Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Jute

পাটের মূল্য

বাজারদর থেকে চাষি উৎপাদনের খরচও তুলতে পারছেন না, নানা জেলায় বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এই সঙ্কটের মুখে পাটের ন্যূনতম মূল্য, এবং পাটের আমদানি নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা করল কমিশন।

An image of Jute

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:০৮
Share: Save:

অগ্রগতি নয়, এক সঙ্কট থেকে আর এক সঙ্কটের মধ্যে দোলাচলই যেন বাংলার পাট শিল্পের নিয়তি। পর পর দু’বছর পাটের দাম অত্যন্ত চড়া হওয়ায় কাজ বন্ধ করছিল চটকলগুলো। অবস্থা সামাল দিতে কাঁচা পাটের দামের ঊর্ধ্বসীমা বাঁধা হয়েছিল। বেআইনি মজুতদারদের ধরতে তৎপর হয়েছিল প্রশাসন। এ বছর পরিস্থিতি তার বিপরীত— বর্ষা ভাল হওয়ায় পাটের উৎপাদন হয়েছে বেশি, ফলে পাটের দাম পড়েছে। বাজারদর থেকে চাষি উৎপাদনের খরচও তুলতে পারছেন না, নানা জেলায় বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এই সঙ্কটের মুখে পাটের ন্যূনতম মূল্য, এবং পাটের আমদানি নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা করল কমিশন। কম দামে পাট খরিদ করলে যেন ক্রেতার কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হয়, রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে কমিশন। বাংলাদেশ, নেপাল থেকে দৈনিক কত পাট আমদানি হচ্ছে, তা কী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার হিসাবও দাখিল করতে হবে কমিশনের কাছে। যদিও এই সব ব্যবস্থা দিয়ে পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে, সে সংশয় থেকে যায়। জুলাই মাস থেকেই পাট উঠতে শুরু করেছে এ বছর, অগস্ট থেকে দাম দ্রুত পড়তে শুরু করেছে। অধিকাংশ পাট বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরে, অক্টোবরে ন্যূনতম খরিদ মূল্য ঘোষণা করলে চাষির কতটুকু লাভ হবে? কাঁচা পাটের মাত্র পাঁচ শতাংশ কেনে পাট নিগম, অধিকাংশ পাটই কেনে চটকলগুলি। তা হলে কী করেই বা ন্যূনতম দামে খরিদ নিশ্চিত করা যাবে?

পাশাপাশি, বাংলাদেশ ও নেপালে উৎপাদিত পাট ও চটের বস্তা ভারতের পণ্যের চাইতে উচ্চ মানের, দামও কম। পশ্চিমবঙ্গে উৎপন্ন পাট দিয়ে, হুগলি বা উত্তর ২৪ পরগনার চটকলে তৈরি বস্তার দাম পড়শি দেশ থেকে আমদানি করা বস্তার চাইতে বেশি। কেবল নিয়ন্ত্রণ, নিষেধাজ্ঞা আর পুলিশি তৎপরতা দিয়ে এর সমাধান মিলবে না। বাজারে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা দরকার। এর উপর রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দা— আমেরিকা এবং ইউরোপের বাজারে ভারতের পাটসামগ্রীর চাহিদা কমেছে। পরিস্থিতি এমনই, চটকলগুলি তাদের পূর্ণ ক্ষমতার পঁচিশ থেকে ত্রিশ শতাংশ কম উৎপাদন করছে।

সঙ্কট নিরসনে ভারতীয় চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রককে একটি চিঠিতে কিছু পরিচিত দাবি জানিয়েছে। যেমন, খাদ্যশস্যের জন্য ১০০ শতাংশ চটের বস্তা ব্যবহার নিশ্চিত করা, চিনির জন্য চটের বস্তার ব্যবহার বাড়ানো, এবং পাট আমদানির ন্যূনতম দাম বেঁধে দেওয়া। এই ব্যবস্থাগুলি যদি বা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গ্রহণ করা হয়, তার কার্যকারিতা হবে সাময়িক। শেষ বিচারে পাট চাষ এবং চটশিল্পকে লাভজনক করতে হবে। তার জন্য উৎপাদন, ক্রয় ও বিপণনের ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। কেন সরকারি তরফে চাষিদের উন্নত প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া সত্ত্বেও পাটের মান ভাল হচ্ছে না, তার মূল্যায়ন দরকার। পাট কমিশনারের নানা বিজ্ঞপ্তি সত্ত্বেও, চটকলগুলির নিযুক্ত দালালরাই বরাবর পাটের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। নানা দুর্নীতির ফলে হয় পাটের দাম পড়ে, নয়তো চটকলগুলি যথেষ্ট পাট পায় না। পাট কমিশনার, পাট নিগম ও রাজ্য সরকারের মিলিত উদ্যোগে যথেষ্ট পাট মজুত রাখলে এই কুচক্র থেকে মুক্তি মেলে। এমন নানা সুপ্রস্তাব এসেছে, অভাব রূপায়ণে সদিচ্ছার।

অন্য বিষয়গুলি:

Jute Jute Products Jute Industry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy