আবারও গ্রেফতার করা হল গুজরাতের দলিত নেতা, বিধায়ক জিগ্নেশ মেবাণীকে। ‘আবারও’ বলতে হচ্ছে, কারণ অসমের কোকরাঝাড় জেলা আদালত তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার অব্যবহিত পরেই ফের অন্য অপরাধের অভিযোগে এই গ্রেফতার। প্রথম বার ‘অপরাধ’ ছিল স্রেফ একটি টুইট— নাথুরাম গডসে, গুজরাত হিংসা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যার বিষয়বস্তু। তার জেরে অভিযোগ আনা হয়েছিল সুদূর অসমে, অসম পুলিশ গুজরাত গিয়ে মধ্যরাতে তাঁকে গ্রেফতার করে ট্রানজ়িট রিমান্ডে নিজেদের রাজ্যে উড়িয়ে এনেছিল। কিন্তু কোকরাঝাড় জেলা আদালত সেই মামলায় জামিনের আবেদন মঞ্জুর করার পরে এ বার জিগ্নেশকে গ্রেফতার করল বরপেটা পুলিশ। এ বার অভিযোগ আরও গুরুতর, হেফাজতে থাকাকালীন মহিলা পুলিশকর্মীকে অশ্লীল উক্তি, হেনস্থা, অশোভন স্পর্শ করেছেন জিগ্নেশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪, ৩৫৫, ৩২৩, ২৯৪ ধারায় গ্রেফতার, শ্লীলতাহানির অপরাধের ৩৫৪ ধারাটি জামিন-অযোগ্য! খবর এসেছে, অসমের গোয়ালপাড়ায় আরও একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। সুতরাং মুক্তি এখন অধরা।
অপছন্দের বা বিরোধী মতাদর্শের মানুষকে রাজনৈতিক কৌশলে অপদস্থ করার ছক নতুন নয়। আগে তবু কিছু রাখঢাক, কিছু চক্ষুলজ্জা ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক কালে বিজেপি এই ছক এত বার এত জায়গায় নির্লজ্জ ভাবে কাজে লাগাচ্ছে যে, ভিতরের বার্তাটি জলের মতো পরিষ্কার: ক্ষমতার সমালোচনা করলে, শাসকের চক্ষুশূল হলে এই ভারতে সাধারণ নাগরিক, শিক্ষক, কবি, সমাজকর্মী, ছাত্রনেতাকে তো বটেই, এমনকি বিরোধী জনপ্রতিনিধিকেও ক্ষমতার বলে, আইনে ফাঁসিয়ে ও পুলিশি জুলুমে নাস্তানাবুদ করা হবে, আদালত তথা বিচারবিভাগ এক মামলায় জামিনের আবেদন মঞ্জুর করতে না করতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আবারও একাধিক এফআইআর দায়ের হবে অন্যত্র। বিজেপির আমলে এটাই এখন দস্তুর, প্রথমে নেতৃত্ব তথা ক্ষমতাবিরোধী মন্তব্যমাত্রকেই সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের, সম্প্রদায়-সংঘর্ষের ইন্ধন বলে দাগিয়ে দেওয়া, পান থেকে চুন খসলে ধর্মীয় চেতনায় আঘাত লেগেছে বলে তর্জন— যে প্রতিটি অভিযোগে জিগ্নেশ গোড়ায় অভিযুক্ত ছিলেন। যখন আদালতে সেই অভিযোগ ধোপে টিকল না, তখনই আরও স্পর্শকাতর অভিযোগ দায়ের করা, জামিন-অযোগ্য ধারা এনে ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ করা। এ-হেন ক্রূর ও কূট বুদ্ধির তুলনা আর কোথায়!
দিনের শেষে ক্ষমতার মরিয়া, নির্লজ্জ প্রতিহিংসার কৌশল ছাড়া এ আর কিছুই নয়। নয়তো সংবিধান-স্বীকৃত, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারধন্য এই ভারতে স্রেফ একটি টুইটের জেরে দূর রাজ্যের পুলিশ চব্বিশ ঘণ্টা না গড়াতে বাড়ি এসে নেতাকে গ্রেফতার করত না। জিগ্নেশ-কাণ্ডে মূল অভিযোগকারী সোজাসুজি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে কোনও নেতিবাচক মন্তব্য বিজেপি কর্মীদের আহত করে, তাই জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক হতে হবে, পুলিশি অভিযোগে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে। জিগ্নেশের বিরুদ্ধে আনা নতুন অভিযোগের পাহাড়ে এ বার স্পষ্ট ফুটে উঠল অমোঘ বার্তাটি: শাসকের চরম বিদ্বেষ, হিংসা, প্রতিশোধপরায়ণতাই এই ভারতে অপ্রিয়, বিরুদ্ধস্বরের ভবিতব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy