Advertisement
E-Paper

অমৃতকুম্ভের সন্ধানে

চার্চিলের বক্তৃতাকে যেমন সাহিত্য হিসাবে গণ্য করেছিল নোবেল কমিটি, সাম্প্রতিক কালে সঙ্গীতকার হিসাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বব ডিলান।

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২২ ০৫:০৪
Share
Save

একটা গোটা বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পরও স্যর উইনস্টন লেনার্ড স্পেন্সার চার্চিল ১৯৫৩ সালে তাঁর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার নিয়ে এতটাই বিব্রত বোধ করেছিলেন যে, পুরস্কার নিতে স্টকহোমেও যাননি। সে বছরের ১০ মে, বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় সুইডেনে গিয়ে পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলেন তাঁর স্ত্রী ও কন্যা। চার্চিল তখন বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইজ়েনহাওয়ারের সঙ্গে বারমুডা দ্বীপে শীর্ষবৈঠকে। ওই সময়ে তিনি ইংল্যান্ডের রাজনীতির বিরোধী দলের নেতা। হিটলারের মারণযজ্ঞের হাত থেকে তিনি ইহুদিদের বাঁচাতে তাঁদের ইজ়রায়েল নামে নতুন একটি দেশদানের শরিক, সাহিত্যের থেকে বিশ্বে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা তাঁর কাছে অনেক বড় দাবি। চার্চিল শুধু মহাযুদ্ধের ইতিহাস আর স্মৃতিকথা লেখার জন্য সম্মানিত হননি, তাঁর জ্বালাময়ী বক্তৃতার কথাও নোবেল কমিটি শংসাপত্রে উল্লিখিত হয়েছিল। “তিনি শুধু ইতিহাস আর জীবনকাহিনিই চমৎকার ভাবে তুলে ধরেন না, তাঁর বক্তৃতাগুলিও মানবিক মূল্যবোধের উজ্জ্বল প্রকাশ।” মহাযুদ্ধের প্রখর দুপুরে, ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন ‘বিফোর দ্য অটাম লিভস ফল’ নামে এক সুদীর্ঘ বক্তৃতায় জার্মান ইউ-বোটের আক্রমণ প্রতিহত করা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আত্মবিশ্বাস, নাৎসি জার্মানি ও তার লেজুড় ইটালিকে নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন, যার সারার্থ, হেমন্তকাল শুরুর আগেই শত্রুদের পরাস্ত করতে হবে। বাঙালি কবির মতো ওই ইংরেজ রাষ্ট্রনায়ক ও কুশলী সেনাপতি হেমন্তে ঝরাপাতারও খেয়াল রেখেছিলেন। বক্তৃতায় জার্মানি, জাপান, ইটালির হিংস্র আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, এবং শেষে বলেন, “আমাদের বিজয়ী অস্ত্রগুলিকেও আমরা ওদের মতো অমানুষিকতা বা হিংস্র প্রতিশোধস্পৃহায় ব্যবহার করব না।” ওই সময়ে জার্মানিতে হিটলারও জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতেন। তবে তাঁর বক্তৃতায় গাছের পাতা ঝরার কথা থাকত না, থাকত জাতিবৈরিতার ভয়াল হুঙ্কার।

চার্চিলের বক্তৃতাকে যেমন সাহিত্য হিসাবে গণ্য করেছিল নোবেল কমিটি, সাম্প্রতিক কালে সঙ্গীতকার হিসাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বব ডিলানও। ‘টাম্বুরিন ম্যান’-এর স্রষ্টা ও চার্চিল দু’জন সময়ে-ধর্মে-কর্মে-দর্শনে বহু দূরের মানুষ, কিন্তু দু’টি ক্ষেত্রেই সাহিত্য শব্দটির সীমা সম্প্রসারিত হয়েছে সঙ্গত ভাবেই। চার্চিল বিশ্বশান্তির জন্য নোবেলপ্রাপ্তির স্বপ্ন দেখতেন, পেলেন ভিন্ন কারণে। তাঁর স্ত্রী লেডি ক্লেমেন্টাইন সেই সন্ধ্যায় স্বামীর পুরস্কার গ্রহণের যে লিখিত চিঠিটি পাঠ করেছিলেন, তারও ছত্রে ছত্রে নাকের বদলে নরুনপ্রাপ্তির সংশয়। এডওয়ার্ড গিবন এবং মেকলে, অ্যাডাম স্মিথের তন্নিষ্ঠ পাঠক উইনস্টন চার্চিল সভ্যতা, বিশ্বসাহিত্য এবং প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিচারশক্তিতে আস্থাবান বলেই মন্তব্য করেছেন, “আমাকে দেওয়া এই সম্মাননার প্রাপকরা বিশ্বসাহিত্যে অনন্য। সেখানে আমার অন্তর্ভুক্তিতে আমি গর্বিত, কিন্তু আশঙ্কিতও।” পূর্বপুরুষদের ইতিকথা, ইংরেজিভাষী জনগোষ্ঠীর কাহিনি, দু’টি মহাযুদ্ধের ইতিহাস ইত্যাদি ৪৩টি সুলিখিত বই লিখেও তিনি পুরস্কারজয়ী লেখক হিসাবে পরিচিত হতে কুণ্ঠিত ছিলেন।

তরুণ বয়সে লাউরানিয়া নামে এক কাল্পনিক দেশে বিদ্রোহের কাহিনি নিয়ে সাভ্রোলা নামে এক উপন্যাস লিখেছিলেন চার্চিল। সে দেশে অত্যাচারী শাসক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, সাভ্রোলা নামে এক প্রতিবাদী নেতার নেতৃত্বে গুপ্তসমিতি গঠন ছিল সেই রচনার বিষয়। বিদ্রোহ, রাজনৈতিক চক্রান্ত, প্রেম— সব মিলিয়ে কল্পকাহিনিতে ওই তাঁর প্রথম ও শেষ পদক্ষেপ। কিন্তু সে দিন নোবেল কমিটি বা চার্চিল, কোনও পক্ষ থেকেই ওই উপন্যাসের কথা উচ্চারিত হয়নি। তৎকালীন লেখক-রাজনীতিবিদদের অভিজ্ঞান হয়তো সাহিত্যের এই পরিমিতিবোধে। ভারতীয় উপনিবেশে চার্চিলের সমসাময়িক জওহরলাল নেহরুও অতি সুলেখক। সমালোচকরা বলেছেন বার্ট্রান্ড রাসেল ও নেহরুই ইংরেজি ভাষায় সর্ব কালের দুই শীর্ষ লেখক। বলেছেন, নেহরু যদি রাজনীতিক না হতেন, কেবল তাঁর অটোবায়োগ্রাফি বইটির জন্য তিনি একই রকম বিশ্বখ্যাতি অর্জন করতেন। ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া-ও গ্রন্থ হিসাবে যুগজয়ী। মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনীটিও তা-ই: আলোকবর্তিকা-সমান। দুই জনের রচনাই প্রায় শত খণ্ডে সঙ্কলিত। তবে খণ্ডের সংখ্যায় নয়, রাজনৈতিক ভারে নয়— তাঁদের লেখা মূল্যবান সাহিত্য হয়েছে তাঁদের জীবনদর্শনের গভীর ছটায়, ভাষার শৈলী আর সৌন্দর্যসুষমার উৎকর্ষে।

Winston Churchill Nobel Prize

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।