Advertisement
E-Paper

তিন বছর পর

কাশ্মীরে পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, ২০১৯ সালের অগস্টের পর প্রথম বার। ইতিমধ্যে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ঘটেছে, ধারাবাহিক সরকারি নিষ্পেষণ চলেছে।

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২২ ০৫:০৮
Share
Save

কাশ্মীরে পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, ২০১৯ সালের অগস্টের পর প্রথম বার। ইতিমধ্যে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ঘটেছে, ধারাবাহিক সরকারি নিষ্পেষণ চলেছে। কাশ্মীর উপত্যকার জনমত তিন বছর আগে যেমন ছিল, তার থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে অনেকখানি সরেছে বলে আশঙ্কা। উগ্রপন্থীদের প্রতি জনসমর্থন বেশ কয়েক ধাপ বেড়ে গিয়েছে বলে উদ্বেগও। সাধারণ অর্থনৈতিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, ইন্টারনেট, সংবাদমাধ্যম, কোনওটিই স্বাভাবিক ছন্দে কাজ করেনি গত তিনটি বছর। এমন পরিস্থিতিতে আবার কাশ্মীর উপত্যকায় পা রাখার আগে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর সফরের মূল ধুয়োটা নিশ্চয়ই বিশেষ যত্নসহকারে রচনা করতে হয়েছে। তিনি ঘোষণা করলেন বিপুল কর্মসংস্থানের— কাশ্মীরি যুবশক্তির গতিপথ পাল্টে দেওয়ার বার্তা দিলেন। জানালেন, কাশ্মীরে আগের দুই প্রজন্ম যে ভাবে কাটিয়েছেন, এখনকার তরুণতরুণীরা সেই ভাবে জীবন কাটাবেন না। একটি সর্বতো-সঙ্কটগ্রস্ত সমাজে যেখানে স্কুল-কলেজের পড়াশোনা বছরের পর বছর একাদিক্রমে বন্ধ থাকে, স্কুল-কলেজ প্রাঙ্গণে প্রতি মুহূর্ত বিস্ফোরণের ভয়ে ত্রস্ত থাকতে হয়— এই সব প্রতিশ্রুতি শুনে শ্রোতাদের কী রকম লাগল, বোঝা মুশকিল। সন্দেহ হয়, ইতিমধ্যেই একাধিক প্রজন্মের অস্বাভাবিক রকমের অবরুদ্ধ ও বঞ্চিত জীবনে নিক্ষিপ্ত কাশ্মীরি মন এই সব ঘোষণায় শান্তির দিশার বদলে নিষ্ঠুর পরিহাস শুনতে পাবে। সত্যিই যদি কখনও অর্থনৈতিক সুযোগ চার দিকে নতুন সমারোহে আবির্ভূত হয়, তবেই একমাত্র এ সব কথা বিশ্বাস করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব।

অচ্ছে দিন-এর প্রবক্তা ভালই জানেন আশাভঙ্গের সম্ভাবনা। যুবসমাজকে চাকরি ও জীবিকা নির্বাহের নতুন স্রোতে ভাসিয়ে দেওয়া যেতে পারে তখনই, যখন মোটের উপর একটি শান্তি ও স্থিতির আবহ তৈরি থাকে। অনুকূল পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নতির পরিবেশ তৈরি করা অসম্ভব। কে করবেন লগ্নি, কিংবা ব্যবসা, কিংবা চাকরি, যদি এক দিকে সেনাবাহিনীর চাপ ও অন্য দিকে উগ্রপন্থী হামলা অব্যাহত থাকে? কোনও অঞ্চলের যুবশক্তির আস্থা হারিয়ে ফেললে তাকে আর উন্নয়ন-কাজে ফিরিয়ে আনা সহজ নয়— কাশ্মীরে মোদীর প্রতিশ্রুতি রূপায়ণ কোনও মতেই সহজ হবে না। এ সবই প্রধানমন্ত্রী জানেন, কিন্তু তবু তাঁকে রাজনীতির প্রয়োজনেই শূন্যগর্ভ ঘোষণা চালিয়ে যেতে হয়।

রাজনৈতিক হিসাব নানা ধরনের। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিভিন্ন কোম্পানির অর্থলগ্নির বন্দোবস্তের পিছনে ঘুরপথে কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকতেই পারে, কেননা পাকিস্তানের সঙ্গে এই দেশটির যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ, সম্পর্ক রীতিমতো নিকট। সুতরাং এমন একটি বন্দোবস্তের মাধ্যমে কাশ্মীরি জনসাধারণের কাছে একটি প্রচ্ছন্ন বার্তা পাঠাতে যে মোদী সরকারও উৎসাহী, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। সবচেয়ে বেশি আঘাতকারী অবশ্য কাশ্মীরের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারতীয় গণতন্ত্র বিষয়ক গৌরবকথন। এটুকু নিশ্চয় তাঁরও জানা যে, কাশ্মীর একাই ভারতীয় গণতন্ত্রের ‘নেতি’ হিসাবে গোটা দুনিয়ায় বিজ্ঞাপিত হওয়ার দাবিদার! স্বাধীন ভাবে চলাফেরাই যেখানে অসম্ভব, মানবাধিকারের কোনও স্বীকৃতির প্রশ্ন যেখানে ওঠে না, সেখানে গণতন্ত্রের মূল্য বিষয়ক বক্তৃতা দেওয়ার মধ্যে যেন নুন ছিটানোর প্রয়াস আছে। আমলাতন্ত্রের হম্বিতম্বি-অধ্যুষিত, স্থানীয় শাসনাধিকার-বিরহিত এই একটি ভারতীয় প্রদেশ, যেখানে প্রাদেশিক নির্বাচন পর্যন্ত অনির্দিষ্ট কালের জন্য মুলতুবি করা আছে। প্রধানমন্ত্রী কি ভাবছেন, সেখানকার মানুষের মনে এ সবের কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না? কিংবা তিনি ভাবেন যে, এতই সামান্য প্রতিক্রিয়া হয়, যার নিরাময় কিছু মধুর বাক্যের দুরধিগম্য প্রতিশ্রুতি দিয়েই সম্ভব?

Article 370 PM Modi kashmir

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।