— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কলকাতার ট্র্যাফিক পুলিশের কাজের তালিকায় যোগ হল আরও একটি— ধোঁয়া-ছড়ানো উনুনের উপর নজরদারি। জাতীয় পরিবেশ আদালতের এক নির্দেশে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জেগে উঠেছে, তার জেরে শুরু হচ্ছে এই নয়া অভিযান। কয়লা-কাঠের উনুন দেখলেই তার তথ্য ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মীরা পাঠাবেন লালবাজারের পুলিশ দফতরে, সেখান থেকে সেই তথ্য যাবে জাতীয় পরিবেশ আদালতে। তার পর উনুন-মালিকের জেল-জরিমানা হবে, না কি তাঁকে ‘পরিবেশ সচেতনতা’-র পাঠ পড়ানো হবে, এখনও জানা যায়নি। কেন যে ভারতে যে কোনও সমাধানের সন্ধান শেষ অবধি চোর-পুলিশ খেলায় পর্যবসিত হয়, বোঝা দায়। কয়লা-কাঠের উনুন যিনি জ্বালেন, তিনি নাচার, নিরুপায়। দূষণহীন জ্বালানি কেনার ক্ষমতা তাঁর নেই। রাজনীতির কারবারিদের এ কথা অজানা নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের জ্বালানি নীতি দাঁড়িয়েছে, গোড়া কাটা এবং আগায় জল না দেওয়া। যে জ্বালানির উপরে শহরে দরিদ্র প্রধানত নির্ভর করত, সেই কেরোসিনে ভর্তুকি কেন্দ্র একেবারেই তুলে দিয়েছে। ২০১৪ সালে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল চব্বিশ হাজার কোটি টাকা, এখন যা দাঁড়িয়েছে শূন্যে। অন্য দিকে, ভর্তুকিতে রান্নার গ্যাস দেওয়ার প্রকল্প ‘উজ্জ্বলা যোজনা’-র জন্য যা বরাদ্দ করা হচ্ছে, সে টাকা দরিদ্র পরিবারগুলির চাহিদা ও ক্রয়ক্ষমতার অনুপাতে যথেষ্ট নয়। এলপিজি সিলিন্ডারের দাম হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। সিলিন্ডার প্রতি তিনশো টাকা ভর্তুকি ঘোষণার পরেও রান্নার গ্যাস দরিদ্রের নাগালের বাইরে। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা (২০২৩) দেখিয়েছে, ভারতের গ্রামে অর্ধেকেরও কম পরিবারে গ্যাসে রান্না হয়।
উনুনের অস্বাস্থ্যকর ধোঁয়া দরিদ্রের অপারগতার প্রতিফলন। আক্ষেপ, সরকারি নীতিতে এই বিপন্নতার কোনও প্রতিফলন নেই। সেখানে কেবলই আস্ফালন— আরও কত কোটি নতুন উজ্জ্বলা সংযোগ হল, বছরের পর বছর তার হিসাব দাখিল করা হচ্ছে সংসদে। সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, দরিদ্রের রান্নাঘরে অব্যবহৃত থাকছে উজ্জ্বলা প্রকল্পের এলপিজি সিলিন্ডার। কেন্দ্রেরই তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ সালে অর্ধেকেরও বেশি গৃহস্থালি বছরে চারটি বা তারও কম সিলিন্ডার কিনেছে, যেখানে নিয়মিত ব্যবহার করলে অন্তত সাতটি সিলিন্ডার লাগার কথা। প্রায় দশ শতাংশ গ্রাহক একটিও সিলিন্ডার কেনেননি, এগারো শতাংশ কিনেছেন মাত্র একটি। এটি গড়পড়তা চিত্র। পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে নিয়মিত সিলিন্ডার ব্যবহারের চিত্র আরও করুণ— পশ্চিমবঙ্গে চারটি গৃহস্থালির তিনটিতেই রান্না হয় কাঠ, খড়, ঘাস-পাতা পাটকাঠিতে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিদেবপুর, পাটুলি, পঞ্চসায়র, গরফা প্রভৃতি এলাকায় কয়লার উনুনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অভিজাত এলাকাতেও ফুটপাতে নিয়মিত জ্বলে কয়লার উনুন। নীতি আয়োগের রান্নার জ্বালানি সংক্রান্ত দিকনির্দেশিকা (২০১৯) বলছে, গরিব মেয়েদের ‘সচেতন’ করতে হবে, যাতে তাঁরা কাঠকুটোয় উনুন ধরিয়ে সময় আর স্বাস্থ্য, দুটোই নষ্ট না করেন। নিতান্ত নিরক্ষর মেয়েরাও কি চোখের জ্বালাতেই টের পান না কয়লা বা কাঠের অপকারিতা? এলপিজি-র গুণ প্রচারের দরকার নেই, সচেতন হওয়া প্রয়োজন নীতি প্রণেতাদের। উজ্জ্বলা প্রকল্প সম্পর্কে সংসদে যত দিন বিভ্রান্তিকর, অর্ধসত্য তথ্য দেবে কেন্দ্র, তত দিন দূষণের দায়ে পুলিশের খাতায় নাম উঠবে অগণিত উনুনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy