বাড়ছে বেকারত্বের পরিমাণ।
সম্প্রতি এক বক্তৃতায় কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে চা-বিস্কুট-ঘুগনি-তেলেভাজার ব্যবসার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রথম নয়, অতীতেও তিনি তেলেভাজার ব্যবসার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের কথা বলেছিলেন। স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন যে, কোনও কাজই ছোট নয়— কেউ মুখ্যমন্ত্রী-উল্লিখিত ব্যবসাগুলি করলে তিনি নিশ্চিত ভাবেই সম্মানের যোগ্য। কিন্তু, রাজ্যে যে কর্মসংস্থানের সুযোগ তলানিতে, তা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেই স্পষ্ট। এর মূলে পশ্চিমবঙ্গে বড় শিল্পের অনুপস্থিতি। কোনও অঞ্চলে বড় শিল্প গড়ে উঠলে পাশাপাশি তার একগুচ্ছ অনুসারী শিল্পও তৈরি হয়। সেখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে ওঠে, ফলত মানুষের ব্যয়ক্ষমতা বাড়ে। এতে অঞ্চলের বাজার অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগে। ব্যবসা-বাণিজ্যও প্রসারিত হয়। কিন্তু শিল্পবিমুখ পশ্চিমবঙ্গে বড় শিল্প গড়ে ওঠার সুযোগ না থাকায় ক্রমশ বাড়ছে বেকারত্বের পরিমাণ।
রাজ্যে শিল্পের এমন করুণ দশা হল কী করে? এর জন্য দায়ী নানাবিধ কারণ। পঞ্চাশের দশক থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের মাসুল সমীকরণ নীতির ফলে প্রাথমিক ভাবে ধাক্কা খায় এ রাজ্যের শিল্প। পরে যে সব রাজ্য শিল্পে উন্নতি করেছে, তাদের সকলেই পরিকাঠামোর উপরে জোর দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ তা করেনি। এই সবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বামপন্থীদের আত্মঘাতী শিল্পবিরোধী আন্দোলন নীতি। বন্ধ, হরতাল, ঘেরাওয়ের ফলে শিল্প এ রাজ্যে গড়ে উঠতে পারেনি। শাসনকালের শেষের দিকে তাঁরা রাজ্যে বড় শিল্প নিয়ে আসার চেষ্টা করলেও, তাঁদেরই পুরনো মানসিকতাকে আঁকড়ে জমির প্রশ্ন তুলে তৎকালীন বিরোধী তথা বর্তমান শাসক দল সেই উদ্যোগে জল ঢেলে দেয়। শিল্পবিমুখতার সেই ঐতিহ্য এখনও বর্তমান। জমি জটের সঙ্গে এখন রয়েছে সিন্ডিকেটের উপদ্রবও। ফলে রাজ্য সরকার শিল্প আনার প্রচেষ্টায় ঘটা করে বার্ষিক ‘শিল্প সম্মেলন’-এর আয়োজন করলেও পশ্চিমবঙ্গে শিল্প দুয়োরানি হয়েই থেকে গিয়েছে। কয়েক মাস আগে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ও প্রকল্প রূপায়ণ মন্ত্রকের বার্ষিক শিল্প সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির তুলনায় কলকারখানা তৈরিতে এখনও পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী-র মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিতে সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উপকার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর মাধ্যমে রাজ্যে সুস্থায়ী অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বরং এ-হেন অনুদানভিত্তিক প্রকল্প রাজকোষের ঘাটতি আরও বৃদ্ধি করে। অনুদানে জীবন চলে না, তা মুখ্যমন্ত্রীও বিলক্ষণ জানেন। পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে সুপথে আনার জন্য চাই উপযুক্ত কর্মসংস্থান, যা একমাত্র সম্ভব শিল্পোন্নতির সাহায্যে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী চার-পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গ কর্মসংস্থানে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করবে। স্বপ্ন দেখা ভাল। কিন্তু তার জন্য শুধু শিল্প সম্মেলন বা ‘এগিয়ে বাংলা’র মতো কর্মসূচি পালনই যথেষ্ট নয়। রাজ্যে প্রকৃত শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরিকাঠামো-সহ যে অন্তরায়গুলি এত দিন পরিলক্ষিত হয়েছে, তা সমাধানের ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। না হলে কর্মহীনতার অন্ধকারে ডুববে রাজ্য। সরকারি অনুদানই হবে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy