Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Budget 2021

হাতে রহিল ভবিষ্যৎ

যেমন, রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান পরিষেবার মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির কথা বলিয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১৩
Share: Save:

যাহা অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসের ব্যয়নির্বাহের অনুমতি গ্রহণের পরিসরমাত্র, মুখ্যমন্ত্রী সেই ভোট-অন-অ্যাকাউন্টকেই বিবিধ প্রকল্প ঘোষণার মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করিলেন কেন, প্রশ্ন উঠিতেছে। প্রশ্নটি যতখানি স্বাভাবিক, তাহার উত্তরও ততখানিই— ভারতীয় রাজনীতি অধুনা যাহা হইয়াছে, তাহাতে যে দল যেখানে ক্ষমতাসীন, সেই দলই সেখানে সর্ব প্রকার মঞ্চকে নির্বাচনী রাজনীতির কাজে ব্যবহার করিয়া থাকে। গড্ডলিকা প্রবাহ হইতে দূরত্ব রাখিবার কঠিন কাজটি মুখ্যমন্ত্রী করিতে পারেন নাই। প্রশ্ন করা প্রয়োজন এই বাজেটের দিশা লইয়া। তাহার একটি দিক রাজস্ব খাতে ব্যয়বৃদ্ধি; অন্য দিকটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকাঠামো ব্যয়, মূলধনী খাতে। বহু সড়ক, উড়ালপুল ইত্যাদি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বাজেটে আছে। এক অর্থে, এই বাজেটটি কেন্দ্রীয় বাজেটেরই অনুসারী। এই মুহূর্তে পরিকাঠামো খাতে ব্যয়বৃদ্ধির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাহাতে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান যেমন হয়, তেমনই বাজারে অন্তর্বর্তী পণ্যের চাহিদাও বাড়ায়। অন্য দিকে, এই পরিকাঠামো রাজ্যের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাগুলিকেও উজ্জ্বলতর করিবার ক্ষমতা ধরে। যেমন, রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান পরিষেবার মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির কথা বলিয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাহার জন্য বাজেটবরাদ্দ এখন নামমাত্র— কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে এই যোগাযোগ বৃদ্ধির গুরুত্ব অসীম।

প্রশ্ন উঠিতেছে, এত প্রকল্পের জন্য অর্থ সংস্থান হইবে কী উপায়ে? মূলধনী লগ্নিমাত্রেই সময়ের মেয়াদে এক বৎসরের অধিক। পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলির কথা বলিয়াছেন, তাহা একাধিক অর্থবর্ষ ধরিয়া চলিবে। অর্থাৎ, আগামী বৎসরগুলিতে সরকার যথেষ্ট অর্থের সংস্থান করিতে পারিবে কি না, তাহা প্রশ্ন। কোভিড-উত্তর অর্থব্যবস্থায় রাজস্বের পরিমাণ বাড়িবে; রাজ্যের নিজস্ব আয় যেমন বাড়িবে, তেমনই জিএসটি বাবদ প্রাপ্যের পরিমাণও বাড়িবে বলিয়াই আশা। তবে, এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন। দেশের প্রতিটি রাজ্যেরই নিজস্ব আর্থিক সামর্থ্য সীমিত। পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় শিল্পে অনুন্নত রাজ্যের ক্ষেত্রে কথাটি আরও বেশি সত্য। ফলে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের সহিত রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্য না লইবার নীতিতে পরিণত না করিলেই রাজ্যের মঙ্গল। বিশেষত, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়া তিনি যখন রাজ্যকে নূতন ভাবে ঢালিয়া সাজাইতে চাহিতেছেন, তখন তাঁহার অর্থের প্রয়োজন। সে টাকা যে সূত্র হইতেই আসুক, তাহাকে রাজ্যের উন্নতিকল্পে ব্যবহার করিলে রাজনৈতিক ভাবেও তাহা লাভজনক হইবে।

বাজেটের অব্যবহিত পূর্বে রাজ্য প্রশাসন ২৪ ঘণ্টায় তিনশত প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়াছে। তাহার অধিকাংশই আয়তনে ক্ষুদ্র। নেহাত প্রশাসনের মজ্জাগত দীর্ঘসূত্রতা বই আর কোনও কারণই থাকিতে পারে না সেগুলিকে আটকাইয়া রাখিবার। বিরোধীরা বলিতে পারেন, নির্বাচন আসন্ন বলিয়াই প্রশাসন হঠাৎ গতিশীল হইয়া উঠিয়াছে। কথাটি মিথ্যা নহে। কিন্তু, নির্বাচনী গণতন্ত্রে ভোটবাবদ যে পাওনা হয়, তাহা ফেলনা নহে। এক্ষণে বরং একটি ভিন্নতর প্রশ্ন উত্থাপন করা প্রয়োজন। গোটা বৎসর ধরিয়াই প্রশাসন এমন গতিশীল থাকে না কেন? সামান্য কাজগুলিও কেন অনর্থক আটকাইয়া থাকে? প্রশাসনকে গতিশীল করা সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। এই প্রসঙ্গে ‘দুয়ারে সরকার’ ও ‘পাড়ায় সমাধান’ প্রকল্প দুইটির উল্লেখ করা প্রয়োজন। এই প্রকল্প দুইটিও নির্বাচনী প্রয়োজনেই তৈরি হইয়াছে। কিন্তু, প্রশাসনের চেহারা কেমন হওয়া বিধেয়, তাহার একটি বিকল্প ও জরুরি পথনির্দেশ প্রকল্প দুইটিতে আছে। নির্বাচন চুকিলেও এই পথটি বিস্মৃত হইবে না, রাজ্যবাসী এই দাবি করিতেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Government West Bengal Budget 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE