ছবি রয়টার্স।
অতি প্রবল শীতেও জ্বলিতেছে কাজ়াখস্তান। এই আগুন রাজনীতির। বৎসরের প্রথম দিন হইতে মধ্য এশিয়ার দেশটির বৃহত্তম শহর আলমাটি আক্ষরিক অর্থেই পুড়িতেছে। অকস্মাৎ পেট্রোপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ নাগরিক রাজপথে নামিয়া একের পর এক প্রশাসনিক ভবনে অগ্নিসংযোগ করিতেছেন। পাল্টা সরকারও কয়েক সহস্র জনতাকে গ্রেফতার করিয়াছে। দুই পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা কম নহে। ঘটনাবলি কিঞ্চিদধিক বিস্ময়াবহ, কেননা দেশটির দীর্ঘকালীন একনায়কতন্ত্রী শাসন এযাবৎ কাল গভীরপ্রোথিত বলিয়াই প্রতীয়মান হইত। কিন্তু লৌহ যবনিকা কিয়দংশে বিস্রস্ত হইতেই বিশ্ব দেখিতেছে যে, ভাঙিয়া পড়িবার বীজ কর্তৃত্বসর্বস্ব ব্যবস্থার ভিতরেই নিহিত ছিল। অনুমান করা চলে, দেশের বিস্তীর্ণ অংশে ইন্টারনেট ব্যবস্থা পুনঃস্থাপিত হইলে গণবিক্ষোভের প্রকৃত মাত্রাটি অনুভূত হইবে, যাহা এক্ষণে পথে-প্রান্তরে ছড়াইয়া পড়িতেছে বলিয়া শুনা গিয়াছে।
কেবল পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে নাগরিক ক্ষোভ যে এতাদৃশ হিংসাত্মক হইতে পারে না, তাহা অনুমান করা চলে। ইহা সত্য যে, তৈল বস্তুটি কাজ়াখস্তানে সামান্য নহে। মধ্য এশীয় রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে এই তৈলভান্ডার সর্ববৃহৎ, উহাই দেশের প্রধানতম সম্পদ— ধনসমৃদ্ধির মূল উৎস। নানাবিধ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এবং দেশের কূটনৈতিক তাৎপর্যের পশ্চাতেও এই সুবিপুল ভান্ডার, দুই প্রতিবেশী রাশিয়া ও চিনের নিকট গুরুত্বের ইহাই কারণ। অতএব, যানবাহনে ব্যবহার্য এলপিজি-র মূল্যের উপর সরকার-নিয়ন্ত্রিত ঊর্ধ্বসীমা উঠিয়া যাইতে যখন তাহার দাম দ্বিগুণ হইয়াছে, তখন জনতার ক্রোধ বাঁধ মানে নাই। কিন্তু, ইহাও হিমশৈলের চূড়ামাত্র। দেশ সমৃদ্ধ হইলেও কাজ়াখ নাগরিকগণ ক্রমশ আর্থিক বৈষম্যের করাল গ্রাসে ডুবিতেছেন, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অভাবে তাহা লইয়া মতপ্রকাশেরও সুযোগ নাই। সুতরাং, তেলের দাম বৃদ্ধি যখন খাদ্যদ্রব্য-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বহু গুণ বাড়াইয়া দিবার আশঙ্কা সৃষ্টি করিয়াছে, এবং তৎসূত্রে বহু নাগরিকের জীবনধারণ প্রশ্নের মুখে পড়িয়াছে, তখন তাঁহাদের ক্ষোভ প্রবলতম হইয়াছে।
চলমান সংঘাতে কাজ়াখস্তানের ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজ়ারবাইয়েভের ভূমিকাটি অতি তাৎপর্যপূর্ণ। সোভিয়েট-পতনের পর হইতে একাদিক্রমে দেশ শাসন করিয়াছেন পূর্বতন কমিউনিস্ট এই নেতা, দুই বৎসর পূর্বে পদত্যাগ করিলেও অনুগত কাসিম-জোমার্ত তোকাইয়েভ-কে পদে বসাইয়াছেন, অতএব অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হইতে মুক্তির আন্দোলনটি বস্তুত রাজনীতি হইতে তাঁহার অপসারণের দাবি। প্রতিবাদ প্রশমিত করিতে শেষাবধি রুশ-নেতৃত্বাধীন ভূতপূর্ব সোভিয়েট প্রজাতন্ত্রসমূহের নিরাপত্তা জোটের শরণাপন্ন হইয়াছেন তোকাইয়েভ, তাঁহার দেশে এখন রুশ ‘শান্তিরক্ষা’ বাহিনীর হেফাজতে। জনতার ক্ষোভ, অতএব, বৃদ্ধিই পাইয়াছে। ঘটনাসমূহ ভারতের পক্ষেও স্বস্তিদায়ক নহে। আলমাটি প্রমাণ করিয়াছে, অর্থনীতির স্বার্থে কাজ়াখস্তানের চিন, আমেরিকা বা অপর যে দেশের সহিতই মৈত্রী হউক, আসল চাবিকাঠি এখনও ক্রেমলিনেই। মধ্য এশিয়ায় নয়াদিল্লির দাবি স্বল্প নহে— কাবুলের পর এই বার আলমাটিতে অস্থিরতা তাহার পক্ষে সুসংবাদ হইতে পারে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy