২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগের দিনগুলোর কথা কি প্রধানমন্ত্রীর মনে আছে? যখন তিনি ডলারের দাম ষাট টাকা ছোঁয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন? সেই সব তারকারও কি মনে আছে সে দিনের কথা, যখন তাঁরা টুইট করে জানিয়েছিলেন যে, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে ডলারের দাম চল্লিশ টাকায় নামবে ভেবে আশ্বস্ত লাগছে? তাঁদের উদ্বেগ ও আশাকে সঙ্গী করেই নতুন বছরে ডলারের দাম প্রায় সাতাশি টাকায় পৌঁছে গেল। এত দিনে তাঁরা সম্ভবত স্বীকার করবেন যে, ডলারের দাম কত হবে, তা কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছাধীন নয়। অন্তত, সম্পূর্ণাংশে। গত বছরের শেষ কয়েক মাস যে টাকার সাপেক্ষে ডলারের দাম কম-বেশি স্থিতিশীল ছিল, তা টাকার নিজের মহিমায় নয়, মূলত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কারণে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বাজারে টাকার দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য ক্রমাগত ডলার বিক্রি করে টাকা কিনেছে। অনুমান করা যায় যে, ব্যাঙ্কের শীর্ষ নেতৃত্ব বদলের পরে সেই নীতিতেও ফারাক এসেছে। বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ার থেকে ক্রমাগত ডলার বিক্রি করে টাকা কিনে যাওয়ার বিপদ হল, তাতে দেশের বাজারে নগদে টান পড়তে পারে। এমনিতেই সুদের হার চড়া। তার উপরে নগদে টান পড়লে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রবল। ফলে, টাকার দাম কমতে না দেওয়ার নীতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তকে ভ্রান্ত বলার উপায় নেই। কথা হল, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের এই প্রয়াস ছাড়া টাকার দাম সম্ভবত এর আগেই পড়ত। ডলারের দামকে চল্লিশ টাকায় বেঁধে রাখার ‘জুমলা’র চরিত্রটি স্পষ্ট। অবশ্য, তা ২০১৪ সালেও একই রকম স্পষ্ট ছিল। অর্থনীতির এই জটিল হিসাব সাধারণ মানুষের বোঝার কথা নয়— কিন্তু, সেই সুযোগের অপব্যবহার করলে শেষ অবধি ধরা পড়তেই হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম চড়ছেই। ইউরো, জাপানের ইয়েন, ব্রিটেনের পাউন্ড, কানাডার ডলার, সুইডেনের ক্রোনা এবং সুইৎজ়ারল্যান্ডের ফ্র্যাঙ্ক— এই ছ’টি বিদেশি মুদ্রার সাপেক্ষে ডলারের দামের ওঠাপড়া মাপা হয় যে সূচকের ভিত্তিতে, সেই ডলার ইন্ডেক্সের গতি ঊর্ধ্বমুখী। ফলে, ভারতীয় বাজারেও দামের সেই চাপ পরিলক্ষিত হওয়া স্বাভাবিক। তাকে কৃত্রিম পন্থায় নিয়ন্ত্রণের প্রবণতাই বরং বিপদ ডেকে আনতে পারে। ডলারের দাম বাড়ার অর্থ, ভারতের আমদানি মহার্ঘতর হবে, এবং এ দেশের থেকে রফতানি করা পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমবে। ভারত যদি নেট রফতানিকারক দেশ হত, তা হলে এই মুহূর্তটি ভারতের পক্ষে লাভজনক হত। কিন্তু, যে-হেতু রফতানির চেয়ে ভারতের মোট আমদানির পরিমাণ বেশি, অতএব ডলারের দাম বাড়া ভারতের পক্ষে দুঃসংবাদ। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আগত সব পণ্যেরই দাম বাড়বে, ফলে তা সরাসরি অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধি ঘটাবে।
এই পণ্যের তালিকায় সর্বাধিক উদ্বেগজনক নামটি হল পেট্রলিয়ামের। এমনিতেই ডলারের মূল্যে অপরিশোধিত পেট্রলিয়ামের দাম বাড়ছে। তার উপরে, ডলারের দাম বাড়ায় টাকার অঙ্কে সে খরচ আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে দেশের বাজারে দু’গোত্রের সিদ্ধান্ত সম্ভব। এক, বাজারে পেট্রল-ডিজ়েলের প্রত্যক্ষ মূল্যবৃদ্ধি; অথবা দুই, তেল পরিশোধন ও বিপণনকারী সংস্থাগুলিকে আপাতত এই বর্ধিত দামের বোঝা বইতে বাধ্য করা। অনুমান করা চলে, সরকার দ্বিতীয় পথেই হাঁটবে। এবং, কোনও এক পর্যায়ে এই ঘাটতিবাবদ তেল বিপণনকারী সংস্থাগুলিকে মোটা টাকা ছাড়ও দেবে, অতীতে যেমন দিয়েছে। শেষ অবধি সে বোঝাও সাধারণ মানুষের ঘাড়েই চাপে। অন্য পণ্যগুলির ক্ষেত্রে যে-হেতু বর্ধিত দামের প্রভাব সরাসরি বাজারে পড়বে, ফলে মূল্যবৃদ্ধির হারেরও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে সুদের হার কমার সম্ভাবনা থাকবে না। তার প্রভাব পড়বে বিনিয়োগের হারে, এবং তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানের হারের উপরে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অতি উদ্বেগজনক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy