Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Radio

বিপুল তরঙ্গ

সাত মেগাহার্টজ়-এর বেতারতরঙ্গে কী এমন আছে, যাহার প্রভাবে চারগাছ দ্রুত বাড়িয়া উঠে?

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২১ ০৫:০০
Share: Save:

জীববিজ্ঞান গবেষণার একটি সংবাদ বিজ্ঞানী মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করিয়াছে— বেতারতরঙ্গ নাকি চারাগাছকে দ্রুত হারে বাড়িয়া উঠিতে সাহায্য করে। প্যারিসে সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষিকা মার্গারেট আহমেদ এবং তাঁহার সহযোগীগণ অনেকগুলি চারাগাছকে বিভিন্ন কম্পাঙ্কের বেতারতরঙ্গের সম্মুখে রাখেন। তাঁহারা দেখেন যে, বিশেষ কম্পাঙ্কের বেতারতরঙ্গ চারাগাছগুলির দ্রুত বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। উক্ত কম্পাঙ্কটি হইল সাত মেগাহার্টজ়, যে কম্পাঙ্কে শৌখিন বেতার সম্প্রচারকগণ অনুষ্ঠানাদি প্রচার করিয়া থাকেন। বেতারতরঙ্গ আসলে এক তড়িচ্চুম্বকীয় প্রভাব। সাধারণ আলো কিংবা তাপও উক্ত প্রভাবের অন্তর্গত। লতাগুল্মের উপর আলোর প্রভাব সর্বজনবিদিত। সেই হিসাবে বেতারতরঙ্গও যে চারাগাছের উপর ক্রিয়া করিবে, তাহাতে আশ্চর্যের কিছু নাই। তথাপি এই ক্ষেত্রে বিস্ময়ের ব্যাপার ইহাই যে, বিশেষ কম্পাঙ্কের বেতারতরঙ্গের চারাগাছের উপর প্রতিক্রিয়া। সাত মেগাহার্টজ়-এর বেতারতরঙ্গে কী এমন আছে, যাহার প্রভাবে চারগাছ দ্রুত বাড়িয়া উঠে?

১৯৮০-র দশকে মার্গারেট আবিষ্কার করেন ক্রিপ্টোক্রোম— বৃক্ষের জীবকোষে এমন কিছু রিসেপ্টর, যাহারা তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গে সক্রিয় হয়। ক্রিপ্টোক্রোম কিছু জিনের সমাহারকে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ করাইয়া জীবকোষকে বিশেষ ক্ষমতাবান করে। ক্রিপ্টোক্রোম বেতারতরঙ্গেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে কি না, তাহাই দেখিতে চাহিয়াছিলেন মার্গারেট। তিনি বলিয়াছেন, তাঁহাদের সাম্প্রতিক পরীক্ষা প্রথম প্রমাণ করিয়াছে যে, জীবকোষের রিসেপ্টর বিশেষ কম্পাঙ্কের বেতারতরঙ্গেও ক্রিয়াশীল হয়। ক্রিপ্টোক্রোমের কাজ নানাবিধ। উহা কেবল বৃক্ষের বৃদ্ধিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না, পক্ষিগণের দিগ্‌নির্দেশেও সাহায্য করে। পক্ষীদের দিগ্‌নির্দেশ ক্ষমতা— যাহার ফলে সাইবেরিয়ার পক্ষিকুল প্রতি বৎসর সাঁতরাগাছির ঝিলে উড়িয়া আসে— তাহার সহিত পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের গভীর সম্পর্ক বিজ্ঞানীরা অনুমান করিয়া থাকেন। বেতারতরঙ্গ যে পক্ষিকুলের দিগ্‌নির্দেশ ক্ষমতার হেরফের ঘটায়, তাহা ইতিপূর্বে প্রমাণিত। কী উপায়ে উক্ত হেরফের ঘটে, তাহা অদ্যাবধি অজানা। জানিবার চেষ্টায় বিজ্ঞানীরা ব্যাপৃত। মার্গারেটের আশা যে, তাঁহাদিগের সাম্প্রতিক পরীক্ষা ওই রহস্যের প্রতি আলোকপাত করিবে। তবে, তাঁহার দাবি সম্পর্কে ভিয়েনা শহরে অবস্থিত রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার প্যাথলজির বিজ্ঞানী ডেভিড কিজ় বলিয়াছেন, মার্গারেট এবং সহযোগীগণের সাম্প্রতিক পরীক্ষা অন্য ল্যাবরেটরিতে পুনর্বার করা প্রয়োজন। যদি দেখা যায় যে, বেতারতরঙ্গ সত্যই চারাগাছের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করিয়াছে, তাহা হইলে গবেষণা করিয়া দেখিতে হইবে মূলে কারণটি কী।

তাঁহার সাম্প্রতিক পরীক্ষার সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দিক বিতর্ক সৃষ্টি করিয়াছে। মনুষ্য সমেত স্তন্যপায়ী প্রাণীর জীবকোষেও ক্রিপ্টোক্রোমের প্রভাব লক্ষ করা যায়। বেতারতরঙ্গ সেই ক্ষেত্রে মনুষ্যের উপরেও প্রভাব ফেলিবার কথা। মোবাইল ফোনের টাওয়ার সম্পর্কে বহু মানুষের অভিযোগ যে, উহা স্বাস্থ্যহানিকর। মোবাইল কাজ করে স্বল্প দৈর্ঘ্যের বেতারতরঙ্গে। অর্থাৎ, সেই তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বেশি। নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের বেতারতরঙ্গ ক্রিপ্টোক্রোমের উপর প্রভাব ফেলিলে মোবাইল টাওয়ারের বিরুদ্ধে বহু মানুষের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করিয়া লইতে হয়। স্বল্প দৈর্ঘ্যের বেতারতরঙ্গ মনুষ্যের স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর কি না, তাহা লইয়া ১৯৬০-এর দশকে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়াছিলেন আমেরিকান বিজ্ঞানী অ্যালান ফ্রে। সেই সূত্রে জীবকোষের উপর স্বল্প দৈর্ঘ্যের বেতারতরঙ্গের প্রতিক্রিয়াকে অভিহিত করা হয় ‘ফ্রে এফেক্ট’ নামে। ফ্রে এফেক্ট যে মনুষ্যের স্বাস্থ্যহানিকর, তাহা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয় নাই। মোবাইলের টাওয়ারের বিরুদ্ধে বহু মানুষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রে ফ্রে এফেক্ট। বিজ্ঞানের নানাবিধ জার্নালে এক্ষণে ওই ক্রিয়া লইয়া অনেক সমীক্ষা প্রকাশিত হয়। বিতর্ক আরও বাড়িয়াছে মার্গারেটের আবিষ্কারের ফলে। স্প্যানিশ জীববিজ্ঞানী আলফোনসা রালমোরি বলিয়াছেন, মনুষ্যের স্বাস্থ্যহানির ব্যাপারে নিশ্চিত হইবার পূর্বে সাবধানতা অবলম্বন করা শ্রেয়। অর্থাৎ, যত্রতত্র মোবাইলের টাওয়ার প্রতিষ্ঠার বিরোধী তিনি। আধুনিক জীবনযাত্রায় মোবাইলের উপযোগিতা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু, এই মুহূর্তে আলফোনসার প্রস্তাব প্রণিধানযোগ্য।

যৎকিঞ্চিৎ

কে জিতল, সেটা জেনে ফেলার সবচেয়ে বড় মুশকিল হল— কে জিতবে, সেটা নিয়ে আর তর্কের সুযোগই থাকে না। তা হলে আজকের দিনটা ফুরোলে বাঙালির সুখহীন নিশিদিন কাটবে কী ভাবে? একটা সম্ভাবনা আছে— বিধানসভা ত্রিশঙ্কু হলে কয়েকটা দিন ‘কে কত দামে বিক্রি হচ্ছে’ নিয়ে মেতে থাকা যায়। কিন্তু, কাল না হোক পরশুর পরের দিন সেটাও তো ফুরোবে। নৈতিকতাহীন রাজনীতি সাঙ্গ হলে বাঙালির হাতে থাকবে কী? দর্শকহীন আইপিএল? অক্সিজেনহীন হাসপাতাল?

অন্য বিষয়গুলি:

Radio
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy