Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Central Government

ভাতে মারার কৌশল

রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকার কেরল সরকারের ঋণ করার অনুমোদিত সীমা প্রায় অর্ধেক করে দিল।

An image of Narendra Modi

২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদী সরকার। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩ ০৫:৫৯
Share: Save:

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঘনাল কেরলে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকার কেরল সরকারের ঋণ করার অনুমোদিত সীমা প্রায় অর্ধেক করে দিল। কেন বত্রিশ হাজার কোটি টাকা অবধি ঋণের সীমাকে নামিয়ে আনা হল পনেরো হাজার কোটি টাকায়, তার কারণও কেন্দ্র দেখায়নি। সেই সঙ্গে, রাজস্বে ঘাটতির জন্য যে অর্থ (রেভেনিউ ডেফিসিট গ্রান্ট) কেন্দ্রের সঞ্চিত তহবিল (কনসোলিডেটেড ফান্ড) থেকে পাওয়ার কথা কেরল সরকারের, তা থেকেও কাটা গিয়েছে ৬৭০০ কোটি টাকা। একে কার্যত কেরলের উপর ‘আর্থিক নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করার সমান বলে দাবি করেছে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সরকার। কোনও সরকার তার নিজের দেশ, বা অপর দেশের নাগরিকের প্রতি অতিশয় নিন্দনীয়, নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ করলে তবেই অন্যান্য দেশ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ হল তিরস্কার ও শাস্তিদানের একটি পদ্ধতি। কেন্দ্রের আর্থিক বরাদ্দ কাটছাঁটের সঙ্গে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার তুলনা টেনে কেরল সরকার ইঙ্গিত দিতে চায় যে, আজ বিজেপি সরকারের চোখে বিরোধী হওয়াই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ়্যাক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনেছেন। তাঁর মতে, কেন্দ্র কখনও তার নিজের ঋণের সীমার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের গৃহীত ঋণকে অন্তর্ভুক্ত করে না। অথচ, কেরলের ক্ষেত্রে তা-ই করা হচ্ছে। এর ফলে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা কেরলের জিডিপি-র মাত্র দুই শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, যা রাজ্যের উন্নয়নকে ব্যাহত করবে। কেন্দ্র ও রাজ্যের জন্য পৃথক মাপকাঠি ধার্য করে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নীতি যথেচ্ছ নস্যাৎ করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার, এই অভিযোগও উঠেছে।

পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের কাছে এ অভিযোগ অতি পরিচিত। এ রাজ্যেও আবাস যোজনা, বা একশো দিনের কাজের প্রকল্প সম্পূর্ণ স্থগিত করেছে কেন্দ্র, পানীয় জলের প্রকল্প বন্ধ ছিল দীর্ঘ সময়, এবং প্রতি বারই কেন্দ্র রাজ্য সরকারের অপচয় ও দুর্নীতির দিকেই আঙুল তুলেছে। ভারতের কোনও রাজ্যেই ক্ষমতাসীন সরকার সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত, ইদানীং এমন দাবি করা কঠিন। দুর্নীতি বা অপচয় নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই কেন্দ্রের কর্তব্য। কিন্তু রাজ্যের যথেচ্ছ ব্যয়ে কেন্দ্রের লাগাম টানার পদ্ধতি কেমন হওয়া দরকার, ভারতের প্রশাসনে তার রূপরেখা ও সৎ দৃষ্টান্ত কি যথেষ্ট নেই? কোনও রাজ্যের সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই তার বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার মতো হঠকারী পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশাসনে কখনও মান্যতা পেতে পারে না।

২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদী সরকার ‘সকলের বিকাশ’ স্লোগানের সঙ্গে জুড়েছিল ‘সকলের বিশ্বাস।’ কিন্তু এখনও অবধি বিরোধীদের উপর তাঁর আস্থার নিদর্শন দেখা গেল না। আর্থিক শৃঙ্খলার বিধি মানা অবশ্যই জরুরি। কেরল বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক ঋণগ্রস্ত পাঁচটি রাজ্যের একটি, তা উদ্বেগের কারণ। কিন্তু এই পরিস্থিতির পুরো দায় রাজ্য সরকারের আর্থিক উচ্ছৃঙ্খলতার উপর চাপানো চলে না। পর পর কয়েকটি বিধ্বংসী বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছিল কেরল, নিপা এবং করোনা ভাইরাসের প্রকোপেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজস্ব কমেছে, ত্রাণ এবং পরিকাঠামো পুনর্গঠনে খরচ বেড়েছে। তা সত্ত্বেও সড়ক, পরিবহণ প্রভৃতি পরিকাঠামো নির্মাণ স্থগিত করেনি কেরল সরকার। পেনশন প্রভৃতি সহায়তা প্রকল্প চালু রেখেছে। কেরলে দারিদ্রসীমার নীচে রয়েছেন মাত্র এক শতাংশ। অর্থের অভাবে কেরল, বা যে কোনও রাজ্য যদি পরিকাঠামো নির্মাণ অথবা উন্নয়নের প্রকল্পগুলি স্থগিত রাখতে, কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়, দীর্ঘমেয়াদে তার ফল কী হবে, তা কি কেন্দ্র চিন্তা করেছে? আর্থিক শৃঙ্খলার যুক্তি কার্যত বিরোধী দলগুলিকে ‘ভাতে মারা’-র কৌশল হয়ে উঠছে কি না, সে উদ্বেগ আরও গাঢ় হয়ে উঠছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy