সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে জারি করা হয়েছিল আধার সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা। সেখানে জনসাধারণকে কোনও প্রতিষ্ঠানে আধারের প্রতিলিপি ব্যবহার করতে বারণ করা হয়েছিল জালিয়াতি ও প্রতারণার সম্ভাবনা রুখতে। পরিবর্তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মাস্কড আধার সুবিধা ব্যবহার করার, যেটিতে সংশ্লিষ্ট আধারের শেষ চারটি নম্বর থাকে। এই বিবৃতি নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হওয়ায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রত্যাহার করে নেয় আধারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই)। সঙ্গে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, কোনও প্রতিষ্ঠানে আধার প্রতিলিপি চাইলে তা দেওয়ার আগে সতর্ক থাকতে। উক্তিটি ইঙ্গিতবহ। কারণ এর পরে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকে যায়, তা হলে কি সরকার পরোক্ষে স্বীকার করে নিল না যে, আধারের তথ্য সুরক্ষিত নয়?
এই ধরনের পরস্পরবিরোধী বিবৃতির কারণে মানুষের মধ্যে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে, তার নিরসন করার দায়িত্ব বর্তায় সরকারের উপরেই। এটা সত্যিই যে, আধার সংক্রান্ত অনেক কিছুই এখনও জনসাধারণের অজানা। যেমন, ইউআইডিএআই-তে নাগরিকদের যে তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে, তা কতখানি নিরাপদ, এই তথ্য নিরাপদ রাখতে কী পদক্ষেপ করেছে ওই সংস্থা, কত দিন অন্তর এই নিরাপত্তা প্রক্রিয়াগুলি পরীক্ষা করা হয়, কোন কোন প্রতিষ্ঠানের আইনসম্মত অধিকার রয়েছে মানুষের কাছ থেকে আধার কার্ড চাওয়ার। ভারতে আজ এই কার্ডের ব্যাপ্তি প্রায় সর্বত্র। যদিও পরিচয়জ্ঞাপনের ক্ষেত্রে খাতায়-কলমে আধার কার্ড দেখানো বাধ্যতামূলক নয়। মূলত সরকারি বৃত্তি বা জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত হলেও, এখন কোনও গ্রাহকের ‘নো ইয়োর কাস্টমার’ বা কেওয়াইসি-র বিস্তারিত তথ্য জানার ক্ষেত্রে এই কার্ড ব্যবহারের অধিকার দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্ক এবং টেলিকম সংস্থাগুলিকে। কিন্তু পরিস্থিতি বহু দিন ধরেই এমন দাঁড়িয়েছে যে, পুরসভা থেকে স্কুল-কলেজ, হোটেল, সর্বত্রই পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র হিসেবে আধার চাওয়া হয়। যদিও সব জায়গায় আধার কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিন্তু সুরক্ষার আশ্বাস সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা সংক্রান্ত কোনও আইনের অভাবের কারণে তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার উদ্বেগ আরও বেড়েছে মানুষের মধ্যে। কারণ, বিভিন্ন সময়েই আধার কার্ডের তথ্য ফাঁস হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এক বার ২০০-রও বেশি সরকারি ওয়েবসাইটে নাগরিকদের আধার নম্বর-সহ নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য তথ্য প্রকাশিত হয়ে যায়। দুষ্কৃতীরাও এই তথ্য ব্যবহার করে প্রতারণা করতে পারছে।
ফলে আধার কার্ডের তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের কাছে গলার কাঁটা। প্রয়োজন ছিল প্রথম থেকেই আরও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া। অনলাইন ব্যাঙ্কিং বা আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রে যেমন ওটিপি প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়, তেমনই কোনও সহজ পদ্ধতি চালু করলে কোনও ব্যক্তির তাৎক্ষণিক যাচাইকরণ করা যেতে পারে কার্ডের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ভয় ছাড়াই। দুর্নীতি রোধে এবং জনসাধারণের সুবিধার্থে জন্মতারিখ, পরিচয় এবং ঠিকানা যাচাই-এর উদ্দেশ্যে আধার কার্ড প্রক্রিয়াটির প্রণয়ন যখন সরকারই করেছে, তখন এর সুরক্ষার দায়িত্বও তাকেই নিতে হবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy