Advertisement
E-Paper

অভিসন্ধি

গণতন্ত্রের স্বার্থে সেই স্বৈরগন্ধী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা বিরোধী রাজনীতির দায়িত্ব। বৃন্দা কারাট সেই দায়িত্ব পালন করেছেন।

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৫৯
Share
Save

কিসের এত তাড়া? শীর্ষ আদালত ঠিক এই ভাষায় প্রশ্নটি করেনি বটে, কিন্তু তা করাই যায়। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জহাঙ্গিরপুরীতে ‘বেআইনি নির্মাণ’ ভাঙার সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরও কেন বিজেপি-পরিচালিত পুরসভা বুলডোজ়ার নিয়ে হাজির হল, গুঁড়িয়ে দিতে আরম্ভ করল দোকান, ঘর, মসজিদের সদর দরজা? এই প্রশ্নের রাজনৈতিক উত্তরটি সন্ধান করা জরুরি নিশ্চয়ই, কিন্তু তারও আগে শাসকদের প্রশাসনিক ধৃষ্টতার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করা প্রয়োজন। নাগরিক সমাজ বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের কথা বাদই থাক, দেশের শীর্ষ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশেরও আর তোয়াক্কা করে না সরকার, দ্ব্যর্থহীন ভাবে তা বুঝে নিতে হবে। সংবিধানের আদর্শকে অবজ্ঞা করার অভ্যাস তারা দীর্ঘ দিনই রপ্ত করেছে। জহাঙ্গিরপুরীর উচ্ছেদকাণ্ডেও সেই অভ্যাস স্পষ্ট। তাদের রাজনীতি যা চায়, তার পথে কোনও বাধা মানতেই কেন্দ্রীয় সরকার নারাজ। সেই বাধার নাম সংবিধান হলেও নয়, শীর্ষ আদালত হলেও নয়। তুলনাটি সরকার-প্রিয় গৈরিকবাহিনীর না-পসন্দ হতে পারে, কিন্তু বিজেপির ভঙ্গি দেখলে কালাপাহাড়ের কথা মনে পড়তে পারে।

অবশ্যই গণতন্ত্রের স্বার্থে সেই স্বৈরগন্ধী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা বিরোধী রাজনীতির দায়িত্ব। বৃন্দা কারাট সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। আদালতের নির্দেশ হাতে নিয়ে তিনি বুলডোজ়ারের পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর প্রতিরোধের সামনে থামতে বাধ্য হয়েছে শাসকের ধ্বংসরথ। সে দিনের উচ্ছেদ বন্ধ করিয়েই থামেননি বৃন্দা, তিনি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই উচ্ছেদের মূলে রয়েছে সাম্প্রদায়িক বিভাজন, এই দাবি করে আদালতের কাছে উচ্ছেদ বন্ধ করার আবেদন করেছেন। অর্থাৎ, গণতন্ত্রে বিরোধীর ভূমিকা ঠিক যেমনটি হওয়া উচিত, প্রবীণ সিপিআইএম নেত্রী অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করেছেন। প্রসঙ্গত, তাঁর দল সব ক্ষেত্রে এমন অগ্রণী ভূমিকা নেয়, তিনিও সম্ভবত এমন দাবি করবেন না। কিন্তু, জহাঙ্গিরপুরীর ঘটনাক্রমে বিরোধী রাজনীতির সার্বিক নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে তিনি যে অত্যুজ্জ্বল ব্যতিক্রম, এ কথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। সংসদের কক্ষ থেকে ওয়াকআউট, এবং টুইটারে বিপ্লব— এর বাইরেও যে আজকের ভারতে বিরোধী রাজনীতির অস্তিত্ব আছে, বৃন্দা কারাট সেই প্রায়-বিস্মৃত কথাটি মনে করিয়ে দিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস বা আম আদমি পার্টির মতো স্বঘোষিত বিজেপি-বিরোধী দলগুলি যা করতে চায়নি, কংগ্রেসের মতো ‘সর্বভারতীয় পার্টি’ যা করতে পারেনি, অকিঞ্চিৎকর রাজনৈতিক শক্তি নিয়েও বৃন্দা কারাট সেই কাজটি করে নাগরিক সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

শুরুর প্রশ্নটিতে ফিরে যাওয়া যেতে পারে— এত তাড়া কিসের? সরকারি আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন যে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ নয়, হনুমান জয়ন্তীর দিন ঘটা সাম্প্রদায়িক সংঘাতের প্রতিক্রিয়াও নয়, এই উচ্ছেদ নেহাতই আইনানুগ, নাগরিক কর্তব্য। কথাটিতে বিশ্বাস করা কঠিন। দিল্লিতে ১৭৩১টি বেআইনি কলোনি রয়েছে, এবং সেখানে জনসংখ্যা পঞ্চাশ লক্ষেরও অধিক, শীর্ষ আদালতেই বলেছেন আইনজীবী দুষ্যন্ত দাভে। সমস্ত কলোনি বাদ দিয়ে জহাঙ্গিরপুরীতেই বুলডোজ়ার হানা দিল, তা কি নেহাতই সমাপতন? ঘটনার আগের দিন বিজেপির এক নেতা পুরসভাকে চিঠি লিখে জহাঙ্গিরপুরীর ‘দাঙ্গাবাজ’দের অবৈধ নির্মাণের দিকে নজর দিতে বললেন, তা-ও সমাপতন? না কি, বিজেপি বার্তা দিচ্ছে, ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে মুসলমানদের উপর ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ হামলাই চূড়ান্ত নয়, তার উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও ক্রমেই আরও নিয়মিত হয়ে উঠবে? গোমাংস থেকে হিজাব, বিজেপির সংখ্যালঘু নীতি নিয়ে খুব একটা অস্পষ্টতা থাকার আজ আর কোনও কারণ নেই।

Delhi Jahangirpuri Violence Riot

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}