২০১৮ সালে অবাঞ্ছিত কল আটকানোর নিয়ম আনে ট্রাই। প্রতীকী ছবি।
বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার বিপণনের উদ্দেশ্যে আসা অবাঞ্ছিত কল এবং এসএমএস-এর উপরে রাশ টানতে নতুন পদক্ষেপ করছে টেলিকম ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ট্রাই)। বিপণনের জন্য কল বা মেসেজ পাঠানোর আগে গ্রাহকদের সম্মতি নিতে হবে— এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলিকে। আগামী দু’মাসের মধ্যে সংস্থাগুলিকে এর জন্য আলাদা ডিজিটাল পরিকাঠামো গড়ে তুলতে বলা হয়েছে। নতুন পরিকাঠামোয় গ্রাহকের সম্মতি নেওয়া, সেই তথ্যের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সম্মতি বাতিলের সুবিধা থাকতে হবে। এবং সম্মতির জন্য বার্তা দিতে কোড ব্যবহার করা হবে।
২০১৮ সালে অবাঞ্ছিত কল আটকানোর নিয়ম আনে ট্রাই। বাণিজ্যিক কল, অর্থাৎ কোনও পণ্য বা পরিষেবা বিপণনের জন্য ফোন করতে হলে পৃথক লাইসেন্স নিতে হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। এ জন্য আলাদা কোড-সহ তাদের নম্বর দেয় টেলিকম পরিষেবা সংস্থা, যাতে মোবাইল গ্রাহক সেই কোড দেখে বুঝতে পারেন যে, সেটি বাণিজ্যিক কল। ফলে গ্রাহক চাইলে কলটি ধরবেন, না চাইলে নয়। নিয়ম অমান্যে জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে নামী সংস্থা ছাড়াও অনেক বেআইনি টেলিমার্কেটিং সংস্থা সেই লাইসেন্স এড়িয়ে সাধারণ মোবাইল মারফত কল বা এসএমএস করে। যে কারণে গ্রাহকও বুঝতে পারেন না, এটি কোনও বাণিজ্যিক কল-এর প্রচার কি না। দেখা যায়, এই ধরনের টেলিকলাররা একাধিক কানেকশন ব্যবহার করেন এবং ঘন-ঘন সিমও বদলান। কম খরচেই বিনামূল্যে এসএমএস এবং সীমাহীন কলের সুবিধার কারণেই যা সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া, নিয়ম অনুযায়ী টেলিমার্কেটারদের তাঁদের নম্বর রেজিস্টার করাতে এবং অযাচিত কল করার আগে ডু নট ডিসটার্ব (ডিএনডি) পঞ্জি দেখে নিতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এঁরা সেই নিয়মের ধার ধারেন না এবং গ্রাহক অভিযোগ করলে দ্রুত নম্বর বদলে ফেলেন। এই জাতীয় সংস্থাগুলির উপর নজরদারি চালানো মুশকিল, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারাও সহজ নয়। যথেষ্ট সচেতনতার অভাবে বহু গ্রাহক ডিএনডি পরিষেবা চালু করেননি, আবার ডিএনডি পঞ্জিতে নাম থাকা সত্ত্বেও বারংবার ফোন আসে, তবু অভিযোগ জানান না, এমন গ্রাহকের সংখ্যাও কম নয়। ফলে, অনেকের কাছেই মোবাইল ফোন বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
২০২০ সালের প্রথম দিকে একটি সাইবার সুরক্ষা সংস্থা জানায় যে, তারা একটি ফাইল পেয়েছিল যাতে ন্যাশনাল ডু নট কল রেজিস্ট্রি-তে রাখা ন’কোটিরও বেশি ফোন নম্বরের তথ্য ডার্ক ওয়েব-এ বিক্রি হচ্ছিল অতি স্বল্প দামে। ভারত যেখানে একশো কুড়ি কোটি মোবাইল সংযোগ থাকার গর্ব করে, সেখানে তথ্য সুরক্ষার এমন দুরবস্থা সত্যিই দুশ্চিন্তার। নানা সময়ে বিভিন্ন আইন চালু করা সত্ত্বেও অবাঞ্ছিত কল ও এসএমএস-এর সমস্যা আটকানো সম্ভব হয়নি। ফলে, নতুন আইন করেও এই সমস্যার সমাধান হবে কি না, সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আশঙ্কা হয়, সমস্যার সমাধান করতে না পারলে নতুন আইন রূপায়ণের রাজনৈতিক ব্যাধিটি ট্রাই-এর চিন্তাকেও আক্রমণ করেছে। অবাঞ্ছিত কল-এ বিরক্ত না-হওয়ার অধিকার প্রত্যেক গ্রাহকেরই রয়েছে। সেই অধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয়, তা অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে ট্রাই-কে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy