ফাইল চিত্র।
উৎসবের মরসুম আসিয়াছে, শীতকাল আসিল বলিয়া। পার্বণমুখর এই সময়ে কলিকাতা মহানগর, শহরতলি, মফস্সল ছাইয়া থাকে পুরু কুয়াশার আস্তরণে। বাতাস ভারী হয় যত না প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে, তার অনেক বেশি মনুষ্যসৃষ্ট দূষণে। কলিকাতার বায়ুদূষণের মাত্রা শীতকালে নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রম করার কুফল সম্পর্কে পরিবেশবিদগণ কম কথা বলেন নাই, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’-এর প্রসঙ্গ সম্প্রতি আলোচিত হইতেছে। ২০১৯-এর তথ্য বলিতেছে, মহানগরের বাতাসে সালফার ডাইঅক্সাইড সহনমাত্রার মধ্যে ছিল, কিন্তু নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড ও ভাসমান ধূলিকণার ন্যায় দূষকের মাত্রা ছিল অনেক বেশি। করোনাকালীন লকডাউন ও বিধিনিষেধের জেরে দূষণমাত্রার সাম্প্রতিক হ্রাস বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র, সার্বিক দূষণচিত্রটি ভিন্ন, এবং শঙ্কা উদ্রেককারী।
অথচ রাজ্য সরকারের তরফে শুধু কলিকাতাই নয়, হাওড়া, ব্যারাকপুর, আসানসোল, দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, হলদিয়ার ন্যায় সাতটি শিল্পপ্রধান শহরের জন্য ‘এয়ার কোয়ালিটি অ্যাকশন প্ল্যান’ পূর্ব হইতেই আছে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মানিয়াই তাহা করা হইয়াছিল। যাহা নাই, তাহা বাস্তবায়ন; কিংবা— উপযুক্ত ও নিয়মিত পর্যালোচনা। তাহা না হইলে বিশেষত ভাসমান ধূলিকণার ন্যায় বায়ুদূষকের মাত্রা কলিকাতা-সহ সাতটি শহরে মাত্রাতিরিক্ত হওয়া সত্ত্বেও হেলদোল নাই কেন? নাগরিক এই সব তত বুঝেন না বলিয়া? যতই দূষণ হউক, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি বহতা রাখিতে কলকারখানা ও শিল্প চালাইয়া যাইতে হবে বলিয়া? দিল্লির ন্যায় দূষিত শহরের জন্য অরবিন্দ কেজরীবাল সম্প্রতি দশ দফা অ্যাকশন প্ল্যান ঘোষণা করিয়াছেন, তাহাতে রাজধানীর বায়ুদূষণ মোকাবিলার পন্থাগুলি স্পষ্ট উল্লিখিত: অতিদূষণের স্থানগুলির উপর নজরদারি, বিশেষ দল গড়িয়া নির্মাণস্থল পরিদর্শন, পরিবেশবিধি না মানিলে জরিমানা ও কঠোর দণ্ডবিধান, যানদূষণ রুখিতে পুরাতন গাড়ি বাতিল, গাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণ শংসাপত্র যাচাই, ফসলের গোড়া ও আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করা ইত্যাদি। বুঝিতে বেগ পাইতে হয় না, রাজধানীর ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নের মূলে রহিয়াছে একেবারে গোড়ায় গিয়া কাজ করা, স্থানীয় স্তরে বায়ুদূষণের উৎসগুলি চিহ্নিত করিয়া দূষণ নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া— স্রেফ উপর উপর পর্যবেক্ষণ নহে।
কলিকাতা-সহ এই রাজ্যের জন্যও একই সচেষ্টতায় বায়ু দূষণরোধী অ্যাকশন প্ল্যান-এর বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। বাসস্থান বা শিল্প নির্মাণস্থল, যানবাহন, এইগুলি এই শহর ও রাজ্যের ক্ষেত্রেও বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। সরকার চাহিলেই এইগুলির দূষণ-আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাশ টানিতে পারে। কলিকাতার রাস্তায় চলা যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণ-সহ অন্যান্য কাগজপত্র পরীক্ষায় প্রশাসন ইদানীং যথেষ্ট কঠোর, এই কঠোরতা ও তৎপরতা শুধু মহানগরেই নহে, সমগ্র রাজ্যব্যাপী সঞ্চারিত হওয়া দরকার। বায়ুদূষণ মোকাবিলায় অ্যাকশন প্ল্যান কী ভাবে কাজ করিতেছে, কোন কোন ব্যবস্থা করিতেছে, তথ্যপরিসংখ্যান সহযোগে তাহা নিয়মিত, স্পষ্ট ও স্বচ্ছ ভাবে প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন। নাগরিকের বুক ভরিয়া শ্বাস ও বিশুদ্ধ বাতাসের আশ্বাস নিশ্চিত করিতে এই স্বচ্ছতা ও সক্রিয়তার বিকল্প নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy