কোয়াড-এর বিদেশমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: রয়টার্স।
ভূ-রাজনীতিতে কখনও কোনও নিস্তরঙ্গ মুহূর্ত থাকে কি? অন্তত দক্ষিণ চিন সাগরের ক্ষেত্রে তো নয়ই। সম্প্রতি টোকিয়োয় অনুষ্ঠিত কোয়াড-এর বিদেশমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন লড়াই ও মায়ানমারের গৃহযুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বিবৃতিতে চিনের সরাসরি নাম না করে দক্ষিণ চিন সাগর দিয়ে যাওয়া নৌপথগুলির জন্য আদর্শ আচরণবিধি তৈরির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই বিধি আন্তর্জাতিক আইন মেনে এবং বৈঠকের অংশ নয়, এমন দেশগুলির স্বার্থ এবং ন্যায্য অধিকার খর্ব না করে তৈরি করার উপরেই জোর দিয়েছেন তাঁরা। জয়শঙ্কর সাফ জানিয়েছেন, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল স্বাধীন, উন্মুক্ত, সুস্থায়ী এবং নিরাপদ রাখার জন্য এই চার রাষ্ট্রের সমন্বয় চলছে।
গত কয়েক দশক ধরেই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিন। দিল্লির কাছে বেজিং চ্যালেঞ্জ মূলত দ্বিমুখী— প্রকৃত সীমান্তরেখা বরাবর আঞ্চলিক বিবাদ এবং ভারত মহাসাগরে বেজিং-এর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি। প্রসঙ্গত, উত্তর-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ চিন সাগরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপিনস এবং তাইওয়ানের সামুদ্রিক অঞ্চলের সিংহভাগ অংশই নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চিন। সাম্প্রতিক কালে ফিলিপিনসের বিভিন্ন জলযান ও নৌবাহিনীর উপরে চিনা নৌসেনার অহরহ আক্রমণ তার অভিপ্রায়কে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে। অন্য দিকে, ভারতের জলপথে বাণিজ্যের প্রায় পঞ্চান্ন শতাংশ দক্ষিণ চিন সাগর এবং মালাক্কা প্রণালী দিয়ে হওয়ার ফলে এখানকার আঞ্চলিক স্থায়িত্ব ভারতের কৌশলগত স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া, ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি (ইউএনসিএলওএস) মেনে জলপথে স্বাধীন, উন্মুক্ত, সুস্থায়ী এবং নীতি-ভিত্তিক ব্যবস্থার পক্ষেই এত কাল সওয়াল করে এসেছে দিল্লি। তা বজায় রাখার পাশাপাশি ভারত মহাসাগরে সময়ে সময়ে নজরদারি ও অন্যান্য জলযান পাঠিয়ে চিনের অনুপ্রবেশের চেষ্টা দিল্লিকে এই অঞ্চলে কোয়াড-এর উপস্থিতি বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হতে বাধ্য করেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের অবস্থান পোক্ত করতে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সূত্রে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিনসের মতো সেই সব দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করছে দিল্লি, যারা ইতিমধ্যেই বেজিং-এর আগ্রাসনের শিকার হয়েছে বা হচ্ছে।
অন্য দিকে, সম্মেলনে ভারত-চিন সম্পর্কের প্রশ্নে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীর ‘ভাল না থাকার’ উক্তি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে যে পড়শি রাষ্ট্রের অসহযোগিতার জেরে সীমান্ত বিবাদ পরিস্থিতির কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি এ-যাবৎ। বিশেষত যেখানে কোয়াড সম্মেলনের কয়েক দিন আগেই আসিয়ান সম্মেলনে চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর। ভারত-চিন সীমান্ত সংঘাত নিয়ে একাধিক বার মতামত দিয়েছে আমেরিকা-সহ অন্যান্য দেশও। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নতির ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের বদলে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজায় বিশ্বাসী— স্পষ্ট করে দিয়েছে দিল্লি। বেজিং এ বার সাড়া দেয় কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy