—প্রতীকী চিত্র।
রাজনীতি, বিশেষত ভোট বড় বালাই। সে কথা মাথায় রেখে কখনও অগণিত শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে কোনও দেশ, ইতিহাস সাক্ষী। আবার উল্টো কাণ্ডটিও ঘটছে, শরণার্থীর স্রোত দেখেও মুখ ঘোরাচ্ছে বহু দেশ। সাম্প্রতিক সংযোজন ব্রিটেন, সেখানে পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই নতুন শরণার্থী বিল পাশ হয়েছে, রাজার সই পেলেই তা হয়ে উঠবে আইন। ব্রিটেনের প্রস্তাবিত ‘অবৈধ শরণার্থী বিল’-এর চলতি নাম ‘স্টপ দ্য বোটস’, যার আসল উদ্দেশ্য ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ব্রিটেনের তীরে ভিড়তে চাওয়া হাজার হাজার শরণার্থী নৌকা থামানো তথা ফিরিয়ে দেওয়া। এই বিল অনুযায়ী কোনও শরণার্থী ব্রিটেন আসার পথে যদি অন্য কোনও দেশে সামান্যতম সময়ের জন্য হলেও থামেন এবং সেখানে কোনও দমন-পীড়নের শিকার না হন, তা হলে তিনি ব্রিটেনে ‘আশ্রয়’ লাভের যোগ্য হবেন না; সামগ্রিক ভাবে তাঁদের পরিস্থিতি যতই শোচনীয় হোক না কেন, ব্রিটেনের মাটিতে শরণার্থী হিসাবে নিরাপত্তা, মানবাধিকারের দাবি— মিলবে না কিছুই। এতেই শেষ নয়, শরণার্থীদের হয় ফেরত পাঠানো হবে তাঁদের স্বভূমিতে কিংবা তৃতীয় অন্য কোনও দেশে, যেখানে আশ্রয় ও নিরাপত্তা জুটবে কি না সন্দেহ।
শুধু শরণার্থী কেন, যে কোনও সাধারণ মানুষের জন্য এটুকু শোনাই কি শিউরে ওঠার পক্ষে যথেষ্ট নয়? দেশের ভিতরে রাজনৈতিক চাপ, অর্থনীতির অবনতি, পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা যা-ই এবং যতটাই থাকুক না কেন, এমন অমানবিক আইনের পথে কি কোনও রাষ্ট্র হাঁটতে পারে? অথচ উন্নত বিশ্বে দেশে দেশে সাম্প্রতিক কালে এটাই দেখা যাচ্ছে, কোথাও দু’দেশের মধ্যে আক্ষরিক অর্থে উঠছে বিরাট পাঁচিল, কোথাও নির্মম ভাবে ফেরানো হচ্ছে শরণার্থীদের, কিংবা ডিটেনশন সেন্টারগুলিতে রাখা হচ্ছে দুঃসহ পরিস্থিতিতে। শিশুদের আলাদা করে দেওয়া হচ্ছে মা-বাবা বা অভিভাবকের থেকে, বাড়ছে পদে পদে মানবাধিকার ভঙ্গ, শোষণ, নিগ্রহ, ধর্ষণ, হত্যা, পাচার, দাসত্ব। অথচ ১৯৫১-র শরণার্থী কনভেনশন অনুসারে ব্রিটেন-সহ ইউরোপের দেশগুলি শরণার্থীদের রক্ষায় নীতিগত ভাবে দায়বদ্ধ, রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী এজেন্সি (ইউএনএইচসিআর) তা ব্রিটেনকে মনে করিয়ে দিয়েছে, কড়া সমালোচনা করে বলেছে যে, এই পদক্ষেপ ইউরোপের অন্য দেশগুলির সামনে শরণার্থীদের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলার ক্ষেত্রে একটা বাজে উদাহরণ হয়ে উঠবে, বিশ্ব জুড়ে শরণার্থীদের আশ্রয় দান ও মানবাধিকার রক্ষার আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়াটি জোর ধাক্কা খাবে।
তাতে ব্রিটেনের ভাবান্তর নেই কোনও। তাদের কনজ়ারভেটিভ সরকার বরাবরই কড়া শরণার্থী নীতির পক্ষে, পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ‘রোয়ান্ডা প্ল্যান’ যতটা শরণার্থী-বিরোধী, ঋষি সুনকের ‘স্টপ দ্য বোটস’ বিলও ততটাই। আসলে রাষ্ট্রপুঞ্জে বা আন্তর্জাতিক স্তরে দেওয়া প্রতিশ্রুতি এক কথা, আর নিজেদের দেশে ঘর গোছানো আর এক। কোভিড অতিমারি ও ব্রেক্সিট-উত্তর দেশের অর্থনীতির হাল ফেরানো ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে মস্ত চ্যালেঞ্জ, তার মোকাবিলায় সরকারের কড়া পদক্ষেপের বলি হচ্ছেন শরণার্থীরা। এমনকি এই শরণার্থী নীতির জোরেই আগামী নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা ধরে রাখাও লক্ষ্য। ক্ষমতার রাজনীতি সচেতন ভাবেই বধির— জলে ভাসা হাজার হাজার মানুষের জীবনরক্ষার আর্জি তার কানে পৌঁছয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy