Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Firecrackers

এক ছাদের নীচে

সমস্যাটিকে চিহ্নিত করা গেলে সমাধানে পৌঁছনোর কাজটি অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। এ ক্ষেত্রেও সমাধানের পথ হল নজরদারির মাত্রা বৃদ্ধি— উৎপাদনের ক্ষেত্রে, বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৮
Share: Save:

বাজি বস্তুটির প্রধান সমস্যা কী, পশ্চিমবঙ্গে বছরের পৃথক সময়ে এই প্রশ্নের পৃথক উত্তর মেলারই সম্ভাবনা। দীপাবলির কাছাকাছি সময়ে বাজির প্রধান সমস্যা হিসাবে উঠে আসে দূষণের প্রসঙ্গ— শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ। অন্য সময়ে বাজির বিপদ বলতে মনে পড়ে বাজি কারখানার কথা। সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে একাধিক। প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করে বা নিরাপত্তাবিধি না মেনেই চলে বাজির কারখানাগুলি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। কিন্তু, দু’টি সমস্যাকে যদি বহিরঙ্গের ফারাকের ঊর্ধ্বে উঠে দেখা যায়, তা হলে স্পষ্ট হবে যে, বাজির ক্ষেত্রে মূল সমস্যাটি অভিন্ন— তা হল, নজরদারির অভাব। কী ভাবে বাজি বানানো হচ্ছে, তা যেমন প্রশাসনিক নজরের বাইরে থেকে যায়; কী বাজি বিক্রি হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা-ও প্রশাসনের অজানা। যতটুকু বেআইনি বাজি আটক করা হয়, তাকে হিমশৈলের চূড়া বললেও সম্ভবত অতিকথন হবে।

সমস্যাটিকে চিহ্নিত করা গেলে সমাধানে পৌঁছনোর কাজটি অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। এ ক্ষেত্রেও সমাধানের পথ হল নজরদারির মাত্রা বৃদ্ধি— উৎপাদনের ক্ষেত্রে, বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও। কিন্তু, সে পথে মূল বাধা হল, এই রাজ্যে বাজির উৎপাদন প্রায় সর্বাংশে বিকেন্দ্রিত, অসংগঠিত— বস্তুত, বাজি উৎপাদন এখন রাজ্যের একাধিক অঞ্চলে কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে। বাজি তৈরির ক্ষেত্রে নিয়মবিধি বিবিধ। বাজি যেখানে তৈরি হবে সেখানে তার নানা উপাদানের মিশ্রণ, প্যাকেজিং এবং রাখার জায়গা— সব ক’টি জায়গার মধ্যে অন্তত পনেরো মিটার করে দূরত্ব রাখতে হয়; সেখানে কোনও রকম বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি যাতে ব্যবহৃত না হয়, তা দেখতে হয়; বাজি উৎপাদনে প্রবীণ বা শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা চলে না; নির্মাণস্থলের পাশে পর্যাপ্ত জল ও উপযুক্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা রাখা ইত্যাদি। অসংগঠিত উৎপাদকরা স্বভাবতই এই নিয়মবিধি মানতে অনিচ্ছুক। যথেষ্ট প্রশিক্ষণ বা সচেতনতাও নেই। ক্ষেত্রটি অসংগঠিত হওয়ার ফলে প্রশাসনের পক্ষেও পরিকাঠামো নির্মাণ করা কঠিন, নজরদারিও কঠিন। বাজি বিক্রির ক্ষেত্রেও প্রতিটি প্যাকেটকে আলাদা করে পরীক্ষা করার ফরমান প্রশাসনের পক্ষে দুঃস্বপ্নবিশেষ।

সমাধানের পথ হল বাজি ক্লাস্টার এবং হাব তৈরি করা। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট পরিসরে সব বাজি উৎপাদককে নিয়ে আসা, সেখানে উৎপাদনের পরিকাঠামো তৈরি করা, এবং প্রত্যেককে সেই নিয়ম অনুসরণ করে চলতে বাধ্য করা। আর এই উৎপাদিত বাজি বিক্রি করা প্রয়োজন নির্দিষ্ট বাজি হাব-এ। এই ক্লাস্টার এবং হাব-এর বাইরে বাজি উৎপাদন ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যদি এ ভাবেই হাব এবং ক্লাস্টার তৈরি করা যায়, তাতে অবৈধ বাজি উৎপাদন তো বটেই, বিক্রিও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে সরকার। তামিলনাড়ুতে ইতিমধ্যেই এই ক্লাস্টারের মাধ্যমে বাজি উৎপাদন এবং বিক্রি হচ্ছে। দত্তপুকুর বা এগরার ঘটনার পর থেকে রাজ্য সরকার গত কয়েক বছর যাবৎ বাজির ক্লাস্টার তৈরির বিষয়ে উদ্যোগী হলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। শব্দ ও পরিবেশ দূষণ রোধ যেখানে প্রশাসনেরই দায়িত্ব, সেখানে এমন দীর্ঘসূত্রতা কেন?

অন্য বিষয়গুলি:

Firecrackers Blast Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy