জোশীমঠ: রাস্তায় ফাটল। ফাইল চিত্র।
ভারতের উত্তরাঞ্চলে জোশীমঠ এবং আশপাশের এলাকায় ভূমিধস ও ফাটলের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, এই নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভবিষ্যৎ কত অনিশ্চিত। কেবল এই অঞ্চলই তো নয়, সার্বিক ভাবে হিমালয়ের সুবিস্তীর্ণ সমগ্র পরিসরটিই যে ভয়ানক বিপন্ন হয়ে পড়েছে, সে বিষয়ে বারংবার সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল ঘিরে ভারত এবং চিন যে ভাবে নানা ধরনের কার্যক্রম করে চলেছে, তাতে আগামী দিনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা আরও বহু গুণ বাড়বে। ভারত-চিন উভয় দিকেই পর্বতকে ভেঙে মহাসড়ক গড়ে উঠছে, বসানো হচ্ছে রেললাইন। পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে সুড়ঙ্গ, নির্মিত হচ্ছে বাঁধ ও বিমানবন্দর। সব মিলিয়ে দু’দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার ভূপ্রকৃতির উপরে চাপ পড়ছে প্রবল।
গঠনগত ভাবে হিমালয়ের ভূপ্রকৃতি ভঙ্গুর। ফলে এই অঞ্চলে যে কোনও পরিকাঠামো গড়তে অঞ্চলের ধারণ ক্ষমতা যাচাই এবং তার সাপেক্ষে যথোপযুক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি। পার্বত্য অঞ্চলে পরিকাঠামো নির্মাণ অবশ্য সাম্প্রতিক ঘটনা নয়, ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে সামরিক ছাউনি-সহ নানা নির্মাণ চলে এসেছে। কিন্তু গত কয়েক দশকে ভারত-চিন দুই দেশের দৌলতে সেই প্রয়াস বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাহাড় জুড়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় গড়ে উঠেছে নতুন সরকারি ভবন, অপরিকল্পিত বাজার, বহুতল, ঘিঞ্জি সড়ক। ন্যূনতম সুরক্ষাবিধিটুকুও মানা হয়নি। পর্যটন স্থলে গড়ে উঠেছে হেলিপ্যাড, যা হিমালয়ের মতো নরম মাটির পার্বত্য অঞ্চলের পক্ষে বিপজ্জনক। পাহাড়ি নদীকে যত্রতত্র বাঁধ দিয়ে বেঁধে স্বাভাবিক জলধারাকে নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। ভূমিধস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালে চামোলির হড়পা বানে বহু মানুষের মৃত্যু হয় এবং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। একই ভাবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে চিনের দিকে হিমালয়ের ক্ষেত্রেও। বিশেষত, সেখানকার চিরস্থায়ী বরফ এলাকায় (পার্মাফ্রস্ট) উষ্ণায়নের কারণে বরফের গলে যাওয়া কালক্রমে বিপদের মুখে ফেলবে তাদের হরেক পরিকাঠামো ও জনবসতিকে।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনার সময় নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে অনেক সময়েই পশ্চিমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চিন এবং ভারত একত্রে কাজ করে। কিন্তু হিমালয়ের জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে সেই সহযোগিতা শূন্য। বরং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে এশিয়ার এই দুই বৃহৎ শক্তি যেন নিজস্ব সীমানার মধ্যে হিমালয়ে সামরিক এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের উপরে ক্রমেই আরও বেশি জোর দিয়ে চলেছে। দুই দেশেরই টনক নড়া উচিত। সদ্য জি২০ নেতৃত্বে মহীয়ান গর্বিত ভারত সরকারের টনকটি তো আগেই নড়ার কথা। পরিবেশের স্বার্থে, জনস্বার্থে, প্রয়োজনাতিরিক্ত প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে বিরত রাখা কি ভারতের দায়বদ্ধতা নয়? অন্তত এই একটি বিষয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা কি এতই কঠিন? প্রকৃতির সতর্কবার্তায় কর্ণপাত না করলে হিমালয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘোর অমঙ্গল নেমে আসবে বেজিং ও দিল্লির মুখের দিকে চেয়ে থাকা এক বিপুল জনসমাজের উপরেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy