২০১৪ সাল থেকেই দিনমজুরদের আত্মহত্যার সংখ্যায় দ্রুত বৃদ্ধি উদ্বেগ তৈরি করেছে। প্রতীকী ছবি।
ভারতে যত মানুষ আত্মহত্যা করেন, তাঁদের প্রতি চার জনে এক জন দিনমজুর। সম্প্রতি সংসদে একটি প্রশ্নের উত্তরে ২০১৯-২১ সালের এই তথ্য পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র (এনসিআরবি) এই তথ্য অপ্রত্যাশিত নয়— ২০১৪ সাল থেকেই দিনমজুরদের আত্মহত্যার সংখ্যায় দ্রুত বৃদ্ধি উদ্বেগ তৈরি করেছে। তবু, ২০২১ সালে প্রতি দিন গড়ে ১১৫ জন দিনমজুর আত্মহত্যা করেছেন, ২০১৯-এর তুলনায় ২০২১-এ আত্মঘাতী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে বারো হাজার, এমন তথ্য আঘাত করতে বাধ্য। এই দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন করেছেন পরিসংখ্যান প্রদর্শনের পদ্ধতিকে। তাঁদের আশঙ্কা, কৃষক আত্মহত্যার জন্য সরকার প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ায় এখন খেতমজুরদের একাংশকে রাখছে দিনমজুরের সারণিতে। তথ্য থেকে এর কিছু সমর্থন মেলে। ২০১৬ সালের পর থেকে একাদিক্রমে চার বছর কৃষিক্ষেত্রে আত্মহত্যার সংখ্যা কমেছে— ১১,৩৭৯ (২০১৬) থেকে ১০,২৮১ (২০১৯)। এই ঘাটতি দেখা গিয়েছে প্রধানত কৃষিমজুরদের সংখ্যায়। অন্য দিকে, দিনমজুরদের আত্মহত্যার সংখ্যা ১৫,৭০০ (২০১৪) থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩২,৬০০ (২০১৯)। খেতমজুর আর দিনমজুরের পার্থক্য করা হয় কেবল তাঁর নিযুক্তির ক্ষেত্রের নিরিখে, এবং অনেক খেতমজুরই অকৃষিক্ষেত্রেও কাজ করেন। তাই দিনমজুরের সঙ্কটের সরকারি চিত্রের মধ্যে কৃষির সঙ্কটও অনেকখানি ঢুকে রয়েছে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। রাজ্যগুলোও সঙ্কটের চিত্রকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করে, যেমন পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্য কৃষক-আত্মহত্যার সংখ্যা শূন্য বলে দাবি করে।
পরিসংখ্যান যদি বাস্তব চিত্রকে প্রতিফলিত করে, তবে প্রতিকারের সূত্রও নির্দেশ করতে পারে। তথ্য অস্বচ্ছ হলে তার সুযোগ কম। ২০১৬ সালের পর থেকে এনসিআরবি কৃষকদের আত্মহত্যার কারণ প্রদর্শন করা বন্ধ করেছে। অথচ, পূর্ববর্তী বছরগুলিতে প্রাপ্ত তথ্য দেখিয়েছিল যে, আর্থিক সঙ্কট ও ঋণগ্রস্ততা কৃষক-আত্মহত্যার প্রধান কারণ— দশ জনে ছ’জনই সেই কারণে আত্মঘাতী হয়েছেন। আজ দিনমজুরদের আত্মহত্যার বিপুল সংখ্যাও বিশ্লেষণ দাবি করছে। কর্মহীনতা, স্বল্প অথবা অনিয়মিত আয়, ঋণগ্রস্ততা, অসুস্থতা, সামাজিক লজ্জা— কী কারণে এত শ্রমজীবী মানুষ মৃত্যুতে নিষ্কৃতি খুঁজছেন? উত্তর মেলে না শ্রম মন্ত্রকের বক্তব্য থেকে।
শ্রমিক আত্মহত্যা প্রতিরোধে কেন্দ্র কী করছে, এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রমমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ যাদব কেবল অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, বিমা, স্বাস্থ্য বিমার ফিরিস্তি দিয়েছেন। কোভিড অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও শহরে ও গ্রামে শ্রমজীবী মানুষের জন্য যথেষ্ট কাজ রয়েছে কি না, তা থেকে প্রাপ্ত মজুরি জীবন নির্বাহের পক্ষে যথেষ্ট কি না, সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়েছে কেন্দ্র। ফলে, গ্রামে ভূমিহীন শ্রমজীবী মানুষের রোজগারের উপায় সঙ্কুচিত হবে, মজুরি বাড়ার সম্ভাবনাও কমবে, তার সম্ভাবনা যথেষ্ট। অথচ, গ্রামীণ মজুরির বৃদ্ধির হারের চাইতে অনেক দ্রুত বেড়েছে মূল্যস্ফীতির হার। আর্থিক সঙ্কট প্রতি দিন শতাধিক শ্রমিককে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কি না, তার উত্তর খোঁজা দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy