Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
2021 West Bengal Assembly Election

আর নহে, আর নয়

আজও এই রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা লইয়া উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে।

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৬
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন আসিতেছে, হিংসা বাড়িতেছে। এই রাজ্যের জনজীবনে সাধারণ ভাবে হিংসার প্রকোপ অন্য অনেক রাজ্যের তুলনাতেই কম। তাহা কেবল প্রচলিত ধারণার ব্যাপার নহে, বিভিন্ন অপরাধের সরকারি পরিসংখ্যানেও তাহার প্রতিফলন ঘটিয়া থাকে। বলা বাহুল্য, এই বিষয়ে আত্মসন্তুষ্টির কিছুমাত্র অবকাশ থাকিতে পারে না। এই শতাব্দীর প্রথম দশকে পশ্চিমবঙ্গকে ‘শান্তির মরূদ্যান’ বলিয়া এক ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধির পরিচয় দেন নাই, তাঁহাকে সেই উক্তির জন্য বিস্তর ব্যঙ্গবিদ্রুপ শুনিতে হইয়াছিল। আজও এই রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা লইয়া উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু সেই উদ্বেগ বহুগুণ বাড়িয়া যায় রাজনৈতিক হিংসার অস্বাভাবিক মাত্রায়। বিশেষত নির্বাচনী রাজনীতির সহিত জড়িত হিংসার মাপকাঠিতে সারা দেশের মধ্যে এই রাজ্য ইদানীং নিরন্তর এক নম্বর স্থানটি অধিকার করিয়া থাকে। অন্য একাধিক রাজ্য এই বিষয়ে তাহাদের পুরাতন ঐতিহ্যকে বহুলাংশে বিদায় জানাইয়াছে, সেই সব স্থানে নির্বাচনী রাজনীতিতে নানাবিধ অনাচার চলিলেও প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ, রক্তারক্তি, খুনজখমের ঘটনা কার্যত বিরল। প্রাক্-নির্বাচনী হিংস্রতার ঘটনা যখন ঘটে, তখনও তাহা ষড়যন্ত্রের পরিণাম, যেমন উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে ২০১৩ সালের ঘটনাবলি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হিংসা প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই যুযুধান রাজনৈতিক দল অথবা একই দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের রেষারেষির পরিণাম। অর্থাৎ, তাহা কার্যত দলীয় রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি রূপ। রাজনৈতিক ‘লড়াই’ এই রাজ্যে আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধ— গুলি, বারুদ, বোমা, সম্মুখসমর হইতে অতর্কিত আক্রমণ, সবই সেই যুদ্ধের অঙ্গ।

এই ধারাটি নূতন নহে। যে ‘দখলের রাজনীতি’ এই হিংসার উৎস, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট জমানাতেই তাহা প্রবল আকার ধারণ করিয়াছিল, এলাকা দখল হইতে শুরু করিয়া ব্যালট বাক্স দখল অবধি সর্বব্যাপী হিংস্রতার সেই ইতিহাস সর্বজনবিদিত। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি এবং প্রত্যাশার পথে ক্ষমতায় আসিয়া তৃণমূল কংগ্রেস সেই ইতিহাস বদলাইতে পারে নাই, বদলাইতে চাহিয়াছে এমনও নহে, বরং হানাহানির রাজনীতি নূতন মাত্রা অর্জন করিয়াছে, রেষারেষির রূপ আরও কদর্য, বিশেষ করিয়া দুর্নীতির বখরা লইয়া মুষলপর্ব অবিরত চলিয়া আসিতেছে। আর আজ? রাজনীতির ময়দানে বিজেপি নূতন খেলোয়াড় হিসাবে অবতীর্ণ। তাহার নায়কনায়িকাদের মুখে সোনার বাংলা গড়িবার অনর্গল চিৎকারে কাকচিল বসিতে পারিতেছে না। কিন্তু এই দলের আচরণে রাজনৈতিক হিংসা বা হিংসার রাজনীতি কমিবার বিন্দুমাত্র লক্ষণ নাই, বরং সেই আচরণ কেবলই হিংসায় দ্বিগুণ ইন্ধন দিতেছে। দলনেতারা ক্রমাগত যে ভাষায় ও ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করিয়া ক্ষমতা দখলের জন্য হুঙ্কার দিয়া চলিয়াছেন, তাহার সমান্তরাল প্রক্রিয়ায় যে ভাবে, কেবল শাসক দল নহে, যত্রতত্র হইতে দল ভারী করিবার নির্বিচার উদ্যোগ চালাইতেছেন, তাহাকে রোমহর্ষক বলিলে অত্যুক্তি হয় না। সর্বাপেক্ষা উদ্বেগের কারণ, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি। শাসক দলের ওজনদার নেতা ও মন্ত্রী সদ্য বিরোধী শিবিরে নাম লিখাইয়া প্রকাশ্য ভাষণে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ‘পাকিস্তানি’ খুঁজিয়া পাইতেছেন— ইহা পশ্চিমবঙ্গে নূতন বইকি। এই নূতন ধারাটি রাজনৈতিক হিংসাকে এক সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র স্তরে লইয়া যাইতে পারে, যাহার অনুমানও অত্যন্ত ভীতিপ্রদ। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিককে অবিলম্বে এই আশঙ্কা প্রতিহত করিবার কাজে মন দিতে হইবে। যে রাজনৈতিক দল বা নেতানেত্রী রাজ্যের কল্যাণ চাহেন, তাঁহাদেরও এই মুহূর্তে হিংসার রাজনীতির অবসান ঘটাইবার সঙ্কল্প করিতে হইবে। সুস্থ, উন্নয়নমুখী রাজনীতিই সেই সঙ্কল্প চরিতার্থ করিবার একমাত্র পথ।

অন্য বিষয়গুলি:

Politics 2021 West Bengal Assembly Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy