Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Bengaluru

বন্যার শহর

বেঙ্গালুরু যত দ্রুত দেশের তথ্যপ্রযুক্তির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে, পাল্লা দিয়ে অবনতি ঘটছে তার নাগরিক পরিকাঠামো, নিকাশিব্যবস্থার।

বন্যার কবলে বেঙ্গালুরু।

বন্যার কবলে বেঙ্গালুরু।

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:০৮
Share: Save:

পরিবেশকে ধ্বংস করে যখন উন্নয়ন এবং নগরায়ণকে পাখির চোখ ধরা হয়, তার পরিণতি কী মারাত্মক হতে পারে, বেঙ্গালুরুর সাম্প্রতিক বন্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিতে শহরাঞ্চলের রাস্তাতে জল দাঁড়াবে, তেমনটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিতে যদি রাজ্যের রাজধানী শহরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, ক্রেন এবং ট্র্যাক্টর অফিসযাত্রীদের একমাত্র পরিবহণ হয়ে ওঠে, তখন তাকে নিছক বর্ষার মতিগতি বললে বাস্তবকে অগ্রাহ্য করা হয়। ঘটনা হল, বেঙ্গালুরু যত দ্রুত দেশের তথ্যপ্রযুক্তির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে, পাল্লা দিয়ে অবনতি ঘটছে তার নাগরিক পরিকাঠামো, নিকাশিব্যবস্থার। পরিণতি, দিনকয়েকের বৃষ্টিতেই অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে, অভিজাত আবাসনও জলমগ্ন হওয়ায় বাসিন্দাদের নৌকায় উদ্ধার করতে হয়েছে, বহু মানুষকে জল-বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রাত কাটাতে হয়েছে, এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে দৈনিক কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।

বেঙ্গালুরুর এ-হেন পরিস্থিতি কি দেশের অন্য বৃহৎ শহরগুলিকেও এক চরম শিক্ষা দিয়ে গেল না? নিঃসন্দেহে এই ঘটনা নতুন নয়। প্রতি বর্ষাতেই দেশের বৃহৎ শহরগুলির বানভাসি রূপ শিরোনাম হওয়া প্রায় নিয়মে পর্যবসিত হয়েছে। কেন বার বার উন্নত শহরগুলির এ-হেন দুরবস্থা— এই প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যের মাধ্যমে চমৎকার বুঝিয়েছিলেন হায়দরাবাদের এক নাগরিক, ২০২০ সালের বন্যার পর— জল আমাদের ঘরে প্রবেশ করেনি, আমরাই জলাভূমিগুলির মধ্যে প্রবেশ করেছি। বেঙ্গালুরুর ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। প্রাকৃতিক ঢালযুক্ত একটি শহরের এমন জলমগ্ন হওয়ার একমাত্র কারণ অত্যন্ত খারাপ নগর পরিকল্পনা। বস্তুত, আশির দশকের পর থেকে তথ্যপ্রযুক্তি নগরী হয়ে ওঠার পথে বেঙ্গালুরুতে যে দ্রুত গতির নগরায়ণের সূচনা হয়, তার ফলে জমির চাহিদা বিপুল বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে, শহরের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে অগ্রাহ্য করেই লেক বুজিয়ে, জল পরিবহণের নর্দমা বুজিয়ে তৈরি হয় বাড়ি, অফিস, শপিং মল। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী যে নিকাশিব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তা যে ভারী বৃষ্টি সামলানোর পক্ষে উপযুক্ত নয়, তা প্রমাণিত। এবং পরিকাঠামোর অভাবে আবর্জনা জমে বন্ধ হয়ে যায় স্টর্ম ওয়াটার ড্রেনগুলির মুখও। বাড়তি বৃষ্টির জল বয়ে যাবে কোথায়?

সমস্যা শুধুমাত্র বেঙ্গালুরুর নয়। ২০২০ সালের হায়দরাবাদ, ২০১৫ সালের চেন্নাই, ২০০৫ সালের মুম্বই বিপর্যয়ের পরও একই ভাবে নিম্নমানের নগর পরিকল্পনা, এবং ত্রুটিযুক্ত নিকাশিব্যবস্থার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছিল। ১৯০৮ সালের ভয়ঙ্কর বন্যা-পরবর্তীতে গড়ে ওঠা যে পরিকাঠামো একদা হায়দরাবাদের মতো শহরকে ‘বন্যারোধী’ হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, জলাভূমি অঞ্চলে বেপরোয়া নির্মাণ বর্তমানে সেই সুরক্ষাকবচটুকুও কেড়ে নিয়েছে। ২০০৫ সালের পরে মুম্বইয়ে একই ভাবে গাছ কেটে ব্যাপক নগরায়ণ, নিচু এলাকা ভরাট করা এবং দুর্বল নিকাশির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতাও এই তালিকার বাইরে নেই। এক দিকে শহরের গামলার মতো আকৃতি, অন্য দিকে ঔপনিবেশিক আমলের নিকাশিব্যবস্থা নিয়ে এ শহর যেন বিপর্যয়ের প্রহর গুনছে। সাম্প্রতিক নিম্নচাপ খানিকটা সেই ইঙ্গিতই দিয়ে রাখল।

অন্য বিষয়গুলি:

Bengaluru flood Heavy Rainfall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy