শিক্ষার অধিকার ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তা সংবিধান-স্বীকৃত, এবং ধর্ম-বর্ণ-আর্থসামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের সমান প্রাপ্য। তাই শিক্ষাকে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার স্তরে নামিয়ে আনা এক অর্থে মৌলিক অধিকারের মূল সংজ্ঞাটির অপমান। অথচ, পশ্চিমবঙ্গে ঠিক তেমনটাই চলছে। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের সমগ্র শিক্ষা অভিযান প্রকল্পের অধীনে এই রাজ্যের জন্য ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ পর্বের জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ছিল ৭,৮৫৩.৬৫ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাদ্দ অর্থের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ইতিমধ্যেই ৬,০৪৯.৫৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১,৮০০ কোটি টাকা অনুদান কেন্দ্র আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ। এর কারণ, প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচিত বিদ্যালয়ের নামের আগে ‘প্রধানমন্ত্রী’ কথাটি যুক্ত করতে হত। রাজ্য তাতে অসম্মত বলে এই ‘শাস্তি’।
রাজ্যের আপত্তিকে উড়িয়ে দেওয়া চলে না। বাস্তবিকই অধিকাংশ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও নাম যুক্ত করা এক প্রকার অসুখে পরিণত হয়েছে। টিকাকরণের শংসাপত্র থেকে ট্রেনের কামরা— সর্বত্রই নামমাহাত্ম্য প্রচারের দৃষ্টিকটু আধিক্য বলে দেয় যে কেন্দ্রের নানা প্রকল্পকে নাগরিকের প্রাপ্য অধিকারের বদলে প্রধানমন্ত্রীর ‘দয়ার দান’ বলে দেখানোর চেষ্টা চলে। এর অনৈতিকতা ভোটসর্বস্ব মানসিকতার রাজনীতিবিদদের মগজস্থ করানো মুশকিল। সুতরাং, নাম নিয়ে দড়ি টানাটানি অব্যাহত। যেমন, কেন্দ্রের পিএম-শ্রী প্রকল্পে স্থির করা হয়েছিল ১৪,৫০০-র অধিক স্কুলকে বাড়তি অর্থসাহায্য করে অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধা প্রদান করা হবে। নিয়মানুযায়ী, রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে পিএম-শ্রী প্রকল্প প্রয়োগ করতে হলে একটি ‘মউ’ স্বাক্ষর করতে হয় বিদ্যালয় শিক্ষা ও সাক্ষরতা মন্ত্রক এবং শিক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে। দেশে একমাত্র তিনটি রাজ্য ছাড়া অন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি তা স্বাক্ষর করেছে। ঘটনাচক্রে এই তিনটি রাজ্যই বিরোধীশাসিত, এবং পশ্চিমবঙ্গ তাদের মধ্যে অন্যতম। ‘পিএম-শ্রী’ প্রকল্পে বিদ্যালয়ের নামের আগে ‘প্রধানমন্ত্রী’ শব্দটি যোগ করার নিয়ম নিয়ে বিরোধী রাজ্যের আপত্তি। এবং, অভিযোগ, তার থেকেই বরাদ্দ আটকে দেওয়া।
মুশকিল হল, বরাদ্দ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত, অবহেলিত হচ্ছে সমগ্র রাজ্যের শিক্ষার্থীরা। ঠিক একই ভাবে আবাস যোজনা বা গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রেও দু’পক্ষের অনমনীয় মানসিকতার খেসারত দিতে হয়েছে সাধারণ নাগরিককে। শিক্ষা কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ অধিকার। সুতরাং, তাতে কোনও একটি পক্ষের লাভের কড়ি ঘরে তোলার মানসিকতা মূল উদ্দেশ্যটিকে নষ্ট করে দেয়। দুই পক্ষের লড়াইয়ে যে টাকা আটকে গিয়েছে, বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজে তা ব্যয় করা গেলে রাজ্যের শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটত। রাজনৈতিক দলগুলিকে বুঝতে হবে পারস্পরিক বিরোধিতার জন্য ভোটের ময়দান পড়ে রয়েছে। উন্নয়নমূলক প্রকল্প সেই বিরোধিতার ক্ষেত্র হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত যোজনা বা প্রকল্প চালু করা দুর্ভাগ্যজনক ঠিকই, কিন্তু ভারতে সেই ট্র্যাডিশন নতুন নয়, কংগ্রেস আমলেই তার সূত্রপাত। মাঝখান থেকে নামের বাধায় আটকে গেল রাজ্যের শিক্ষারথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy