সভ্য জগতে মেয়েদের নিলামে তোলা হতে পারে, সে কথা সহসা বিশ্বাস হতে চায় না। প্রতীকী ছবি।
রাজস্থানে কিশোরী ও তরুণী মেয়েদের নিলামে তুলে ঋণ শোধ করছে পরিবারের পুরুষরা, এই সংবাদ বিচলিত করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে বিশদ রিপোর্ট দাবি করেছে কমিশন। নিলামে বিক্রীত মেয়েদের অন্যান্য রাজ্যে, এমনকি অন্য দেশেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাদের উপর কী ধরনের নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন হচ্ছে, কেমন দাসত্ব-সুলভ পরিস্থিতিতে বাঁচতে হচ্ছে আট বছর থেকে আঠারো বছরের ওই মেয়েদের, তা সহজেই অনুমেয়। তাই ওই সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লিখিত এলাকাগুলিতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে রাজস্থানের পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সভ্য জগতে মেয়েদের নিলামে তোলা হতে পারে, সে কথা সহসা বিশ্বাস হতে চায় না। কিন্তু ‘অসম্ভব’ বলে তা উড়িয়ে দেওয়াই বা চলে কী করে? ‘আধুনিক দাসত্ব’ যে ভারতে এখনও বহাল আছে, সে বিষয়ে তথ্য-প্রমাণের তো অভাব নেই। যে পরিস্থিতিতে কোনও ব্যক্তি নিজের জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়, স্বাধীন ভাবে চলাফেরা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারায়, নিজের শ্রমে উপার্জিত অর্থের উপর অধিকার হারায়, তাকেই ‘আধুনিক দাসত্ব’ বলে নির্ণয় করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের একাংশ। পাচারের শিকার নারী ও শিশু, ঋণের জালে আবদ্ধ শ্রমিক, ভিন-রাজ্যে অথবা ভিন-দেশে আগত শ্রমিকদের ঠিকাদারের হাতে কার্যত বন্দিদশা, এমনকি নাবালক শ্রমিক, নাবালিকা বধূর গৃহশ্রমকেও দাসত্বের নিদর্শন বলে গণ্য করা হয়। একটি আন্তর্জাতিক সূচক অনুসারে, সারা বিশ্বে অন্তত চার কোটি মানুষ আধুনিক দাসত্বের পরিস্থিতিতে বাস করছে। এদের অর্ধেকেরও বেশি রয়েছে ভারত, চিন, রাশিয়া, ইরান-সহ দশটি দেশে।
ভারত সরকার অবশ্য দাসত্বের ধারণাকে গ্রহণ করেনি, প্রধানত পাচার প্রতিরোধের ভাষাতেই সরকারি উদ্যোগের বিবরণ আনা হয় জনপরিসরে। জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর পরিসংখ্যান, ভারতে প্রতি দিন আট জন শিশু পাচার হয়। রাজস্থানের ঘটনা, এবং দেশ জুড়ে এমন আরও অগণিত জানা-অজানা ঘটনা স্পষ্ট করছে যে মেয়েদের, বিশেষত নাবালিকা মেয়েদের দাস-সুলভ জীবন কেবল অপরাধের কাঠামোয় বোঝা সম্ভব নয়। পুরুষতন্ত্রের যে ভয়ানক, নিষ্করুণ রূপ ভারতে আজও দেখা যায়, তা মেয়েদের স্বাতন্ত্র্যের কোনও মর্যাদা তো দেয়ই না, মানবাধিকারও নির্বিচারে লঙ্ঘন করে। এক কথায়, পরিবারের মেয়েদের ‘সম্পত্তি’ বলে গণ্য করার পুরনো স্বভাবটির শিকড় অতি গভীরে।
তার সর্বাধিক প্রকাশ বিবাহে— ভারতে আজও মেয়েদের বিয়ে ‘দেওয়া’ হয়, তারা বিয়ে ‘করে’ না। এমনকি বিয়ের বৈধ বয়স হলেও জীবনসঙ্গী নির্বাচনে মেয়েদের ভূমিকা থাকে না। যে মানসিকতা থেকে মেয়েদের সম্মতি-ব্যতিরেকে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়, তা থেকেই মেয়েকে নিলামে তুলতে পারে অভিভাবক। পাচারকারীর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিলে, বা সরাসরি বিক্রি করলেও তা ‘অপরাধ’ বলে দেখা হয় না। মেয়েদের দেহ ও শ্রমের উপর অন্যের দখলদারিকে প্রকারান্তরে মান্যতা দেয় পুলিশ-প্রশাসনও। তাই ভারতে পাচারের মতো জঘন্য অপরাধ অপ্রতিহত। প্রশাসনও যে তার অংশ, তা ফের প্রমাণিত হল। পরিবার থেকে রাষ্ট্র, সর্বত্র এমনই বিপদের মুখোমুখি মেয়েরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy