আরও একটি প্রতিবাদ আন্দোলন হয়ে চলেছে, নাগরিক সমাজের এক প্রকার অগোচরেই। এই আন্দোলন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ-শিক্ষকদের সংগঠনগুলির সর্বভারতীয় সংস্থা অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ টিচার্স অগার্নাইজ়েশনস-এর (এআইএফইউসিটিও) সদস্য শিক্ষকদের— ইউজিসি-র নানা পদক্ষেপ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষানীতির বিরোধিতায়। সর্বভারতীয় পর্যায়ের বলেই হয়তো তা খুব স্থানিক ভাবে দৃশ্যমান নয়, উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায় জুনিয়র ডাক্তারদের সাম্প্রতিক আন্দোলন ঘিরে মনোযোগ সঙ্গত কারণেই অনেক বেশি। কিন্তু এই শিক্ষক সংগঠনের প্রতিবাদও চলছে নানা ভাবে: কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে অনুযোগ-অভিযোগ জানানো, শিক্ষক দিবসে কালো ব্যাজ পরে প্রতীকী প্রতিবাদ থেকে নিজ নিজ ইউনিটে বিক্ষোভ প্রদর্শন— এই সবই হয়ে গিয়েছে এর মধ্যেই, আগামী ৪ অক্টোবর প্রতিবাদ হবে রাজ্যস্তরে।
শিক্ষকদের অভিযোগগুলি বহুবিধ এবং গুরুতর। জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনায় কেন্দ্র উৎসাহী নয়, বরং ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমস’কে এই সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার বিপ্রতীপে তুলে ধরে তাকেই জোর-জবরদস্তি করে প্রতিষ্ঠায় তার যাবতীয় উৎসাহ, এবং উচ্চশিক্ষার পরিসরে তার প্রয়োগযন্ত্র হয়ে উঠেছে ইউজিসি— এটি শিক্ষকদের বড় অভিযোগ। আইআইটি-সহ বহু কেন্দ্রীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক কালে দেখা গিয়েছে এর নানা নমুনা: এমন সব বিষয় ঘিরে আলোচনা, পরীক্ষানিরীক্ষা এমনকি গবেষণাও, যা আগাগোড়া বাস্তববিমুখ। শিক্ষকদের অভিযোগ, বারংবার সময় চাওয়া ও আলোচনার অনুরোধ সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী বা ইউজিসি-র প্রধান, কারও তরফে কোনও উত্তর মেলেনি— শিক্ষানীতি প্রত্যাহারের দাবিকে আমল দেওয়া তো দূরস্থান। নিট-এর মতো পরীক্ষা ঘিরে অতি সম্প্রতি ব্যাপক দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারি প্রকট হল, শিক্ষক সংগঠন প্রতিবাদ করে বলেছে এর গলদ লুকিয়ে আছে রাজ্যগুলির তোয়াক্কা না করে এ ধরনের পরীক্ষার উপর কেন্দ্রের একচেটিয়া দখলদারিতে: এ কি প্রকারান্তরে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোরই অপমান নয়?
শুধু শিক্ষার দর্শনের অসঙ্গতি বা পরীক্ষা-পদ্ধতির অব্যবস্থাই নয়, সমস্যা ছড়িয়ে আছে শিক্ষকদের বেতন, পদোন্নতি, অবসরের সুনির্দিষ্ট বয়সসীমা, পেনশন-সহ নানা ক্ষেত্র ঘিরে। ইউজিসির দু’বছর আগের গবেষণা সংক্রান্ত নির্দেশিকার বেশ কিছু অংশ নিয়ে তর্কবিতর্ক আজও অব্যাহত— বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের যোগ্য শিক্ষকেরা কেন রিসার্চ সুপারভাইজ়র হতে পারবেন না, অবসরের সময় এগিয়ে আসা অধ্যাপকদের রিসার্চ সুপারভাইজ়র হওয়ার উপরে কেন এত বিধিনিষেধের ছড়াছড়ি, এমনই অনেক প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। দেশ জুড়ে কলেজগুলি এমন এক জটিল ও বহুস্তর শিক্ষক-কাঠামোয় চলছে যেখানে আংশিক সময়ের বা অতিথি অধ্যাপকেরা অদ্যাবধি এক অদৃশ্য ও অঘোষিত বিভাজনের শিকার। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষার প্রশ্নটি এই মুহূর্তে বহুল আলোচিত, একই প্রশ্ন ওঠা দরকার শিক্ষকদের কাজের পরিবেশ এমনকি নিরাপত্তা নিয়েও। শিক্ষক সংগঠন এই সব কিছু নিয়েই সরব, কিন্তু শুনছে কে। বৃহত্তর সমাজের অবিলম্বে পাশে দাঁড়ানো দরকার, তবেই কেন্দ্রের টনক নড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy