Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
G20 Summit 2023

আড়ম্বরের আড়ালে

ভারতের নেতৃত্ব-পর্বে সম্মেলনের যতগুলি মন্ত্রী-পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার কোনওটিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন প্রসঙ্গে জি২০-র সদস্যদের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি।

g20 summit.

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:২৫
Share: Save:

রাজধানীতে এখন জি২০ সম্মেলনের সমারোহ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার তাবড় নেতারা এই মঞ্চে উপস্থিত থাকছেন, ভারতের পক্ষে এ এক গৌরবমুহূর্ত। জি৭ থেকে জি২০— এমনিতেই এক সম্প্রসারণের দৃষ্টান্ত, তার মধ্যে এ বার ভারত জোর দিচ্ছে ‘ইনক্লুসিভ’ বিশ্বমঞ্চের উপর। ভারত সরকার কী বলছে, কতটা তার মধ্যে গ্রহণযোগ্য কিংবা বিশ্বাসযোগ্য, সে সব আলাদা প্রশ্ন। তবে একটি প্রাথমিক সমস্যা এই অবকাশে না বলে আলোচনা শুরু করাই অনুচিত। এ বারের বৈঠকে দেখা মিলছে না ভূরাজনীতির দুই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের— চিনের প্রধান শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন আগ্রাসনের পর পশ্চিমের শীর্ষনেতাদের তোপ এড়াতে পূর্বের বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেই অনুপস্থিত থেকেছেন পুতিন, এ বারও তাই। অন্য দিকে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ জিইয়ে রাখতে পরিকল্পিত ভাবেই চিনের সর্বাধিনায়ক নয়াদিল্লিতে এলেন না বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। ফলে, জি২০-র প্রেসিডেন্ট পদটিকে ব্যবহার করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নিজের নেতৃত্বকে যে ভাবে বিজ্ঞাপিত করার পরিকল্পনা করেছিলেন, তা এক দিক থেকে অধরাই থেকে গেল। বিশ্বের মূল দুই শক্তিই যদি সরে থাকে, তা হলে এই বিশ্বশক্তিগোষ্ঠীর মাহাত্ম্যও অনেকাংশে কমে যায়।

লক্ষণীয়, ভারতের নেতৃত্ব-পর্বে সম্মেলনের যতগুলি মন্ত্রী-পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার কোনওটিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন প্রসঙ্গে জি২০-র সদস্যদের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে বালি-তে জি২০-র বৈঠকে প্রায় শেষ মুহূর্তে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো এই গোষ্ঠীর কাছ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে রাশিয়া এবং চিনের কৌশলগত আঁতাঁতের কারণে। এমতাবস্থায়, রাশিয়া ও চিনের উপরে আরও কঠোর পদক্ষেপ করার পক্ষেই পশ্চিমি দেশগুলি। বিশেষত বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং ভূরাজনৈতিক বিবাদের সূত্রে চিনের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে আমেরিকা। ফলস্বরূপ তাদের উন্নত চিপ, যা চিন নিজেদের সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করে বলে মনে করা হয়, আর সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তা ছাড়া, অস্ত্রসাহায্য করে রাশিয়াকে যুদ্ধে পরোক্ষ মদত দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে চিনের বিরুদ্ধে। এ দিকে এক দিকে যেমন এশিয়ায় চিনের আধিপত্য বিস্তার রোধে তার আমেরিকার সহায়তা প্রয়োজন, তেমনই সামরিক স্বার্থে ভারতকে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে রাশিয়ার সঙ্গেও। ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুই তরফকে সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

ফলে দুই রাষ্ট্রনেতার অনুপস্থিতির বিষয়টি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যতই গুরুত্ব না দেওয়ার চেষ্টা করুন না কেন, ভারতের তত্ত্বাবধানে সম্মেলনের সাফল্য নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। শুধু যুদ্ধ নয়, পরিবেশের মতো বৈশ্বিক বিষয়েও কতখানি ঐকমত্য গড়ে উঠবে সেই নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। অন্য দিকে, বৈঠকটি সফল না হলে তার প্রভাব শুধু বাইরে নয়, অন্দরমহলের রাজনীতিতেও যে পড়তে চলেছে, তা বিলক্ষণ জানে মোদী সরকার। ফলে, সমারোহ যতই আড়ম্বরময় হোক না কেন, পরিস্থিতি কঠিন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy