রক্তের আকাল।
অন্তত পঞ্চাশ ইউনিট রক্ত ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য সংগ্রহ করে দিলে তবেই মিলবে দুর্গাপুজোর সরকারি অনুদান, এমন একটি শর্ত কি ঘোষণা করতে পারত না রাজ্য সরকার? পুজোর পর পরই ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত হবে, এক সঙ্গে অনেক আক্রান্তের রক্তের প্রয়োজন হওয়ায় তীব্র অভাব দেখা দেবে, এ বিষয়ে বহু আগেই সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। নাগরিক সমাজ থেকে বার বার প্রস্তাব এসেছিল, পুজোমণ্ডপগুলিতে রক্তদানের ব্যবস্থা করা হোক, অথবা পুজোর আগেই রক্তদান শিবির করুক পাড়ার ক্লাবগুলি। অথচ, এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র উৎসাহ দেখায়নি স্বাস্থ্য দফতর, অথবা পুজোর উদ্যোক্তারা। পাড়ার ক্লাব-সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক নাগরিক সংগঠনগুলি বহু দিন ধরেই নানা রাজনৈতিক দলের ‘শাখা সংগঠন’-এ পরিণত হয়েছে। তাই তাদের স্বাধীন, স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ চোখেই পড়ে না। নির্বাচন, পুজো, দল-অনুপ্রেরিত মেলা-খেলা থেকে ফুরসত মিললে তবে না সমাজের কাজ! এখন সেই নিষ্ঠুর স্বার্থোন্মত্ততার বিষময় ফল ফলছে। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের আকালের সুযোগে অবৈধ বিক্রেতারা রক্তের চড়া দাম হাঁকছে। এক ইউনিট রক্তের জন্য কুড়ি হাজার টাকাও দাবি করা হচ্ছে। এই পশ্চিমবঙ্গই এক দিন রক্তদান আন্দোলনে ছিল ভারতে দৃষ্টান্ত— রক্তদান শিবির বাংলার নাগরিক সমাজের একটি অভিজ্ঞান হয়ে দেখা দিয়েছিল। সেই ঐতিহ্য বাঙালি ভুলেছে।
প্রশ্নটি আসলে সুপ্রশাসনের। ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত সরবরাহ একটি আপৎকালীন পরিষেবা, সে বিষয়ে কোনও সংশয়ের অবকাশ নেই। অথচ এখনও সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক সন্ধ্যা ছ’টার পর রক্ত সংগ্রহ করতে নারাজ, কর্মীর অভাবে। কেন এমন জরুরি পরিষেবায় যথেষ্ট কর্মী নিয়োগ করবে না স্বাস্থ্য দফতর? সর্বোপরি, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক কেন প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহের দায়িত্ব না নিয়ে রক্ত জোগানের দায় চাপাবে রোগীর আত্মীয়-পরিজনের উপরে? কোনও উন্নত, সভ্য দেশে কি এমন দেখা যায় যে, মরণাপন্ন রোগীর আত্মীয় অস্থির হয়ে রক্তের সন্ধানে ছুটছেন? সেই চরম সঙ্কটের সময়ে আবার রোগীর আত্মীয়দের উপরে কঠিন শর্ত চাপাচ্ছে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি— এত জন রক্তদাতা জোগাড় করে আনতে হবে, অথবা, অমুক গ্রুপের রক্তদাতা জোগাড় করে আনতে হবে। যে সরকারি কর্তারা এমন ব্যবস্থাটি কায়েম করে রেখেছেন, তাঁদের প্রতি প্রশ্ন— তা হলে কি ধরে নিতে হবে যে, আত্মীয়-বন্ধুহীন রোগী রক্তের অভাবে মারা যাবেন? কলকাতা এবং জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে বহু রোগী প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে, এমনকি ভিনরাজ্য থেকে চিকিৎসা করাতে আসেন। কী করে তাঁদের পরিবার রক্তদাতা জোগাড় করবেন?
কেনই বা এ দায় রোগীর পরিবারের উপর চাপানো হবে? এ কাজ স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের। ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে দেখেও তাঁরা রক্ত সংগ্রহে, সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থায় উদ্যোগী হননি কেন? ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মী রোগীর আত্মীয়কে বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে রক্তের জোগান নিশ্চিত করা তাঁর দায়িত্ব নয়— এই সংবাদ একই সঙ্গে স্তম্ভিত করে। কর্তব্যের এই বিস্মরণ, মানুষের জীবনের প্রতি এ-হেন তাচ্ছিল্য নৃশংস। যে সরকারি আধিকারিকদের অবহেলায় রক্তের এই আকাল সৃষ্টি হয়েছে, তাঁরা বিনা শাস্তিতে পার পেয়ে গেলে পরিস্থিতি কোনও দিন পাল্টাবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy