Advertisement
E-Paper

বিবাদী স্বর

শাসকের অক্ষমতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যদি ক্রমাগত প্রবল ভাবে ধ্বনিত এবং প্রতিধ্বনিত না হয়, গণতন্ত্র কমজোরি হয়ে পড়তে বাধ্য।

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২২ ০৪:২৬
Share
Save

গণতন্ত্রে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের দাম অপরিসীম। শাসকের অক্ষমতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যদি ক্রমাগত প্রবল ভাবে ধ্বনিত এবং প্রতিধ্বনিত না হয়, গণতন্ত্র কমজোরি হয়ে পড়তে বাধ্য। আবার, ঠিক সেই কারণেই, প্রতিবাদী স্বরকে শাসকরা কতটা মনোযোগ সহকারে শুনছেন, প্রতিবাদের সারবত্তা বুঝতে চেষ্ট করছেন এবং সেই অনুসারে আত্মসংশোধনের চেষ্টা করছেন, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র তার উপর অনেকখানি নির্ভর করে। বিরোধী মতের প্রতি কেবল সহিষ্ণুতা নয়, মর্যাদাবোধ যথার্থ গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত। জনসমর্থন বা নির্বাচনী সংখ্যাগরিষ্ঠতা কখনওই এই শর্তের বিকল্প হতে পারে না। গণতন্ত্রের বহিরঙ্গ আবরণের আড়ালে স্বৈরশাসন কী ভাবে তার আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, ইতিহাসে তার বিস্তর প্রমাণ আছে, প্রমাণ আছে সমকালীন দুনিয়াতেও। অতি সম্প্রতি দিল্লিতে একটি সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর করা মন্তব্যগুলি এই পরিপ্রেক্ষিতেই তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর মূল বক্তব্য: নরেন্দ্র মোদীর সরকার কোনও বিরোধিতাই সহ্য করতে পারে না, যে প্রতিবাদ করে তাকেই দমন করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রতিবাদীদের হেনস্থা করতে এক দিকে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘তদন্ত’ নামক অভিযান চালায়, অন্য দিকে পুলিশ প্রশাসন সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে তৎপর হয়ে ওঠে। কংগ্রেস নেতার মতে, এ হল ভারতে ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’র সূচক।

অভিযোগগুলি নতুন নয়, তবে রাহুল গান্ধীর তীব্র মন্তব্যটি উচ্চারিত হয়েছে ওই দিনের ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে। রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ জানাতে কংগ্রেস দিল্লিতে যে রাজনৈতিক সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করেছিল, তা ভেঙে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশ বিপুল বাহিনী নিয়ে তৎপর হয় এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী-সহ বিরোধী নেতানেত্রী ও কর্মীদের নিরস্ত করতে বলপ্রয়োগ করে। সম্প্রতি, সংসদে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে ভাবে মূল্যবৃদ্ধির বাস্তবকেই কার্যত অস্বীকার করেছেন, প্রতিবাদীরা তার বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ জানাচ্ছিলেন। এই অস্বীকারকে তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত মনে করার কোনও কারণ নেই, প্রধানমন্ত্রী-সহ গোটা সরকারই মূল্যবৃদ্ধি, আর্থিক মন্দা এবং বেকার সমস্যার মতো প্রচণ্ড সমস্যাগুলিকে স্বীকার করতেই নারাজ। এই আচরণ জনস্বার্থের পরিপন্থী, এবং মিথ্যাচারের শামিল। তার প্রতিবাদে সরব হওয়া বিরোধী দলের প্রাথমিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অথচ শাসকরা সেই উদ্যোগ দমনে ব্যগ্র।

প্রশ্ন হল, এই বিপদ মোকাবিলার উপায় কী? রাহুল গান্ধী দেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ের কথা বলেছেন। কথাটা নতুন কিছু নয়, শাসকদের নিজস্ব পরিমণ্ডলের বাইরে কার্যত সমস্ত মহল থেকেই এই প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়ের কথা গত কয়েক বছরে বারংবার বলা হয়েছে। কথাটা সম্পূর্ণ সত্য। একমাত্র বিচারবিভাগের উপর এখনও কিছু ভরসা অবশিষ্ট আছে, কিন্তু সেখানেও সংশয়ের মেঘ ঘনঘোর, এবং মাঝে মাঝেই তা ঘোরতর আকার ধারণ করে। ভূতপূর্ব বিচারপতি ও বরিষ্ঠ আইনজীবী-সহ অনেকেই সাম্প্রতিক অতীতে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই অবস্থায় ভারতীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা করার উপায় একটিই: গণতান্ত্রিক উপায়ে বিরোধী রাজনীতির সমন্বয় ও সংগঠন। তা কেবল দলীয় নেতানেত্রীদের অঙ্ক-কষা জোট গঠনের ব্যাপার হতে পারে না, সে জন্য প্রয়োজন যথার্থ জনসংযোগ। মূল্যবৃদ্ধি, মন্দা, বেকারত্ব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দুর্দশা ইত্যাদি সহস্র সঙ্কটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জর্জরিত। আধিপত্যবাদী শাসকের অন্যায় এই সঙ্কটকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে এই সঙ্কটের প্রতিকারে শক্তিশালী উদ্যোগই হতে পারে ভারতীয় গণতন্ত্রের যথার্থ রক্ষাকবচ।

Democracy Protest Opposition Unity

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।