেয়েও প্রকট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy