Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Supreme Court

অভিভাবককে বার্তা

সর্বোচ্চ আদালতের মতে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট আশিসকে জামিন মঞ্জুর করেছিল ‘অবান্তর পর্যবেক্ষণ’-এর ভিত্তিতে।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২২ ০৫:০২
Share: Save:

লখিমপুর খেরি মামলায় প্রধান অভিযুক্ত, মন্ত্রিপুত্র আশিস মিশ্রের অন্তর্বর্তী জামিন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের মতে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট আশিসকে জামিন মঞ্জুর করেছিল ‘অবান্তর পর্যবেক্ষণ’-এর ভিত্তিতে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেছেন, হাই কোর্ট বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে, কিন্তু এই ধরনের মামলায় আগে কী নজির রয়েছে, তা দেখেনি। ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন গ্রাহ্য করা হয়নি, তাঁদের বক্তব্য যথাযথ ভাবে শোনা হয়নি, বক্তব্য জানানোর অধিকার থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে— সার্বিক বিচারে এই জামিনের নির্দেশ বাতিল হওয়ারই যোগ্য। এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্তকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ যা: নতুন করে জামিনের আবেদন বিবেচনার জন্য হাই কোর্টের কাছেই মামলা ফিরিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট, নির্দেশ দিয়েছে ‘সুষ্ঠু, পক্ষপাতহীন, নিরাবেগ’ ভঙ্গিতে পুনর্বিবেচনার।

সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ নিঃসন্দেহে ন্যায্যতা ও সুবিচারের আশার আলো। কিন্তু হাই কোর্টের মতো একটি উচ্চ আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা সমালোচিত হচ্ছে, হাই কোর্টকে সুষ্ঠু পক্ষপাতহীন নিরাসক্ত ভাবে মামলা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিতে হচ্ছে, এ কি দুর্ভাগ্যের নয়? আদালত তথা বিচারব্যবস্থার এগুলি গোড়ার কথা; ‘বিচারের দেবতা অন্ধ’ নামক যে আপ্তবাক্যটি চালু তার নিহিতার্থ: বিচারব্যবস্থা আইন ও ন্যায্যতার প্রতি অন্ধ নয়, কার বিচার হচ্ছে সেই প্রশ্নে অন্ধ। অর্থাৎ তার ‘অন্ধতা’ আসলে সমদর্শিতা। শুধু ভারত বলে নয়, যে কোনও স্থানে যে কোনও সময়ের গণতন্ত্রের মৌলিক শর্ত হল বিচারব্যবস্থার সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীনতা। সে কারণেই দেশের এক সম্মাননীয় হাই কোর্টের বিচারপ্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতার দিকে যখন আঙুল ওঠে, তাড়াহুড়ো করে অভিযুক্তের জামিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত যখন সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারাই সমালোচিত হয়, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। গণতন্ত্রের তিন প্রধান স্তম্ভের প্রথম দু’টি, প্রশাসন ও আইনবিভাগ যখন অভিযুক্তকেই আড়াল করতে চায়, তখন একমাত্র ভরসা বিচারব্যবস্থাই। ভারতীয় বিচারব্যবস্থা সেই দায়বদ্ধতার প্রশ্নে দৃঢ়সঙ্কল্প, লখিমপুর খেরি মামলায় জামিনের আবেদনের পুনর্বিবেচনার নির্দেশই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কিন্তু এও সত্য, সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন স্তরে আদালতের বহু সিদ্ধান্ত ঘিরে মানুষের মনে বারংবার প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিও বাঞ্ছিত নয়, জনপরিসরে বিচারব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা হয়ে ওঠা চাই প্রশ্নাতীত, আদালতের দিকে আঙুল ওঠা সুস্থ গণতন্ত্রের পক্ষে মৌলিক বাধা।

তবু এত কিছুর মধ্যেও আশা আছে। যে হাই কোর্ট সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছে, তার কাছেই সুপ্রিম কোর্টের আবার মামলা ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্যে এই বার্তাটি আছে, এ বার নতুন শুরু— তড়িঘড়ি নয়, ভেবেচিন্তে, প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত হয়ে, নিঃসংশয় নিরপেক্ষতায়। সুপ্রিম কোর্ট অভিযুক্তের দীর্ঘ কাল বন্দি হয়ে থাকা এবং জামিনের অধিকার নিয়েও কথা বলেছে, বলেছে সবার উপরে সংবিধান-স্বীকৃত স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারটি নিশ্চিত করার কথা। আজকের ভারত আদালত ও বিচারব্যবস্থার সমস্ত স্তরে এই সমদর্শী রূপটিই দেখতে চায়। স্বার্থান্বেষী প্রশাসন ও আইনকে রুখে গণতন্ত্রের রক্ষণ ও লালনে সে-ই একমাত্র আশা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy