Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Maternity Leave

অ-নিয়ম

মাতৃত্বকালীন ছুটির আলোচনায় নজরদারির প্রসঙ্গটি অবধারিত ভাবে এসে পড়ে, কারণ গর্ভবতী কর্মীর প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন ভারতীয় কর্মক্ষেত্রে নতুন নয়।

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২২ ০৫:৩০
Share: Save:

আইন আছে। নেই সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ। ‘মেটারনিটি বেনিফিট (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৭’ অনুযায়ী, সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি করে ২৬ সপ্তাহ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রাপ্য ছুটির বিষয়ে বিস্তর টালবাহানার সম্মুখীন হতে হয় মেয়েদের। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। পশ্চিমবঙ্গে যেমন সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবন নির্দেশিকা জারি করে সরকারি সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন খতিয়ে দেখার জন্য ন্যূনতম তিন সদস্যের কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে। এই পদক্ষেপ স্বাগত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রতি এ-হেন গুরুত্ব আরোপের সুফল যেন ক্ষেত্র-নির্বিশেষে সমস্ত মেয়ে পান, শুধুমাত্র সরকারি ক্ষেত্রেই যেন তা সীমাবদ্ধ হয়ে না পড়ে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবে দেখা যায়, বেসরকারি, বিশেষত অসংগঠিত ক্ষেত্রের মেয়েরা এবং ঠিকাকর্মীরা প্রায়শই এই বিষয়ে বৈষম্যের শিকার হন। তাই, নজরদারি একান্ত প্রয়োজন।

মাতৃত্বকালীন ছুটির আলোচনায় নজরদারির প্রসঙ্গটি অবধারিত ভাবে এসে পড়ে, কারণ গর্ভবতী কর্মীর প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন ভারতীয় কর্মক্ষেত্রে নতুন নয়। এখানে গর্ভাবস্থা আজও অসুখের সঙ্গে তুলনীয়। এবং ধরেই নেওয়া হয় গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যজননীরা আগের মতো কর্মক্ষেত্রে যথেষ্ট নৈপুণ্য দেখাতে পারবেন না, বা সময় দিতে পারবেন না। ফলত, উৎপাদনশীলতায় বিঘ্ন ঘটবে। অন্য দিকে, মাতৃত্বকালীন ছুটি সবেতন হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সেই সময় অন্য কর্মী নিয়োগ করা সম্ভব হয় না। এই কারণগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বহু ক্ষেত্রেই মেয়েদের নিয়োগের শর্তগুলি এমন ভাবে বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে ২৬ সপ্তাহের ছুটির দাবিটিই না উঠতে পারে। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে, বহু প্রতিষ্ঠানে গর্ভবতী এবং সদ্যজননীদের কাজের অনুপযুক্ত পরিবেশ, শিশুসন্তানের দেখাশোনার জন্য অতিরিক্ত ছুটি না-মঞ্জুর হওয়া, কর্মক্ষেত্র-সংলগ্ন ক্রেশের বন্দোবস্ত না থাকা— প্রভৃতি অসুবিধাগুলি। আশ্চর্য নয় যে, সন্তানের জন্মের পর ভারতের এক বড় সংখ্যক মহিলা চিরতরে কর্মজীবনে ইতি টানেন। অর্থাৎ, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধির একটি উদ্দেশ্য— কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি করে মহিলাদের যোগদান— অপূর্ণই থেকে যায়।

অন্য উদ্দেশ্যটি, অর্থাৎ সন্তানের যথাযথ লালনপালন করা— স্বল্প দিনের ছুটিতে সেটিও পূর্ণ হয় কি? শিশুর জন্মের পর ছয় মাস মাতৃদুগ্ধ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বহুশ্রুত। কিন্তু যে মেয়েরা ছয় মাসের বহু পূর্বেই কর্মক্ষেত্রে যোগদানে বাধ্য হন, তাঁদের সন্তানরা সেই পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। শুধুমাত্র তা-ই নয়, শিশুর জন্মের প্রথম ছয় মাস মা-বাবার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত জরুরি। বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন-এর কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পিতৃত্বকালীন ছুটিও বৃদ্ধি করার, যাতে সন্তানের বিকাশে মা-বাবা উভয়েই যৌথ ভাবে তাঁদের দায়িত্বটি পালন করতে পারেন। সেইখানে দাঁড়িয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটির আইনটুকুও সর্বত্র যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে না, এই তথ্য উদ্বেগের। এই ছুটি সমস্ত মহিলা কর্মীর আইনি অধিকার। তাই এই সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখে নিয়মভঙ্গকারীদের শাস্তি বিধান আবশ্যক। প্রয়োজনে কমিটি গড়া হোক এই উদ্দেশ্যেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Maternity Leave Pregnant Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy