রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা দিবার যে ব্যবস্থা চালু আছে, এবং যথেচ্ছ ব্যবহৃত হইয়া থাকে, তাহা কি আদৌ প্রয়োজনীয়? প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সুরক্ষার প্রয়োজন অনস্বীকার্য, রাষ্ট্রের স্বার্থেই তাঁহাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা বিধেয়। কিন্তু, ভারতের রাজনৈতিক-সামাজিক পরিমণ্ডলে রাষ্ট্রপ্রদত্ত নিরাপত্তার দ্যোতনা তাহার ব্যবহারিক মূল্যের বহু অধিক— তাহা সামাজিক মর্যাদার অভিজ্ঞান হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ছোট-বড় সকল মাপের নেতা, এবং রাজনীতির বাহিরেও সমাজের বিবিধ ক্ষেত্রের প্রভাবশালীরা এই নিরাপত্তা পাইয়া থাকেন; যাঁহারা এখনও নিরাপত্তা পান নাই, অথবা নিজেদের মতে ‘যথেষ্ট’ নিরাপত্তা— অর্থাৎ, অগ্রপশ্চাতে যে পরিমাণ বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী থাকিলে জনসমক্ষে নিজেকে কেউকেটা বলিয়া প্রমাণ করা চলে— পান নাই, তাঁহারা নিয়ত তদবির করিয়া চলেন। সেই উদ্যোগ যে সচরাচর বিফল হয় না, চারিদিকে তাহার প্রমাণ দৃশ্যমান।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে নবনির্বাচিত বিরোধী দলের কার্যকলাপ প্রশ্নগুলি আরও এক বার স্মরণ করাইয়া দিল। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সুপারিশে রাজ্যের সকল বিজেপি বিধায়ককে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে নিরাপত্তা দেওয়া হইয়াছে। কেহ কেহ দলীয় কর্মী ও ভোটার হইতে দূরত্ব রচিত হইবার ভয়ে তাহা গ্রহণে অনিচ্ছুক, কিন্তু নেতৃত্ব নাছোড়বান্দা। এক সাংসদ আবার কেন্দ্রীয় ওয়াই প্লাস শ্রেণির নিরাপত্তা পাইবার পরে কেন রাজ্য সরকারের সুরক্ষা বলয় প্রত্যাহৃত হইল, তাহা লইয়া ক্ষুব্ধ। প্রশ্ন হইল, রাজনৈতিক বা অপরাপর কারণে কোনও ব্যক্তি নিরাপত্তার অভাব বোধ করিতেই পারেন, কিন্তু তৎক্ষণাৎ তাঁহাকে রাষ্ট্রীয় অর্থব্যয়ে সুরক্ষা সরবরাহ করা হইবে কেন? যিনি আপনাকে অসুরক্ষিত বোধ করিবেন, তিনি আপনার বা দলের খরচে তাহার বন্দোবস্ত করিতে পারেন। কিন্তু, টাকা দিয়াও পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা কেনা যাইবে না। এইগুলি পরিষেবা প্রদানকারী বাণিজ্যিক সংস্থা নহে— পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর একমাত্র দায়বদ্ধতা রাষ্ট্রের নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নেতারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করিলে বাজারে অনেক সংস্থা আছে— তাহাদের নিকট কিনিয়া লউন। রাষ্ট্রের নিকট যে ব্যক্তির জীবন দেশের একশত চল্লিশ কোটি মানুষের জীবনের তুলনায় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া প্রতিভাত হইবে, এবং যে গুরুত্বের কথাটি জনপরিসরে যুক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠা করা যাইবে, একমাত্র তাঁহারই রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে নিরাপত্তায় ন্যায্য অধিকার থাকিতে পারে।
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী নেতাদের এহেন নিরাপত্তা লাভের দ্যোতনা কিছু ভিন্ন। বিজেপির সদ্যনির্বাচিত বিধায়কদের জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করিবার অর্থ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়, এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তারক্ষায় বিজেপি নিজেদের অনাস্থা জ্ঞাপন করিতেছে। রাজনীতির ময়দানে এমন চাপান-উতোর চলিয়াই থাকে। বিজেপি অবশ্য রাজভবনকেও এই খেলায় নামাইয়া দেয়। কিন্তু, একটি কথা স্পষ্ট বুঝিয়া লওয়া প্রয়োজন। রাজনীতির তরজায় যাহা চলে, সাধারণ মানুষের কষ্টোপার্জিত অর্থে কোনও ক্রমেই তাহা চলিতে পারে না। রাজকোষের টাকা উড়াইয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনৈতিক বার্তা প্রদানের অধিকার বিজেপিকে দেশের মানুষ দেয় নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy