এখনকার কম্পিউটার কাজ করে সার্কিট বা বর্তনীর মধ্যে এক বার বিদ্যুৎপ্রবাহ চলিয়া এবং পরমুহূর্তেই তাহা বন্ধ হইয়া। এই অন-অফ পদ্ধতি চলে নিরন্তর। কম্পিউটার চিপের মধ্যে খোদাই করা থাকে ছোট ছোট বর্তনী। বর্তনীর সংখ্যা বাড়াইলে কম্পিউটার দ্রুততর হয়, তাহার ক্ষমতাবৃদ্ধি হয়। এই ভাবে কম্পিউটারের ক্ষমতা বাড়ানো হইয়াছে এত কাল। ইনটেল কর্পোরেশনের প্রধান গর্ডন আর্ল মুর খ্যাত একটি নিয়ম লক্ষ করিবার জন্য। নিয়মটি হইল দুই বৎসর কাল কাটিলে কম্পিউটার চিপের মধ্যে খোদাই করা বর্তনীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। ওই নিয়ম এখন ‘মুর’স ল’ বলিয়া খ্যাত। কিন্তু, এই পদ্ধতিতে কম্পিউটারের ক্ষমতা কত দূর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়? চিপে বর্তনীর সংখ্যা ইচ্ছামতো বাড়ানো যায় না। অথচ, কম্পিউটারের ক্ষমতাবৃদ্ধি জরুরি।
কম্পিউটার নির্মাতাগণ উক্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজিতে ব্যস্ত। নজর পড়িয়াছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রতি। কর্মপ্রণালীগত পরিবর্তনের জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষমতা সাধারণ কম্পিউটারের বহুগুণ হইবে। পদার্থবিজ্ঞানী আরউইন রুডলফ জোসেফ আলেকজ়ান্ডার শ্রয়েডিংগার কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়মকানুন যে আজব, তাহা নির্দেশ করিবার নিমিত্ত এক কাল্পনিক পরীক্ষার উদাহরণ টানিয়াছিলেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নির্দিষ্ট করিয়া কিছু নাই, সবই সম্ভাবনার ব্যাপার। বাস্তবে সম্ভাব্যতা যে কী বিষম ব্যাপার সৃষ্টি করিতে পারে, তাহা দেখাইবার জন্যই শ্রয়েডিংগারের উক্ত পরীক্ষা। পরীক্ষায় এক বাক্সের মধ্যে একটা বিড়াল, এক কাচের পাত্রে রাখা আছে পটাশিয়াম সায়নাইড, পাত্রের পাশে একটি হাতুড়ি এবং আর এক পাত্রে কিছুটা তেজস্ক্রিয় পদার্থ। যদি কোনও কণা তেজস্ক্রিয় হয়, তবে হাতুড়ির ঘায়ে পটাশিয়াম সায়নাইড-ভর্তি পাত্র ফাটিয়া যাইবে। বিষ গ্যাসের প্রভাবে বিড়ালটি মারা যাইবে। ডালাবন্ধ বাক্সের অভ্যন্তরে বিড়ালটি কী দশায় আছে? শ্রয়েডিংগার বলিতেন, তেজস্ক্রিয়তার সম্ভাব্যতা হেতু কণা তেজস্ক্রিয়তা দেখাইয়াছে এবং দেখায় নাই। ফলে পটাশিয়াম সায়নাইডের পাত্র ভাঙিয়াছে এবং ভাঙে নাই। বিড়ালটি মরিয়াছে এবং মরে নাই। অর্থাৎ, একটি বিড়াল দুইটি বিড়াল হইয়া গিয়াছে। একটি জীবিত, অন্যটি মৃত। বাক্সের মধ্যে যুগপৎ জীবিত এবং মৃত বিড়ালকে এই কারণে ‘শ্রয়েডিংগারের বিড়াল’ আখ্যা দেওয়া হইয়াছে। বিড়াল যেমন এক হইতে যুগপৎ দুই দশায় থাকিতে পারে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারও দুই দশায় কার্য করিতে পারে। কম্পিউটারের বর্দ্ধিত ক্ষমতার উৎস ইহাই।
মুশকিল আসান রূপে কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে দেখিয়া বহু দেশে বহু কোম্পানি উক্ত কম্পিউটার প্রস্তুত করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে। বস্তুত ইহা একটি প্রতিযোগিতায় পর্যবসিত। এই লক্ষ্যে বিনিয়োগও বিশাল। ২০১৯ সালে গুগল কোম্পানি এক কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করে ও প্রচার করে যে তথাকথিত কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জিত হইয়াছে। অর্থাৎ, সাধারণ কম্পিউটারের অপেক্ষা অনেক বেশি ইহার ক্ষমতা।। পরে বিশেষজ্ঞরা গুগল কোম্পানির কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জনের দাবি খারিজ করিয়া দেন। এক্ষণে আবার আইবিএম-এর তৈরি ‘ইগল’ চিপ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ভূমিকায়। ল্যাবরেটরির প্রতিযোগিতা শেষে কবে আসিবে বিক্রয়যোগ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার, তাহাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy