প্রতীকী ছবি।
ফৌজদারি মামলা করিয়া বাক্স্বাধীনতায় লাগাম পরানো চলিবে না, তাহা ফের মনে করাইতে হইল সুপ্রিম কোর্টকে। মেঘালয়ের এক সংবাদপত্রের সম্পাদক প্যাট্রিসিয়া মুখিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ খারিজ করিয়া শীর্ষ আদালত বলিয়াছে, আপন মত প্রকাশের অধিকার সংবিধান দিয়াছে সকল নাগরিককে। আদালতকে ধন্যবাদ জানাইয়া প্রশ্ন করিতে হয়, কেন এই মৌলিক কথাটির পুনরাবৃত্তি করিতে হইতেছে? স্বাধীনতার সাত দশক পার করিয়াছে ভারত, তাহারও বহু পূর্বে সংবাদমাধ্যমে সত্য প্রকাশের সংগ্রাম শুরু হইয়াছে এ দেশে। যখন বিদেশি শাসকের রক্তচক্ষু স্পষ্টবক্তাকে নিবৃত্ত করিবার চেষ্টা করিয়াছে, সংবাদপত্র তখনও ক্ষমতাসীনকে যারপরনাই বিব্রত করিতে ছাড়ে নাই। ঔপনিবেশিক আইনের নিষ্ঠুরতার সম্মুখেও সাংবাদিক কলম লুকায় নাই। আজ কোনও সম্পাদক সরকারকে তাহার কর্তব্য স্মরণ করাইলে তাঁহাকে কারাগারে নিক্ষেপ করিবার আয়োজন শুরু হইতেছে, ইহা অপেক্ষা লজ্জাজনক কী হইতে পারে?
সম্প্রতি শিলঙে জনজাতির যুবকদের দ্বারা ভয়ানক ভাবে প্রহৃত হন অপর সম্প্রদায়ের কিছু কিশোর। কেন মুখ্যমন্ত্রী ওই কিশোরদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হইতেছেন, সেই প্রশ্ন সমাজমাধ্যমে তুলিয়াছিলেন প্যাট্রিসিয়া। যাঁহারা জনজাতিভুক্ত নহেন, তাঁহারাও মেঘালয়েরই নাগরিক— সেই কথা মনে করাইয়াছিলেন। তাঁহার এই সমালোচনাকে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরির প্রচেষ্টা বলিয়া দাবি করিয়া পুলিশে নালিশ করিয়াছিল এক জনজাতি সংগঠন। সাংবাদিকের ওই সতর্কবার্তার জেরে কোনও জনজাতির সহিত অন্যদের অশান্তি হইতে পারে, এই আশঙ্কাকে সুপ্রিম কোর্ট ‘কল্পনা’ বলিয়া উড়াইয়া দিয়াছে। আমেরিকার পূর্বতন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের এই বাক্যটি উদ্ধৃত করিয়াছেন বিচারপতিরা, “সার্বিক বাক্স্বাধীনতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হইবে, যাহাতে সত্য প্রকাশ পায় এবং নাগরিক সমাজ গঠিত হয়।”
ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের জন্য মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে আদালতে দাঁড়াইতে হইয়াছিল। আজ হইতে ৯৯ বৎসর পূর্বে গাঁধী ইংরেজ বিচারপতিকে বলিয়াছিলেন, “সরকারের প্রতি আনুগত্য আইন দিয়া তৈরি অথবা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নহে। কাহারও যদি কোনও ব্যক্তি বা ব্যবস্থার উপর আনুগত্য না জন্মাইয়া থাকে, সেই আনুগত্যহীনতা পূর্ণ মাত্রায় প্রকাশ করিবার স্বাধীনতা তাহার থাকা উচিত, যদি না সে হিংসায় প্রবৃত্ত হইতে চাহে।” আক্ষেপ, সেই গাঁধীর দেশে আজও সরকারের দুষ্কর্ম, ভ্রান্তি বা ব্যর্থতার সমালোচনা করিলে নানা অজুহাতে হিংসার খাঁড়া নামাইয়া আনে রাষ্ট্র। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের, সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াইবার, নিদেনপক্ষে মানহানির মামলা প্রায় দৈনন্দিন ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইহাতে সাংবাদিকের ঝুঁকি এবং হয়রানি বাড়িতেছে। বস্তুত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলায় জিতিবার চাহিতেও, প্রতিবাদীকে মামলায় ফাঁসাইয়া তাঁহার অর্থ, সময়, সুনাম ও কার্যক্ষমতা নষ্ট করাই অভিযোগকারীর প্রধান উদ্দেশ্য হইয়া উঠে। আশঙ্কা এই যে, প্রতিবাদের প্রতি অসহিষ্ণুতার এই বিষবৃক্ষ রাজনৈতিক দলগুলি লালন করিয়াছে, কিন্তু আজ তাহা ডালপালা মেলিতেছে সমাজের সর্বত্র। আদালত সেই কথা স্মরণ করাইয়াছে, কিন্তু সমাজের সচেতনতা প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy