Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Nabanna Abhijan

সীমাবদ্ধতা

শুভেন্দু অধিকারী কার্যত জানিয়েই রেখেছিলেন যে, মিছিল থেকে অশান্তি সৃষ্টির প্রবল প্ররোচনা থাকবে। কার্যক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটল। পুলিশ যে ভঙ্গিতে সেই প্ররোচনায় পা না-দিয়ে গোটা ব্যাপারটা সামাল দিল, তা সহজ ছিল না।

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৪ ০৪:২৯
Share: Save:

এই আন্দোলন বিজেপির নয়, এটা সমাজের আন্দোলন।” মঙ্গলবার ‘ছাত্র’দের নবান্ন অভিযান শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের এই উক্তিটির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে রাজ্যে বিজেপির বর্তমান রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও এক অভূতপূর্ব বাধার মোক্ষম টানাপড়েন। এই অভিযান চরিত্রে আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ঘটা অন্য যাবতীয় মিছিল-অবস্থানের চেয়ে সম্পূর্ণ পৃথক। এই মিছিলের চরিত্রটি চেনা, বিজেপির যে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচির মতোই— সেই ব্যারিকেড ভাঙা, সেই পুলিশের দিকে ইট-পাথর-বোতল ছোড়া। মিছিলের পোস্টার-স্লোগানেও আর জি কর-কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবি ছিল তুলনায় গৌণ— মূল দাবি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। অর্থাৎ, সুকান্ত মজুমদার যতই একে (নাগরিক) সমাজের আন্দোলন বলে চালাতে চান, স্পষ্টতই তাঁরা সেই সামাজিক আন্দোলনটিকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে উদ্‌গ্রীব। কারণ সহজ— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কঠিনতম মুহূর্তে রয়েছেন, ফলে এখনই রাজনৈতিক পালাবদলের উদ্দেশ্যে সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার সেরা সময়। কিন্তু, নবান্ন অভিযান বিজেপির রাজনৈতিক কল্পনাশক্তির সীমাবদ্ধতাও দেখিয়ে দিল। বুঝিয়ে দিল যে, পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক সমাজের আন্দোলনের চেহারাটি নকল করার সাধ্যও গৈরিক বাহিনীর নেই— তাদের কাছে রামনবমীর মিছিলের চেহারাও যেমন, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদও তেমনই।

গতকাল এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে ‘সতর্কতা জরুরি’ শীর্ষক নিবন্ধে লেখা হয়েছিল যে, রাজ্যের শাসকদের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের এই প্রবল ক্ষোভের মুহূর্তেও যে অন্যত্র নারীনিগ্রহকারীদের পাশে দাঁড়ানো বিজেপিকে মানুষ বিশ্বাস করতে রাজি নন, এটি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সুস্থতা সম্বন্ধে ভরসা জোগায়। সুকান্ত মজুমদারদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধাক্কা খাচ্ছে এই বাধাটিতেই। মঙ্গলবারের অভিযানে ‘ছাত্র’দের সংখ্যা দেখে বোঝা গেল, বৃহত্তর নাগরিক সমাজের সমর্থন না-পেলে এই প্রশ্নটির রাজনৈতিক ‘স্নো-বলিং’ ঘটানো বিজেপির পক্ষে দুষ্কর। ফলে আশঙ্কা হয়, আর জি কর-কাণ্ডের প্রসঙ্গটিকে দখল করার চেষ্টা বিজেপি এখনই থামাবে না। এবং, তাদের সেই চেষ্টায় ন্যায়বিচারের দাবির গুরুত্ব তিলমাত্র হবে। এখানেই পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক সমাজের বৃহত্তর দায়িত্ব— আর জি করে নিগৃহীতার ন্যায়বিচার দাবি করে রাজ্যের শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের যে পবিত্র অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত হয়েছে, তাকে নির্বাপিত হতে দেওয়া চলবে না। ক্ষোভ শুধু ব্যক্তিশাসকের বিরুদ্ধে নয়— এই ক্ষোভ সমগ্র পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে, প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলন যাতে সঙ্কীর্ণ স্বার্থতাড়িত দলীয় রাজনীতির পাঁকে নিমজ্জিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, অহিংস গণতান্ত্রিক পথই ন্যায় আদায়ের একমাত্র পথ।

শুভেন্দু অধিকারী কার্যত জানিয়েই রেখেছিলেন যে, মিছিল থেকে অশান্তি সৃষ্টির প্রবল প্ররোচনা থাকবে। কার্যক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটল। পুলিশ যে ভঙ্গিতে সেই প্ররোচনায় পা না-দিয়ে গোটা ব্যাপারটা সামাল দিল, তা সহজ ছিল না। প্ররোচনার কারণ— গুলি চললে, বা নিদেনপক্ষে পুলিশের লাঠিতে কয়েকজন গুরুতর আহত হলে তা পরবর্তী রাজনীতির পক্ষে অমূল্য মূলধন হবে। অতএব, আজ বিজেপির ডাকা ধর্মঘটে, এবং পরবর্তী কয়েক দিন পুলিশকে অতি সতর্ক থাকতেই হবে। তবে, দু’টি প্রশ্ন থাকে। এক, এই অভিযান ঠেকাতে পুলিশ যে প্রস্তুতি নিয়েছিল, তা মাছি মারতে কামান দাগা হয়ে গেল না কি? তাতে সাধারণ মানুষেরও বিস্তর হেনস্থা হল, সে কথাও মনে রাখা জরুরি। এবং দুই, পুলিশের এই তৎপরতা অন্য দিনগুলিতে কোথায় থাকে? নারীর সুরক্ষার ক্ষেত্রেই বা কোথায় থাকে?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy