Advertisement
E-Paper

সুযোগের সন্ধান

মোদী সরকারের বিদেশনীতির পক্ষে এ এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সময়। প্রতি দিন পরীক্ষিত হচ্ছে সেই নীতির প্রায়োগিক ও মৌলিক শর্তগুলি।

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ০৭:০৪
Share
Save

আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট যে তুমুল গতিতে সে দেশের নতুন পথরেখা নির্মাণ করছেন, তার বিচিত্র অভিঘাত এসে পৌঁছচ্ছে পাঁচ সাগর পেরিয়ে ভারতের মাটিতে। মোদী সরকারের বিদেশনীতির পক্ষে এ এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সময়। প্রতি দিন পরীক্ষিত হচ্ছে সেই নীতির প্রায়োগিক ও মৌলিক শর্তগুলি। প্রধানমন্ত্রী বা বিদেশমন্ত্রীর নানা মন্তব্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে তাঁরা সে কাজে ব্যাপৃত আছেন। জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণের পর নরেন্দ্র মোদী ছিলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাওয়া চতুর্থ রাষ্ট্রপ্রধান। সন্দেহ নেই, মোদী-ট্রাম্পের সেই বৈঠকে ভারত মোটেই সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল না। শুল্ক প্রশ্নে ভারতকে ‘ভেরি বিগ অ্যাবিউজ়ার’ হিসাবে বর্ণনা করে ট্রাম্প তাঁর প্রকৃত মনোবাসনা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। বৈঠক-পরবর্তী সময়ে বেআইনি অভিবাসনের ক্ষেত্রেও ভারতের নাক-ঘষা বিস্তর আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানো, কিংবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণী গবেষকের আমেরিকা ছেড়ে সেল্ফ-ডিপোর্টেশন, কোনও কিছুতেই ভারত সরকার বিরূপতা ব্যক্ত করেনি— এ সব ‘ছোট’ ঝামেলায় জড়িয়ে ‘বড়’ স্বার্থের ক্ষতি যাতে না হয়। প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পীয় বিশ্ববীক্ষার সামনে ভারতের সেই ‘বড়’ স্বার্থ সন্ধানে কোনও ফল হবে কি?

ফল যে একেবারেই হবে না, তা বলা যায় না। আগ্রাসী আমেরিকার সামনে নিজেকে ক্ষুদ্রশক্তি হিসাবে দেখানো হয়ে গিয়েছে যখন, আপাতত ভারতকে ভাবতে হবে কতটুকু লাভ এখনও ঘরে তোলা যায়। কূটনীতি এক বিচিত্র বস্তু, তার অবয়ব বহুস্তরীয়। এক স্তরে সুবিধা বিলীন হলেও অন্য কিছু স্তরে ভারতের সুবিধার আশা হয়তো এখনও মিলিয়ে যায়নি। লেক্স ফ্রিডম্যানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছেন, ‘এই শতাব্দী এশিয়ার শতাব্দী’। কথাটি নেহাত বাগাড়ম্বর নয়। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ফলে পশ্চিম-অধিকৃত ও পশ্চিম-বশীভূত অংশটির বাইরে কিছু শূন্যস্থান নতুন করে তৈরি হচ্ছে, যা পূর্ণ করতে ইতিমধ্যেই সক্রিয় অন্যান্যরা, যার মধ্যে সুবৃহৎ এশীয় শক্তিটির নাম অনুমান করতে পারার মধ্যে কোনও পুরস্কার নেই! ভারতকেও সেই বিশ্বখেলায় যোগ দিতে হবে। ঘটনা হল, প্রথম থেকেই কূটনীতি-বিশ্বে ভারত-আমেরিকার একটি মৌলিক সংঘাতের জায়গা থেকে গিয়েছিল। আমেরিকার স্ব-আরোপিত নেতৃত্বের ভূমিকায় ভারত কখনওই প্রীত ছিল না। ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে এই সঙ্কট আরও বাড়তে থাকে, সোভিয়েট-ভারত মিত্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। ক্রমশ ভারত আমেরিকার সঙ্গে এক প্রকার স্বার্থভিত্তিক সমঝোতা করে নিলেও বারংবার দিল্লিকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে আমেরিকা-ইরানের দ্বন্দ্বে, ইজ়রায়েলের প্যালেস্টাইন আক্রমণে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে নেটোর ভূমিকায়। আগে বাম রাজনীতি মহল আমেরিকার এই অতি-সক্রিয়তার বিরোধী ছিল। নিকট অতীতে দক্ষিণপন্থী মহল অধিক বিরক্তি ও প্রতিরোধ তৈরি করেছে— গত কয়েক বছরে আমেরিকা থেকে মোদীর ভারতের দিকে ছুড়ে দেওয়া সমালোচনা দেখলেই যার কারণটি স্পষ্ট হয়। মোট কথা, আপাতত ট্রাম্প-নীতিতে ভারতের বর্তমান শাসকের স্বস্তিবোধের যথেষ্ট কারণ আছে।

গত কয়েক বছরে ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে আমেরিকা-রাশিয়া দুই মহাশক্তির সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য রেখে চলতে ভারতকে বিশেষ বেগ পেতে হয়েছে। ট্রাম্প-পুতিন নৈকট্য নিশ্চয় সে দিক দিয়ে স্বস্তিবাহী। কোয়াড গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও আমেরিকার স্বার্থ সঙ্কোচন ভারতের পক্ষে সহায়ক হতে পারে। চিনের সঙ্গে নতুন দ্বন্দ্বে জড়ানো যাবে না, তবে চিনা কর্তারা যেমন বলছেন, সেই ভাবে ‘পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কূটনৈতিক শরিক’ হওয়া যায় কি না, দিল্লি নিশ্চয় বিবেচনা করবে। ভারসাম্য-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক বিদেশনীতির কথা বলা হয়েছ অনেক বার। এ বার পরীক্ষা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Narendra Modi Donald Trump

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}