Advertisement
E-Paper

বোড়ে

বুঝিয়াছেন যে, তাঁহাদের অবস্থা লইয়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ নেহাতই নির্বাচনের স্বার্থে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:৫১
Share
Save

চিনে ধনতন্ত্রের উন্মেষের আদিলগ্নে দেং জিয়াওপিং বলিয়াছিলেন, বিড়াল যত ক্ষণ ইঁদুর ধরিতেছে, তত ক্ষণ তাহার রং কালো না সাদা, তাহাতে কিছু আসে-যায় না। পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র কৃষকও বিড়ালের রং বাছিতে আগ্রহী হইবেন বলিয়া মনে হয় না। কেন্দ্র হইতেই আসুক বা রাজ্য হইতে, তাঁহার হাতে খানিক অর্থসাহায্য পৌঁছাইলেই যথেষ্ট। কথাটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিলক্ষণ জানেন। ইহাও জানেন যে, বাস্তব যাহাই হউক, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধারণাটি আছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার ‘পিএম কিসান’ প্রকল্পের টাকা দিতে চাহিলেও রাজ্য সরকারের অনাগ্রহে তাহা রাজ্যের কৃষিজীবীদের নিকট পৌঁছায় নাই। ফলে, নির্বাচনী প্রচারে প্রসঙ্গটি উঠিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ করিয়া বলিয়াছেন বটে যে, কেন্দ্রীয় সরকারকে তথ্য দেওয়া হইলেও কাজ হয় নাই, কিন্তু কেন্দ্রের টাকা লইতে তাঁহাদের যে অনাগ্রহ প্রকট, এই কথাটি অস্বীকার করিবার কোনও উপায় নাই। প্রধানমন্ত্রী যে আক্রমণটি শানাইতেছেন, তাহার অস্ত্র রাজ্য সরকারই তাঁহার হাতে তুলিয়া দিয়াছে।

প্রশ্ন শুধু কোনও একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প বা ক্ষেত্র লইয়া নহে। কেন্দ্রীয় তহবিল হইতে যে টাকা আসে, তাহা প্রত্যাখ্যান করা বা গ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করায় ক্ষতি রাজ্যের নাগরিকের। রাজ্যেরও। কারণ, রাজ্যের পরিকাঠামো ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে উন্নয়নের চিত্র মুখ্যমন্ত্রী এই বাজেটে আঁকিয়াছেন, তাহার বাস্তবায়নের জন্য অর্থ প্রয়োজন। যত বেশি সম্ভব। ফলে, কেন্দ্রের তহবিল হইতে আসা অর্থ প্রত্যাখ্যান করা সেই উন্নয়ন-সম্ভাবনার ক্ষতিসাধন করাও বটে। এবং, স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে, কেন্দ্রীয় রাজকোষ হইতে যে টাকা আসিতেছে, তাহাও সাধারণ মানুষেরই টাকা, কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি নহে। ফলে, তাহাকে প্রত্যাখ্যান করা, বা লইতে অনাগ্রহ অর্থহীন। বৃহত্তর অর্থে, রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখিতে জানাই প্রশাসনিক সাফল্যের মূলমন্ত্র। বিজেপির সহিত তাঁহার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলিতেই পারে, কিন্তু তাহার দায় যেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে বহন না করিতে হয়। এই প্রসঙ্গে রাজ্যে উৎপাদিত সব ধান রাজ্য সরকারই কিনিবে, এই প্রতিশ্রুতিটিরও উল্লেখ করা প্রয়োজন। ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্তটি একান্তই অর্থনৈতিক— তাহা যদি রাজনৈতিক বিবেচনা দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে বিপদের ঘোর সম্ভাবনা। কতখানি ধান কেনা জরুরি, কোন দামে তাহা কেনা হইবে— এই সিদ্ধান্তগুলি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা গৃহীত হওয়াই বিধেয়। বিজেপির সাঙাততন্ত্রের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক লড়াইয়ের বোঝা যেন রাজ্যের কোষাগারকে বহিতে না হয়।

রাজনীতির দোষে একা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুষ্ট নহেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন রাজ্যের কৃষকদের দুর্দশা দূর করিবার স্বপ্ন ফেরি করিতেছিলেন, ঠিক সেই সময়েই দিল্লির সীমান্তে লক্ষ কৃষক কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অনমনীয় কৃষিনীতির বিরুদ্ধে লড়িতেছিলেন। তাঁহাদের রাজ্যে বিধানসভা ভোট নাই, সেই কারণেই কি তাঁহাদের লইয়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগও নাই? পশ্চিমবঙ্গের কৃষকও সম্ভবত দুইটি পরিস্থিতির বৈপরীত্য হইতে সত্যটি পাঠ করিয়া লইয়াছেন। বুঝিয়াছেন যে, তাঁহাদের অবস্থা লইয়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ নেহাতই নির্বাচনের স্বার্থে। রাজ্যের ভোট মিটিলে উদ্বেগের ঠিকানাও পাল্টাইবে। এই উপলব্ধিটি আনন্দদায়ক হইতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গের, অথবা ভারতের, বৃহত্তম পেশাভিত্তিক জনগোষ্ঠী এই কৃষকরা। তাঁহারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক লড়াইয়ের অস্ত্র, নাগরিক হিসাবে নেতাদের নিকট তাঁহাদের গুরুত্ব ইহার তিলমাত্র অধিক নহে— এই কথাটি তাঁহারা চরম মূল্যে শিখিতেছেন। ঋণের ভারে জর্জরিত, ফসলের দাম না পাইয়া বিধ্বস্ত কৃষক এই বার রাজনৈতিক বোড়ে-র ভূমিকা হইতে নিষ্কৃতি চাহিবেন।

mamata banerjee Central Government Financial help

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।